সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে বৃহস্পতিবার বহু প্রতিক্ষিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এদিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি সাক্ষরিত হওয়ার পর দু’দেশের মধ্যে বছরে ৩৪ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।
এদিন বহু প্রতিক্ষিত এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর প্রধামনন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানান, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার ফলে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের নয়া পথ খুলবে। ভারত ও ব্রিটেন দু’দেশই এর উপকার পাবে। কিন্তু এই বাণিজ্য চুক্তির ফলে ঠিক কী লাভ হবে ভারতের? মনে করা হচ্ছে, এই চুক্তির ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা বিশেষ সুবিধা পাবেন। কৃষক, মৎসজীবীরাও উপকার পাবেন। ভারত থেকে ব্রিটেনে রপ্তানি করা সামুদ্রিক খাবার, টেক্সটাইল, রত্ন, গয়না, চামড়াজাত পণ্য, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ শুক্ল ফ্রি হয়ে যাবে। এর উপকার পাবেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। উলটো দিকে ব্রিটেন থেকে ভারতে আমদানি করা চিকিৎসাজাত দ্রব্য, মহাকাশ গবেষণার যন্ত্রাংশ, গাড়ি, হুইস্কি, চকোলেট-সহ বিভিন্ন পণ্যগুলি বিনাশুল্কে ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করবে। ফলে গড়ে শুল্কের পরিমাণ ১৫ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে নেমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বহু বছর ধরেই মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দর কষাকষি চলছিল। অ্যালকোহল ও মোটরগাড়ির উপর ভারতের আরোপিত আমদানি শুল্ক হ্রাস করা এবং কাজের উদ্দেশ্যে ভারত থেকে ব্রিটেন অভিমুখী কর্মপ্রার্থীদের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ। অ্যালকোহল ও মোটরগাড়ির উপর আমদানি শুল্ক হ্রাসে নরম মনোভাব দেখালেও ‘অভিবাসন’ (ইমিগ্রেশন) ইস্যুতে ভারতের কঠোর হওয়ার সম্ভাবনা প্রথম থেকেই বেশি ছিল। ২০২১ সালে বরিস জনসনের আমলে নতুন করে দু’দেশের মধ্যে এই চুক্তি আলোচনা শুরু হয়। তারপর লিজ ট্রাসের জমানাতেও জট খোলার কোনও সম্ভাবনা দেখা যায়নি। তাঁর মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যান মন্তব্য করেছিলেন যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর হলে ব্রিটেনে ভারতীয় অভিবাসনের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তাতে নয়াদিল্লি তো বটেই, ব্রিটেনের ভারতীয়দের মধ্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। যার জেরে ব্রাভারম্যান পদত্যাগ করেন। তারপর দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি সামাল না দিতে পারার ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে লিজ ট্রাসকেও সরে যেতে হয়।
এরপর ২০২২ সালে ব্রিটেনের ক্ষমতায় আসেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক। ফের নতুন করে এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। ২০২৩ সালে দিল্লি অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে এনিয়ে তিনি মোদির সঙ্গে বৈঠকও করেন। যা ফলপ্রসূও হয়েছিল। তারপর এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছিল দুদেশের মধ্যে। কিন্তু এর মাঝেই ব্রিটেনে ক্ষমতায় আসে স্টার্মারের লেবার পার্টি। ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করার ক্ষেত্রে স্টার্মারের বিদেশনীতির প্রধান বিষয় ছিল মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। যার পথ প্রশস্ত করার পাশাপাশি শিক্ষা, প্রযুক্তি, নিরাপত্তা-সহ নানা ক্ষেত্রে দিল্লির সঙ্গে একযোগে কাজ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন তিনি। এবার স্টার্মারের জমানাতেই জট কাটল বহু প্রতীক্ষিত এই চুক্তির।