ভক্তের ভগবান, প্রেমের ‘দিলওয়ালে’, আপনার জন্য আজও ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ শাহরুখ

ভক্তের ভগবান, প্রেমের ‘দিলওয়ালে’, আপনার জন্য আজও ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ শাহরুখ

সিনেমা/বিনোদন/থিয়েটার
Spread the love


বিশ্বদীপ দে: দিল্লির রোগা ছেলেটাকে এক পরিচালক বলেছিলেন, ”তোমার নাকটা বিশ্রী। কী করে নায়ক হবে?” ঝাঁকড়া চুলের তরুণ সেদিন কী ভেবেছিলেন তা আমরা জানি। তিনি কেবল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বুঝিয়েছিলেন, তোমাকে চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা- শাহরুখ খানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। আসমুদ্রহিমাচল ছাপিয়ে গোটা বিশ্বের বিনোদন দুনিয়ায় খ্যাতি থেকে অতি খ্যাতির অবিশ্বাস্য শৃঙ্গ আরোহণের সেটাই প্রধান মন্ত্র। এবার তাঁর করায়ত্ত সেরা অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার। যেন ষোলো কলা পূর্ণ হল। নেহাতই সাধারণদর্শন এক তরুণ খ্যাতির শীর্ষ ছুঁয়ে জাতীয় স্বীকৃতির মঞ্চেও সেরা হয়ে এক অন্যতর আলোয় উদ্ভাসিত হলেন শুক্রবার সন্ধ্যায়।

অথচ কয়েক বছর আগে সত্যিই মনে হয়েছিল এবার অস্তগামী মহাতারকা-খ্যাতি! ‘জিরো’ তো স্রেফ একটা ছবির নাম নয়। সেটা আসলে শাহরুখের হিরো থেকে জিরো হয়ে যাওয়ার প্রতীক! এমন খোঁচা অনেকেই দিয়েছিলেন। শোনা গিয়েছিল খোদ কিং খানেরও নাকি মাথায় ঘুরছিল অভিনয় ছেড়ে অন্য কিছু করার কথা। কে জানত চার বছর পরে ‘পাঠান’ হয়ে ফিরবেন তিনি! আর সেই সাফল্যের রেশ মিটতে না মিটতেই আরও উজ্জ্বল আলো গোটা বিনোদন-বিশ্বে ছড়িয়ে দেবেন ‘জওয়ান’ হয়ে। সেই ছবির জন্যই এবার তাঁর সেরা অভিনেতার জাতীয় পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হওয়া। শুক্রবাসরীয় সন্ধ্যায় খবরটা চাউর হতেই শাহরুখ অনুরাগীদের মনের ভিতরে আনন্দ ঢেউ। এই লেখা পর্যন্ত ‘কিং’ খান কোনও বিবৃতি দেননি। তবে অনেকেরই মনে পড়ছে ‘পাঠান’ হিট হওয়ার পর টুইট করে তিনি কী লিখেছিলেন। ‘সূর্য আসলে একাই জ্বলে ওঠে। অন্ধকার কাটিয়ে ফের জ্বলে ওঠে।’ একথা আজও বলা যায়। হয়তো আজ আরও বেশি করে বলা যায়।

আসলে শাহরুখ মানেই তো রূপকথা। রোগাটে এক তরুণ। তাঁর অভিনয় ক্ষমতা আছে বটে। কিন্তু কোথায় চকোলেট হিরো আমির, সুঠামদেহী সলমন, বড় চুলের সঞ্জয় দত্তরা আর কোথায় সে। একবার জুহি চাওলা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘রাজু বন গ্যায়া জেন্টলম্যান’ ছবির সময় প্রথমবার শাহরুখকে দেখে তিনি প্রায় ভিড়মি খাওয়ার জোগাড়! কোথায় ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’-এর আমির আর কোথায় এই ছেলেটা? তিনি নাকি হাসতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু অচিরেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ছেলেটার দু’চোখে জ্বলতে থাকা স্বপ্নের আগুন তাকে অনেক অনেক দূরে নিয়ে যাবে। সমসাময়িক বিবেক মুসরান, আদিত্য পাঞ্চোলিদের ফেলে সে এমন এক কক্ষপথে পৌঁছবে, যেখানে পৌঁছে বলা যায়, ‘আই অ্যাম দ্যা লাস্ট অফ দ্য স্টার্স।’

DDLJ-Shah-Rukh-Kajol

প্রথমে অ্যান্টি হিরো হিসেবে চমকে দেওয়া। ক্রমে যশ চোপড়ার কথা শুনে রোম্যান্টিক নায়কের রঙিন আলোয় ঝলমলে হয়ে ওঠা। সাফল্যের সরণিতে অনেকটা হেঁটেই ফের সিক্স প্যাক অ্যাব নিয়ে ‘দর্দে ডিস্কো’র শরীরী বিভঙ্গে অন্যতর ইমেজ গড়তে চাওয়া। একেকটি ইমেজ ঠেলে সরিয়ে একেবারে অন্য আকাশে এভাবে উদিত হওয়া- বুকের ভিতরে অনর্গল ইচ্ছের আতসবাজি না জ্বালালে সম্ভব নয়। এবং পাঠান। কিংবা জওয়ান। আটান্ন বছর বয়সে এসে নিজেকে অ্যাকশন হিরো হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাও এক অবিশ্বাস্য পালাবদল। নিন্দুকেরা তাঁর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস নিয়ে নানা কথা বলতে পারে। কিন্তু সেই আত্মবিশ্বাস ছাড়া কি এমন সব মাইলফলক তৈরি করা সম্ভব ছিল?

Jawan

 

বাড়ি মন্নতের সামনে জনস্রোত, ছবি মুক্তি পেলে আজও অনুরাগীদের মধ্যে তৈরি হওয়া উৎসব-আবহ, দেশে তো বটেই বিদেশে গেলেও জনতার ভিড়ের ভিতরে মিশে যাওয়া- তারকা শাহরুখ বহুদিনই ‘সব পেয়েছির দেশ’-এর বাসিন্দা। পরপর ব্লকবাস্টার, কিংবদন্তি সব ডায়লগ, একের পর এক প্রজন্মের কাছে ‘দিলওয়ালে’ হয়ে দু’হাত বিস্তৃত করে দেওয়া… আর কী বাকি থাকে। ছিল। আর সেটা জাতীয় পুরস্কার। হয়তো অনুরাগীদের ভালোবাসাই শ্রেষ্ঠ পুরস্কার, তবু জাতীয় ক্ষেত্রের এই স্বীকৃতির বোধহয় প্রয়োজন ছিল। যেন একটা বৃত্তের সম্পূর্ণ হওয়া।

এই স্বীকৃতি কি সত্যিই কেবল ‘জওয়ান’-এর? নাহ! দশকের পর দশক মানুষকে রুপোলি পর্দা থেকে ভাসিয়ে দেওয়া স্বপ্নের বুদবুদে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এই পুরস্কার তো সত্যিই ‘ডিউ’ ছিল শাহরুখ খানের। অপ্রাপ্তির সেই ঝুলিও এবার ভরে গেল। আসলে এই অদ্ভুত সময়ে, যখন স্টারডম তৈরি হয়েই কর্পূরের মতো মিলিয়ে যায়, রিলস আর শর্টসের ক্ষণস্থায়ী আলোকবৃত্তটুকু কেবল জেগে উঠেই অদৃশ্য হয়, সেই সময় সর্বশেষ সুপারস্টারের হাতে এল তাঁর প্রথম জাতীয় পুরস্কার। এ কেবল শাহরুখের জিতে যাওয়া নয়। সাধারণের ভিড় থেকে চেষ্টার জোরে দশকের পর দশক ‘বাজিগর’ থাকার সাফল্যের আলোর ব্যাপ্তি আরও বহুদূর ছড়িয়ে রয়েছে। আমরা যারা হাওয়া সাইকেলে প্যাডেল করে পিঠে জড়িয়ে নিয়েছি জামার দুই হাতা, কিংবা কাঁধের ব্যাগ একহাতে নিয়ে ছুটে গিয়েছি ব্যস্ত সড়কে, স্বপ্নে দেখা মেয়েটিকে মনের কথা বলব বলে মনে মনে প্রস্তুতি নিয়েছি আপনারই ছবির ডায়লগ ভেবে… তাঁদের কাছে আপনার নতুন নতুন মাইলফলক মানেই ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’। সামান্য মাইনে বাড়া মানিব্যাগ কিংবা দুশ্চিন্তায় জাগা দু’চোখে স্বপ্নের তুলিস্পর্শ জেগে থাকে। আমরা হারলেও জিতে যেতে জানি। আমাদের সব পরাজয় আপনার জয়ের সরণিতে মিশে গিয়েছে বাজিগর। সূর্য আসলে একাই জ্বলে ওঠে। কিন্তু তার আলো সকলের। প্রত্যেকের।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ






Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *