ভারতকে শুল্ক হুমকি, পাক-প্রীতি! ট্রাম্পের খামখেয়াল নাকি ঠান্ডা মাথার ছক? নিজের পায়েই কুড়ুল নয়তো?

ভারতকে শুল্ক হুমকি, পাক-প্রীতি! ট্রাম্পের খামখেয়াল নাকি ঠান্ডা মাথার ছক? নিজের পায়েই কুড়ুল নয়তো?

জ্যোতিষ খবর/ASTRO
Spread the love


সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েই পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেলেছে আমেরিকা। উল্লেখ্য, বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করতে আমেরিকার তরফে চূড়ান্ত সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল ১ আগস্ট। নানা জটিলতায় আটকে এখনও পর্যন্ত আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হয়নি ভারতের। উলটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাফ জানিয়েছেন, ভারত রাশিয়া থেকে প্রচুর তেল এবং অস্ত্র কেনে। সেকারণেই ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানো হল। তাঁর মন্তব্য, ”ওরা (পাকিস্তান) এবার ভারতকেই তেল বেচবে।” এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে ট্রাম্পের এহেন পদক্ষেপে কোন সমীকরণ তৈরি হল? এতে আখেরে নিজের পায়েই কুড়ুল মারছেন ট্রাম্প, এমনই মত ওয়াকিবহাল মহলের। জেনে নেওয়া যাক বিশদে।

পাক-আমেরিকা তেল চুক্তি ঠিক কী?
পাকিস্তানের ‘বিপুল’ তেল ভাণ্ডারের উন্নতিসাধনে কাজ করবে আমেরিকার। তবে এখানে কোন তেল উত্তোলনকারী কাজ করবে, তা ঠিক করবে ওয়াশিংটন। এমনটাই জানিয়েছেন ট্রাম্প। ঠিক কী দাঁড়াবে বিষয়টা তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে ট্রাম্পের ট্রুথ সোশালের পোস্ট থেকে যা মনে করা হচ্ছে তা এরকম- মার্কিন সংস্থাগুলিকে পাকিস্তান থেকে অপরিশোধিত তেল উত্তোলনের অধিকার দেওয়া হল। কিন্তু বিষয়টা অতটাও সরল নয়। কেননা পাকিস্তানের তেলের ভাণ্ডার মূলত বালোচিস্তানে। সেখানে চিন ইতিমধ্যেই নাক গলিয়ে রেখেছে। ফলে সেই অঞ্চলে আমেরিকার ‘দাদাগিরি’ বেজিং কতটা মেনে নেবে সেটাই আসল প্রশ্ন।

এতে ভারতের কী অবস্থান?
ভারতের কাছে মজুত তেল পাকিস্তানের থেকে ঢের বেশি। ২০১৬ সালের হিসেবে তা প্রায় ৪.৮ বিলিয়ন ব্যারেল। তাছাড়া গভীর সমুদ্র থেকে অপরিশোধিত তেল উত্তোলন এবং পরিশোধন করার ক্ষমতা ভারতের রয়েছে। পাকিস্তানের নৈব নৈব চ। দৈনিক হিসেবেও ভারত পাকিস্তানের থেকে বেশি অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করন। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির হিসেব বলছে, যেখানে ভারতের ক্ষেত্রে অঙ্কটা দৈনিক ৬ লক্ষ ব্যারেল, সেখানে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা মাত্র ৬৮ হাজার ব্যারেল! তবে আখেরে দুই দেশই আমদানির উপরে নির্ভরশীল। আয়তন ও জনসংখ্যার নিরিখে ভারতের ক্ষেত্রে এই নির্ভরতা নিশ্চিত ভাবেই বেশি। তবুও শেষপর্যন্ত খুব বেশি সমস্যা হবে না নয়াদিল্লির। কেননা ভারতের ভাণ্ডারে মজুত তেল যথেষ্ট। তাছাড়া তেল আমদানির জন্য অন্য দেশ তো রয়েছেই।

ভারতকে খোঁচা দিতেই পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি আমেরিকার?
পাকিস্তানের সঙ্গে তেল চুক্তি আখেরে আমেরিকার ক্ষেত্রে কতটা লাভজনক হবে তা সময়ই বলবে। তবে কিছু ‘লাভের গুড়’ নিশ্চয়ই মিলবে। কিন্তু সত্যি সত্যিই আর্থির লাভ কি ট্রাম্পের লক্ষ্য আদৌ? আসলে এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারতকে বার্তা দেওয়াটাই আমেরিকার উদ্দেশ্য। একটা নয়, দু’টো। এক, রাশিয়ার থেকে তেল কেনা বন্ধ করো। দুই, আমেরিকার থেকে তেল কেনো।

প্রসঙ্গত, বছরের গোড়ায় আমেরিকা সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় জানিয়ে দিয়েছিলেন ভারত আগের চেয়ে বেশি পরিমাণে তেল ও গ্যাস কিনবে ওয়াশিংটনের থেকে। আসলে শুল্কে ছাড়ের লক্ষ্যেই মোদির এই আশ্বাস- এমনটাই মনে করে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। কিন্তু এরপরও ভারতের তেলের প্রধান আমদানিকারী দেশ ‘দীর্ঘদিনের বন্ধু’ রাশিয়াই।

