ভুট্টাচাষের মরশুমে তিস্তার চরে বাড়ছে হাতির হানা, ফেন্সিং বসাতে উদ্যোগী বনদপ্তর

ভুট্টাচাষের মরশুমে তিস্তার চরে বাড়ছে হাতির হানা, ফেন্সিং বসাতে উদ্যোগী বনদপ্তর

বৈশিষ্ট্যযুক্ত/FEATURED
Spread the love


বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: নদীচর ও জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় ভুট্টার চাষ বাড়তেই উত্তরের লোকালয়ে বেড়েছে বুনো হাতির আনাগোনা। তাতেই বেড়েছে বিপদ। বাড়ছে মানুষ-হাতি সংঘর্ষ, মৃত্যু। তিস্তা নদীচর ক্রমশ হাতির হামলার ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছে বলেই মনে করছেন বনকর্তাদের একাংশ। এপ্রিল থেকে ২২ মে পর্যন্ত হাতির হামলায় এগারোজন প্রাণ হারিয়েছে উত্তরে। ঘটনায় উদ্বিগ্ন বন দপ্তর জেলা প্রশাসনের কাছে নদীচর ও জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় ভুট্টার চাষ বন্ধ করতে আর্জি জানিয়েছে। এছাড়াও বনাঞ্চল সংলগ্ন এলাকা জুড়ে ব্যাটারিচালিত ফেন্সিং বসাতে উদ্যোগী হয়েছে বনদপ্তর। এদিকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় জঙ্গল সংলগ্ন গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোকে সতর্ক করেছে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ।

উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল এসকে মোলে বলেন, “তিস্তা-সহ বিভিন্ন নদীচর ও জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় ভুট্টা চাষ বেড়ে চলেছে। ওই ফসলের লোভে দল বেধে হাতি নদীচর, চা বাগান ও লোকালয়ে ভিড় জমাচ্ছে। তাতেই বিপদ বেড়েছে। সংঘর্ষে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। জেলাশাসকদের অনুরোধ করা হয়েছে পরিস্থিতি সামাল দিতে নদীচর ও জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় যেন ভুট্টাচাষ বন্ধের নির্দেশ জারি করা হয়।” বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু এপ্রিলেই হাতির হানায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে উত্তরে। এছাড়াও হাতির হামলা বেড়েছে মালবাজার, মেটেলি, বানারহাট ও নাগরাকাটা, আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটা ও মাদারিহাট এবং শিলিগুড়ি মহকুমার নকশালবাড়ি, মাটিগাড়া, খড়িবাড়ি, ফাসিদেওয়া ব্লকের বাগডোগরা, বুড়াগঞ্জ, হাতিঘিসা, মণিরাম, কেটুগাবুরজোত, মতিধর, গিরিশচন্দ্র, মানঝা চা বাগান এলাকায়। নাগালের মধ্যে যেখানে ভুট্টা চাষ হচ্ছে, সেখানেই হাতি ঢুকছে। যাতায়াতের পথে বাধা পেয়ে মারমুখী হচ্ছে।

বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারত-নেপাল সীমান্তের মেচি নদী থেকে অসম সংলগ্ন সংকোশ নদী পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের ‘এলিফেন্ট রেঞ্জ’। ওই রেঞ্জের উত্তরে ভুটান, পশ্চিমে নেপাল এবং দক্ষিণে বাংলাদেশ। এখানে রয়েছে বক্সাব্যাঘ্র প্রকল্প, জলদাপাড়া, গরুমারা, চাপরামারি, নেওরাভ্যালি ও মহানন্দা জঙ্গলের ১,২৮৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। এটাই উত্তরের বুনো হাতিদের বিচরণ ক্ষেত্র। এখন এখানে সাত শতাধিক হাতির বসবাস।  কিন্তু নিজেদের বসতি এলাকায় ওরা যে স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে পারছে তেমন নয়। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল জানান, হাতির করিডরে সামরিক বাহিনীর ফায়ারিং রেঞ্জ, সড়ক, বসতি এলাকা গড়ে উঠেছে। ফলে জঙ্গল এলাকা টুকরো পকেটে পরিণত হয়েছে। তাই চলাচলের পথে বাধা পেয়ে হাতি মারমুখী হচ্ছে। তিস্তা, জলঢাকা, তোর্সা নদীচর এলাকার ঘাস জঙ্গলে হাতিদের যাতায়াত নতুন নয়। কিন্তু ওই এলাকাগুলো দখল করে কয়েক বছরে ভুট্টা, তরমুজ, বাদাম চাষে পালটে দিতে বিপদ বেড়েছে। নতুন সুস্বাদু খাবারের স্বাদ পেয়ে হাতির ঘুরেফিরে সেখানেই ভিড় করছে।

এস কে মোলে আরও বলেন, “পরিস্থিতি সামাল দিতে জঙ্গল সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ব্যাটারিচালিত ফেন্সিং বসানো হবে। জঙ্গলে হাতির খাদ্য ভাণ্ডারও বাড়নো হচ্ছে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে ‘কুইক রেসপন্স টিম’।” এদিকে বৃষ্টি বাড়তে শিলিগুড়ির গ্রামীণ এলাকার জঙ্গল সংলগ্ন গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি অরুণ ঘোষ জানান, বনদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে। জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় টর্চ লাইট, পটকা বিলি করা হয়েছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *