ভাওয়াইয়াকে লোকমুখে ফিরিয়েছিলেন দীনেশদা

ভাওয়াইয়াকে লোকমুখে ফিরিয়েছিলেন দীনেশদা

শিক্ষা
Spread the love


 

  • তারিণী রায় (সিপিএমের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক, কোচবিহার)

কয়েক দশক আগের কথা। উত্তরবঙ্গের মাটির গান, প্রাণের গান ভাওয়াইয়া তখন হারিয়ে যেতে বসেছিল। কিছু পেশাদার শিল্পী এই গান গাইলেও গ্রামগঞ্জ থেকে নতুন করে ভাওয়াইয়াশিল্পীরা উঠে আসছিলেন না। সেই সময় অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন দীনেশচন্দ্র ডাকুয়া। তিনি চিন্তাভাবনা করে রাজ্য স্তরে ভাওয়াইয়া প্রতিযোগিতা চালু করলেন। সেই প্রতিযোগিতা তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। শহরের বাবুদের আড্ডাখানা থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের কিশোর-কিশোরীদের মুখেও পৌঁছে গিয়েছিল ভাওয়াইয়া গান।

তিনি মন্ত্রী থাকাকালীন কোচবিহারকে কেন্দ্র করে উত্তরবঙ্গের নানা জায়গায় বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। পৃথক রাজ্যের দাবিতে চারদিকে তখন আগুন জ্বলছে। দীনেশদাকে কাছ থেকে দেখেছি সেই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। তিনি কখনোই সেই আন্দোলনকে সমর্থন করতেন না। তিনি চাইতেন সব সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে একসঙ্গে থাকুক। পরবর্তীতে তিনি পর্যটনমন্ত্রী হওয়ার পর উত্তরবঙ্গের পর্যটনের জন্য বিশেষ নজর দিয়েছিলেন। উত্তরবঙ্গ পাহাড়, চা বাগানের সৌন্দর্য শুধু গোটা রাজ্য নয়, দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে তুলে ধরেছিলেন।

দীনেশদা কৃষক পরিবারের সন্তান ছিলেন। তাই ছাত্র আন্দোলনের পর তিনি কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ময়নাগুড়ি-যোগীঘোপা রেল নিয়ে বহু আন্দোলন হয়েছিল। দীনেশদার নেতৃত্বে আমরা সেই আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। তিনি হার না মানা মানুষ ছিলেন। আন্দোলন করতে গিয়ে কখনও তাঁর চোখেমুখে ভয় বা হতাশা দেখিনি। কোচবিহারে ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়াশোনা চলাকালীন সেই আন্দোলনের জেরেই তাঁকে কলেজ ছাড়তে হয়। শেষপর্যন্ত কলকাতায় গিয়ে পড়াশোনা শেষ করে ওকালতি পাশ করেন। মাথাভাঙ্গা আদালতে দীর্ঘদিন প্র্যাকটিস করেছেন। দলের কোনও কর্মীকে কেউ মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দিলে দীনেশদা ছিলেন তাঁদের শেষ ভরসা। তিনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে তাঁদের হয়ে মামলা লড়তেন। এমন কত কর্মীকে তিনি মিথ্যে মামলা থেকে বাঁচিয়েছেন তার হিসেব নেই।

খুব ভালো লিখতেন দীনেশদা। তাঁর বই থেকে আমরা লেখা সংগ্রহ করে সেগুলিকে দলীয় প্রচারের কাজে লাগাতাম। বহু নামী লেখকের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল তাঁর। দীনেশদার মৃত্যুর খবর শুনে নিজেকে সামলাতে পারিনি। চোখের কোণদুটি ভিজে যাচ্ছিল বারবার। ওঁর অনেক বয়স হয়েছিল। প্রায় ৯৫। আমাদের প্রবীণতম নেতৃত্বের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তাঁকে হারানোটা অনেক কষ্টের। শারীরিক সমস্যার জন্য দলের কাজে তিনি থাকতেন না ঠিকই তবে তাঁর বেঁচে থাকাটাই আমাদের একটি শক্তি দিত। আমরা মনে করতাম আমাদের সঙ্গে দীনেশদা রয়েছেন। কিন্তু এখন সেই জায়গায় একটি বড় শূন্যস্থান তৈরি হল।

অনুলিখন : শিবশংকর সূত্রধর



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *