তালিকায় ‘ভূতুড়ে’ ভোটারের নাম তোলা ও বৈধ নাম তালিকা থেকে কাটা– ভুয়া নথিপত্র দিয়ে দেশব্যাপী চলা দুই চক্রের কারসাজি প্রকাশ্যে।
দেশের বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ভোটার তালিকা নিয়ে যে নতুন অভিযোগটি এনেছেন, তা গুরুতর। ভুয়া অাবেদনপত্র জমা দিয়ে তালিকা থেকে বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দিয়ে দেওয়ার একটি চক্র কাজ করছে বলে তঁার অভিযোগ। অভিযোগের পক্ষে তথ্যপ্রমাণও হাজির করেছেন তিনি। রাহুলের অভিযোগে যে সারবত্তা রয়েছে তা মেনে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তার পরই নির্বাচন কমিশন একটি বিবৃতি দিয়ে স্বীকার করেছে যে, ২০২৩-এ কর্নাটকে বিধানসভা ভোটের অাগে সেখানকার অালন্দ বিধানসভা কেন্দ্রে ভুয়া অাবেদনপত্র জমা দিয়ে ভোটারদের নাম কাটার চেষ্টা হয়েছিল। কমিশন জানিয়েছে, নাম বাদ দেওয়ার জন্য কমিশনের কাছে অনলাইনে মোট ৬০১৮টি অাবেদন জমা পড়ে। তদন্ত দেখা গিয়েছে ২৪টি ছাড়া সব অাবেদনই ছিল ভুয়া। সেই কারণে কমিশন অাবেদনগুলি খারিজও করে দেয়।
এই ঘটনার অাগে রাহুল দেখিয়েছিলেন দক্ষিণের এই রাজ্যে মহাদেবপুরা নামে একটি বিধানসভা কেন্দ্রে কীভাবে ভুয়া অাবেদনপত্র জমা দিয়ে হাজার হাজার ‘ভূতুড়ে’ ভোটারের নাম তালিকায় তোলা হয়েছিল। রাহুল প্রমাণ-সহ তথ্য হাজির করার পর বোঝা গেল, ভুয়া নথিপত্র দিয়ে ভোটার তালিকায় ভূতুড়ে ভোটারের নাম তোলার একটি চক্র যেমন সক্রিয় থাকে, তেমনই ভুয়া অাবেদনপত্র জমা দিয়ে বৈধ নাম-তালিকা থেকে কাটার একটা চক্র বিদ্যমান।
তবে ভোট চুরির বিরুদ্ধে দেশে সবার আগে সরব হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নানা ফন্দিফিকির করে ভোট চুরি করার ক্ষেত্রে পথিকৃৎ ছিল সিপিএম। তখন মমতা রাজে্যর বিরোধী নেত্রী। সিপিএম কীভাবে ভোটার তালিকা তৈরির সময় থেকে তাদের ‘সায়েন্টিফিক রিগিং’ প্রক্রিয়া চালু করত তা দেশের সামনে তুলে ধরেন তিনিই। সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের দাবিতে তঁার ধর্মতলায় দিনের পর দিন ধরনা ইতিহাস হয়ে রয়েছে। এবারও বিহার ভোটের অাগে হঠাৎ ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন তথা ‘এসঅাইঅার’ করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন তৎপরতা শুরু করতেই প্রথম সোচ্চার হন মমতা। তিনিই সবার অাগে কমিশনের অভিসন্ধি ধরে ফেলেন। তৃণমূল সাংসদরা এসঅাইঅারের বিরুদ্ধে সংসদ অচল করে দেন। তখন থেকেই রাহুল ইসু্যটিকে লুফে নেন।
প্রতিশ্রুতি মতো ‘হাইড্রোজেন বোমা’ এখনও ফাটাতে না পারলেও ভোট চুরি ইসু্যতে রাহুল যে রাজনৈতিক মাইলেজ পেতে শুরু করেছেন তা দেখাই যাচ্ছে। রাহুলের দাবিকে নস্যাৎ করতে বিজেপি যেভাবে তেড়েফুঁড়ে মাঠে নামছে এবং নির্বাচন কমিশনের মতো সংস্থাকেও নির্লজ্জভাবে রাস্তায় এনে দঁাড় করাচ্ছে, তাতে বোঝাই যাচ্ছে যে, ভোটার তালিকায় কারচুপির রহস্য যত ফঁাস হচ্ছে তত তাদের অস্বস্তি বাড়ছে। সায়েন্টিফিক রিগিংয়ের কৌশলগুলি যত প্রকাশে্য এসেছিল তত বামেদের বিলুপ্তি সুনিশ্চিত হয়েছিল। বিজেপির ক্ষেত্রেও যে সেটা হবে না, তা কেউ বলতে পারে না।