ভয়ংকর পরিণাম

ভয়ংকর পরিণাম

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


পরপর দু’দিন পুলিশের ডাককে উপেক্ষা করেছেন অনুব্রত মণ্ডল। জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়েছেন। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে থানার ইনস্পেকটর-ইনচার্জ পদমর্যাদার একজন পুলিশ অফিসারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ। দলীয় নেতৃত্বের কাছে সেজন্য ক্ষমা চেয়ে সেই অভিযোগে তিনি নিজেই কার্যত সিলমোহর দিয়েছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠরা কৃত্রিম মেধা ব্যবহার করে অডিও ক্লিপ তৈরির অভিযোগ তুলে অনুব্রতকে বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা করছেন। ওই অভিযোগ ধোপে না টেকার সম্ভাবনা যথেষ্ট।

যদিও দু’দিনই পুলিশি তলবকে অগ্রাহ্য করে এখনও বহাল তবিয়তে আছেন একদা তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে যা অভিযোগ, তাতে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতেই পারত। কিন্তু করেনি। তাঁর হুমকি ও অশালীন ভাষায় গালাগালের অডিও ক্লিপটি নিয়ে পুলিশি তদন্ত এগিয়েছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ভাইরাল ওই ক্লিপে তিনি যেসব শব্দ ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, তা ছাপার অযোগ্য তো বটেই। পুলিশের মর্যাদার ওপর বড় আঘাতও বৈকি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে পুলিশমন্ত্রী। তাঁর বাহিনীর একজন আধিকারিককে অপমান করার পর তৃণমূল নেতৃত্ব চুপ করে থাকলে মর্যাদাহানি হত মুখ্যমন্ত্রীরই। প্রশ্নও উঠত অনুব্রতের এক্তিয়ার নিয়ে। দলদাস হয়ে গিয়েছে বলে পুলিশ পদক্ষেপ করল না বলে সমালোচনা হতে পারত। শুধু বিরোধী নয়, নাগরিকরা নিন্দায় সরব হতেন হয়তো। বিয়ের প্রথম রাতে বিড়াল মারার প্রবাদ মেনে তৃণমূল নেতৃত্ব প্রথমেই অনুব্রতের বক্তব্য থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।

শুধু তাই নয়, নেতৃত্ব তাঁকে দিয়ে ক্ষমা চাইয়ে নিয়েছে। অনুব্রত কিছুটা অজুহাত ও অভিযোগ তোলার চেষ্টা করলেও তৃণমূল তাঁকে বাধ্য করেছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে। পুলিশও নিশ্চয়ই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সংকেত পেয়েই। নাহলে পুলিশের সেই সাহস হত কি না সন্দেহ। কিন্তু অনুব্রত সেই তলবকে যেভাবে অগ্রাহ্য করলেন, সেটাও পুলিশের পক্ষে অবমাননাকর। কিন্তু পুলিশ এখনও হাত গুটিয়ে বসে। অন্য কেউ এরকম অন্যায় করলে পুলিশ এমন নিষ্ক্রিয় থাকত বলে মনে হয় না।

সমাজমাধ্যমে লেখার পর ক্ষমা চেয়ে একটি পোস্ট মুছে দিয়েও কিন্তু রেহাই পাননি পুনের এক আইনের ছাত্রী। কলকাতা পুলিশ তাঁকে ধরে এনে জেলে বন্দি করে রেখেছে আদালতের নির্দেশ নিয়ে। অনুব্রতের ক্ষেত্রে সেই সক্রিয়তা দেখা না যাওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

মনে হতেই পারে যে, দলের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পর আর কোনও পদক্ষেপ হয়তো তাঁর বিরুদ্ধে করা হবে না। অথবা আদালতের থেকে আগাম জামিন নেওয়ার জন্য সময় দিয়ে পুলিশ হয়তো সুযোগ করে দিচ্ছে। যেটা প্রশাসনের সর্বোচ্চস্তরের সবুজ সংকেত ছাড়া হবে, বিশ্বাস করা কঠিন। যদি শেষ পর্যন্ত পুলিশ অনুব্রতের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করে, তার প্রভাব পড়বে গোটা বাহিনীর ওপর।

পরিণতিতে এরপর শাসকদলের আর কোনও নেতা আবার পুলিশকে হুমকি বা গালাগাল দিলেও পুলিশ নিশ্চিতভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে। অন্যদিকে, পুলিশ বাহিনীর মনোবল আরও তলানিতে ঠেকবে। শাসকদলের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কাছে আরও বেশি করে আত্মসমর্পণ করবে পুলিশ। তাছাড়া ভয়ংকর নজির হয়ে থাকবে ঘটনাটি। তাছাড়া রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত শীর্ষপদে আসীন নেতাদের মুখের ভাষা যদি এমন হয়, নতুন প্রজন্মের পক্ষে তার প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর।

এই ধরনের লোককে নেতৃত্বে রেখে দিলে সেই দলের রুচি-সংস্কৃতি কেমন, তা স্পষ্ট হয়। অনুব্রত প্রথম এমন কাজ করেছেন তা নয়। এর আগেও পুলিশকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু এবার যে ভাষায় এক পুলিশ আধিকারিককে গালাগাল করেছেন, তা পুলিশের সহ্যের শেষ সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া উচিত। এরপরেও চুপ করে থাকলে প্রমাণ হবে দক্ষতা হারিয়ে পুলিশ পরিণত হয়েছে নপুংসকে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *