সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আজ ভাষা দিবস। কিন্তু বাঙালি জাতিসত্তা ভুলে দিকে দিকে বসছে কাওয়ালি গানের আসর! এটাই মহম্মদ ইউনুসের ‘নতুন’ বাংলাদেশ? বাংলা ভাষার জন্য যে দেশে রক্ত ঝরিয়েছে বাঙালি, ধ্বনি উঠেছিল ‘মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের সমান’, সেই দেশেই এখন ‘পাক প্রেমে’র হাওয়া বইছে। আর এর নেপথ্যে ইউনুস ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। যাদের মদত দিচ্ছে জামাতের মতো মৌলবাদী দল বলেই অভিযোগ। শেখ হাসিনাহীন বাংলাদেশে এবছর বদলে গিয়েছে ভাষা দিবসের রীতিও।
গত বছরের ৫ আগস্ট যখন ‘হাসিনা হঠাও অভিযানে’ নেমেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা তখনই খানিক আঁচ করা গিয়েছিল আগামীর বাংলাদেশ কী রূপ নিতে চলেছে। এই মুহূর্তে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্বিচারে অত্যাচার, লাগাতার মন্দিরে ভাঙচুর, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বললেই শাস্তি তারই প্রমাণ। বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন থেকে, জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’র বদলের দাবি উঠছে প্রতিনিয়ত। এখন পাঠ্যবইতে জায়গা পাচ্ছে উর্দু, আরবি ভাষাও। যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, সব কিছুরই প্রাণকেন্দ্র সেখানে সন্ধ্যা নামলে এখন উর্দু কাওয়ালির আসর বসে। জুলাই ও আগস্ট মাসের ‘গণঅভ্যুত্থানে’ শহিদদের স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাঁকজমকপূর্ণ কাওয়ালি গানের আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই আসরে সিলসিলা এবং ক্বাসীদা ব্যান্ড কাওয়ালি পরিবেশন করেছিল। আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের প্রাক্কালেও এর অন্যথা হয়নি বলেই খবর। শোনা গিয়েছে সেই কাওয়ালি গানই।
প্রতিবছর ভাষা দিবসে শহিদদের প্রতি একসঙ্গে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি। গতবছরও এদিনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি একসঙ্গে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছিলেন। এবছর হিসেব মতো প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস ও রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর একসঙ্গে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার কথা ছিল। কিন্তু দেখা গেল রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সেখানে গেলেনই না ইউনুস। রাষ্ট্রপতি ফিরে যাওয়ার ঠিক ৭ মিনিটের মাথায় পৌঁছন তিনি। এখানেই শেষ নয়, কোনও উপদেষ্টা এদিন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়ও করেননি বলেই খবর।
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। এরপর বহু জল বয়ে গিয়েছে পদ্মা দিয়ে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পর পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন দেশ হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে আজকের বাংলাদেশ। এই স্বাধীনতার পরই রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায় বাংলা। সেই বাংলাদেশেই আজ বিপন্ন বাংলা ভাষা। গত বছরের জুলাই মাসে ফের এক ছাত্র আন্দোলনে রক্তাক্ত হয়েছে ওপার বাংলা। শেখ হাসিনার পতন, ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ। এরপর থেকেই বাংলাদেশে জারি রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার প্রক্রিয়া। মৌলবাদীদের অঙ্গুলিহেলনে ‘বিপ্লবী’ ছাত্রদের হাত থেকে রেহাই পায়নি নারায়ণগঞ্জের বায়তুল আমান ভবন। ইতিহাস বলে, বাহান্নর ভাষা আন্দলনের সূচনা হয়েছিল এই বাড়ি থেকেই। ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল বায়তুল আমান। কিন্তু ইউনুসের ‘নতুন বাংলাদেশে’ সেই ঐতিহাসিক বাড়িই এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।