ট্রাম্প বলেছেন, “ভারত আমাদের ভালো বন্ধু দেশ। তবে যে কোনও দেশের চেয়ে ভারত বেশি শুল্ক আরোপ করেছে। এটা চলতে পারে না। ভারতের উপর বেশি পরিমাণ শুল্ক চাপাবে আমেরিকা।” কিন্তু যতই তিনি আমেরিকা-ভারতের বন্ধুত্বের কথা বলুন, একেবারে ক্লাসরুমের বন্ধুত্বের উদাহরণ টেনে বলা যায় রাশিয়া ও ভারত স্কুলের প্রথম ক্লাস থেকেই বন্ধু। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা নয়াদিল্লি কখনও ভুলতে পারবে না। ফলে চূড়ান্ত বিচারে আমেরিকার থেকে রাশিয়াকেই ভারত বেশি পাত্তা দেবে এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া ভারতের অন্যতম চিন্তার উৎস নিশ্চিত ভাবেই চিন। আর চিনকে মোকাবিলা করতে রাশিয়াকে তুলনামূলক ভাবে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার ভারতের। কূটনৈতিক সমীকরণ সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমী বিশ্বের চোখরাঙানি সামলেও রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা বন্ধ করেনি ভারত। তখনই আমেরিকার বোঝা দরকার ছিল ভারত মস্কোর পাশ থেকে সরবে না।

ট্রাম্প কি নিজের পায়েই কুড়ুল মারলেন?
কূটনৈতিক বিশ্বে তাৎক্ষণিকতার চেয়ে ঢের বেশি মূল্যবান দূরের সমীকরণ। আজ ট্রাম্প পাকিস্তানের সঙ্গে তেল চুক্তি করে ভারতের উপরে শুল্ক চাপিয়ে ‘কেমন দিলাম’ বলতে চাইছেন। অনেকেই বলছেন, এটা খামখেয়াল। কারও মতে এটা নিতান্তই ঠান্ডা মাথার ছক। আপাত ভাবে ছক বলে মনে হলেও এর মধ্যে গায়ের জ্বালা মেটানোর একটা দিকও উঠে আসে। কিন্তু এসবই সাময়িক বিষয়। আখেরে এই ধরনের সিদ্ধান্তকে নিজের পায়ে কুড়ুল মারার সামিলই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এরকম চললে অবধারিত ভাবেই আমেরিকার পাশ থেকে সরে যেতে থাকবে ভারত। সে রাশিয়ার পাশে তো থাকবেই। পাশাপাশি তৈরি করতে থাকবে নতুন নতুন সমীকরণ। যেটা হোয়াইট হাউসের ভ্রুই কুঞ্চিত করবে।

একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ট্রাম্পের চাপিয়ে দেওয়া শুল্ক কাঠামো কার্যকর হলে কৃষিক্ষেত্রে কর্পোরেটাইজেশন হতে বাধ্য। কৃষকরা নিজের জমিতে ক্রীতদাস হয়ে যাবেন। ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে ট্রাম্প ও মোদির কুশপুতুল পোড়ানোর ডাক দিয়েছে বামপন্থী কৃষক সংগঠন। বামপন্থী সংগঠন সারা ভারত কৃষক সভার তরফে বর্ষীয়ান নেতা হান্নান মোল্লার স্পষ্ট দাবি, কৃষি, দুগ্ধ-সহ খাদ্য উৎপাদন ক্ষেত্র কোনওভাবেই পুঁজিপতিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। আর এটা মোদি সরকারও ভালোই জানেন। অতীতে কৃষি বিল নিয়ে কী ঘটেছে সেটাও কেন্দ্র ভোলেনি। ফলে কোনওভাবেই এই চাপে মাথা নত করবে না তারা।

এদিকে আখেরে ভারতের সঙ্গে  দূরত্ব বাড়লে ট্রাম্পদেরই ক্ষতি। তিনি হয়তো দাবা খেলতে বসে বোড়ে কিংবা বড়জোর একটা হাতি বা ঘোড়া মেরে কিস্তিমাতের ইঙ্গিত করছেন। কিন্তু খেলা এখনও অনেক বাকি। চিনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সাহায্য পাবে ভারত। উলটে পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার ‘বন্ধুত্ব’ও দীর্ঘস্থায়ী হবে না। ফলে শেষপর্যন্ত লাভের লাভ কিছু তো হবেই না, বরং এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দেশ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব টাল খেলে আমেরিকারই সমস্যা। ট্রাম্প এটা কি সত্যিই বুঝছেন না? তিনি যা করছেন তা নিছকই একগুঁয়েমি। একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের পক্ষে এমন আচরণ কিন্তু সত্যিই বিস্ময়কর। প্রশ্ন উঠছে, ‘দাশু কি সত্যি সত্যিই পাগল? না কেবল মিচকেমি করে?’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *