ভারতের ‘জলযুদ্ধে’ বিপন্ন ২৪ কোটি পাকিস্তানি! রাষ্ট্রসংঘে নালিশ ইসলামাবাদের

ভারতের ‘জলযুদ্ধে’ বিপন্ন ২৪ কোটি পাকিস্তানি! রাষ্ট্রসংঘে নালিশ ইসলামাবাদের

ইন্ডিয়া খবর/INDIA
Spread the love


সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। এর ফলে ২৪ কোটি পাকিস্তানি সংকটে পড়বেন। রাষ্ট্রসংঘে নালিশ জানাল পাকিস্তান। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক মঞ্চকে গোটা বিষয়টির দিকে নজর রাখতে এবং প্রয়োজনে পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছে ইসলামাবাদ।

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রসংঘের বৈঠকে রীতিমতো অসহায় দেখায় পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের। তাদের কাতর অনুরোধ, বড়সড় মানব বিপর্যয়ের আগেই যেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পাক প্রতিনিধি উসমান জাদুন বলেন, “ভারতের চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত মানবাধিকার আইন এবং যাবতীয় আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী। আমরা ভারতের এই বেআইনি ঘোষণার তীব্র বিরোধিতা করছি। ভারত যেন কঠোর ভাবে চুক্তির শর্ত মেনে চলে। কোনও ভাবেই যেন ওই সমস্ত নদীর জল বন্ধ বা গতিপথ পরিবর্তন না-করা হয়। ২৪ কোটি পাকিস্তানির জীবনরেখা এই নদী। এমন পদক্ষেপ আমরা কখনই মেনে নেব না।” ইসলামাবাদের আরও অভিযোগ, ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব জলকে অস্ত্রের মতো করে ব্যবহার করছে। উসকানি মূলক বেশ কিছু বক্তব্য উল্লেখ করেন পাক প্রতিনিধি। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন জল আর রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না। 

উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালের চুক্তি অনুযায়ী সিন্ধু নদ এবং তার পাঁচটি উপনদীর জল ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বণ্টিত হয়। গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার পর এই চুক্তিই বাতিল করে ভারত। ইসলামাবাদের অভিযোগ, চুক্তি স্থগিত হয়ে যাওয়ার ফলে পাকিস্তানমুখী নদীগুলির জল ছাড়া, বাঁধ দেওয়া প্রভৃতিতে শর্ত লঙ্ঘিত হচ্ছে।

পালটা রাষ্ট্রসংঘে নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি পার্বথানেনী হরিশ বলেন, “পাকিস্তানের উপর আস্থা রেখে, বিশ্বাস করে ৬৫ বছর আগে ভারত এই চুক্তি করেছিল। যার প্রস্তাবনায় বলা করা হয়েছিল, চুক্তিটি সদিচ্ছা ও বন্ধুত্বের উপর ভিত্তি করে সম্পাদিত হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানে সেই বিশ্বাস, বন্ধুত্বের মর্যাদা রাখেনি। প্রায় সাড়ে ছয় দশক ধরে পাকিস্তান এই চুক্তির অবমাননা করেছে। ভারতের বুকে ৩টি যুদ্ধ ও হাজার হাজার জঙ্গি হামলা চালিয়েছে পাক সন্ত্রাসীরা। গত চার দশক ধরে ২০ হাজারের উপর নিরীহ ভারতীয় এই সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছেন। ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁও হামলা পাকিস্তানের নৃশংসতার প্রমাণ।”

পহেলগাঁও হামলা, অপরেশন সিঁদুর নিয়ে পাকিস্তান যে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে সেনিয়ে এদিন হরিশ বলেন, “পাকিস্তানের প্রতিনিধি অপপ্রচার করছেন। ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের মদত দেয় তারা। যার জবাব দেওয়া হয়েছে অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে। কিন্তু সেই সময়ও ভারত যথেষ্ট সংযমের পরিচয় দিয়েছে। কোনও পাক নাগরিককে টার্গেট করা হয়নি। কিন্তু পাকিস্তান তা করেনি। ওরা আমাদের সীমান্তবর্তী গ্রামে হামলা চালিয়েছে। এই সন্ত্রাসবাদ দমন না করলে গোটা বিশ্ব এর ফল ভুগবে।”

প্রসঙ্গত, সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল না করার আর্জি নিয়ে সম্প্রতি ভারত সরকারকে চিঠি লিখেছে ইসলামাবাদ। তাদের দাবি, এই চুক্তি বাতিলের ফলে অভূতপূর্ব সংকটের পরিস্থিতি পাকিস্তানে। কোথাও জলকষ্ট, কোথাও বন্যা পরিস্থিতি। দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় দেশবাসীর শুকিয়ে মরার অবস্থা। এই সংকট থেকে বাঁচতে ভারতের কাছে কাকুতি-মিনতি করছে পাকিস্তান। তবে পড়শি দেশের হাজার অনুরোধেও চিড়ে ভিজবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। কয়েকদিন আগেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “সিন্ধু জলচুক্তি আপাতত স্থগিত। যতদিন না সীমান্ত-সন্ত্রাস বন্ধ করবে পাকিস্তান, ততদিন এই চুক্তি বাতিল থাকবে।” গত ৬ মে মধ্যরাতে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গিঘাঁটিতে আঘাত হেনেছিল অপরেশন সিঁদুর। নিকেশ হয় শতাধিক জঙ্গি। পরে পাকিস্তানের অনুরোধে সংঘর্ষবিরতিতেও সায় দেয় দিল্লি। কিন্তু সংঘর্ষবিরতিতে সায় দিলেও সিন্ধু জলচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *