ভিন্ন পথেও সংশয়

ভিন্ন পথেও সংশয়

ব্লগ/BLOG
Spread the love


নেপালে সদ্য অভ্যুত্থানের পর অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, আরেকটা বাংলাদেশ তৈরি হতে চলেছে। কিন্তু সকলকে ভুল প্রমাণিত করে দিলেন নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনী ২০২৬-এর ৫ মার্চ পার্লামেন্ট নির্বাচন ঘোষণা করে দিয়েছেন।‌ এখানেই বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের তফাত বুঝিয়ে দিলেন তিনি।

২০২৪-এর অগাস্টে পালাবদল হলেও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এখনও সাধারণ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করে উঠতে পারেনি।‌ নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ছ’মাসের বেশি এই পদে থাকবেন না। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য তিনি আসেননি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। মোদি নেপালের জেন জেড-এর প্রশংসাও করেছেন।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অবশ্য মোদি সরকারের অবস্থান ভিন্ন ছিল। সেদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া থেকে শুরু করে প্রথম কয়েক মাস অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কার্যত কোনও যোগাযোগ না রাখায় একের পর এক বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয়েছে। নেপালের ক্ষেত্রে ভারত প্রথম থেকে সতর্ক। ছাত্র-যুব আন্দোলনের শুরুতে কোনও পক্ষের হয়ে দিল্লি কিছু বলেনি। আবার সেনাবাহিনী যখন দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব তুলে নিল, তখন ভারত সরকারের তরফে তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নেপালে হঠাৎ কেন এই গণবিক্ষোভ? হঠাৎ বললে অবশ্য অসত্য বলা হবে।‌ আসলে সরকারের দুর্নীতি ছাড়াও দেশের বেকারত্ব, দারিদ্র্য নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ দীর্ঘকাল ধরে ছিল। ২৬টি সমাজমাধ্যমে সরকারি নিষেধাজ্ঞা ঘোষণায় সেই অসন্তোষে ঘৃতাহুতি পড়ে। প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌড়েল পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ায় তীব্র সমালোচনা করেছে সিপিএন (ইউএমএল), এনসিপি (এম-সি), নেপালি কংগ্রেস সহ আটটি রাজনৈতিক দল। এই আট দল সুশীলার চিন্তাভাবনার সঙ্গেও একমত নয়।

জেন জেড-এর আন্দোলনে সেনার গুলিতে নিহতদের সুশীলা শহিদ ঘোষণা করেছেন। আট দল বেঁকে বসায় তাঁকে বেগ পেতে হচ্ছে বৈকি।‌ শেষমেশ আন্দোলনকারী নেতৃত্ব কী চাইছে, তার ওপরে নির্ভর করছে নেপালের ভবিষ্যৎ। ২০২৪-এর জুলাই-অগাস্টে বাংলাদেশের গণ অভ্যুত্থানের পিছনেও ছিল ছাত্র-যুবরা।‌ তাঁদের কোটা বিরোধী আন্দোলনের জেরে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা।

আর নেপালে জেন জেড-এর বিক্ষোভের কাছে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। বাংলাদেশে গত অগাস্ট থেকে শুরু রাজনৈতিক অস্থিরতা আজও চলছে।‌ আওয়ামী লিগ নিষিদ্ধ। বিএনপি ভোটের দাবিতে সরব। ভোট ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি হবে বলে ঘোষণা আছে।‌ বাংলাদেশের আগে ২০২২ সালে গণ আন্দোলনের জেরে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ বলে অভিযুক্ত প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষে।

নেপালেও বেকারসমস্যা, গরিবি, সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল অসন্তোষের প্রধান কারণ। যদিও আন্দোলনের শুরু ২৬টি সমাজমাধ্যমে সরকারি নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে। কাঠমান্ডুতে সেই তাণ্ডবের সময় নেপালের সেনাবাহিনী কার্যত হাত গুটিয়ে বসে ছিল। তবে নেপালে শাসক শিবিরের নেতা-মন্ত্রীদের ওপর যতটা হামলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কা বা বাংলাদেশে কিন্তু ততটা হয়নি। তবে লুটপাটের ছবি তিন দেশে প্রায় একইরকম।

নেপালের ঘটনার পিছনে কার হাত, তা নিয়ে চর্চা চলছে বিস্তর। ভারত, আমেরিকা, চিন- তিন দেশেরই নাম উঠেছে। পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী ওলি সরাসরি ভারতকে দায়ী করছেন। মোদি সরকার অবশ্য খুব সাবধানে পা ফেলছে। কোনও পক্ষের দিকে না ঝুঁকে শুধু নেপালি জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মোট কথা, আরেকটা বাংলাদেশের জন্ম হল কি না, তা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল- চার প্রতিবেশীর ঠেলায় অগ্নিবলয়ের মাঝে ভারত!



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *