বেবি কর্নেই বিশ্বজীবনে খুশির ছন্দ

বেবি কর্নেই বিশ্বজীবনে খুশির ছন্দ

শিক্ষা
Spread the love


ময়ূখ ভট্টাচার্য

খাদ্যজগতে এক নতুন জনপ্রিয় নাম বেবি কর্ন। এটি শুধু স্বাদের জন্য নয়, পুষ্টিগুণ ও বহুমুখী ব্যবহারের কারণেও এক অনন্য ফসল। বর্তমানে হোটেল, রেস্তোরাঁ, বিয়ের আসর, পার্টি এবং পাঁচতারা হোটেলের ডাইনিং মেনুতে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ক্রিস্পি চিলি বেবি কর্ন, বেবি কর্ন বাটার সাজ, বেবি কর্ন মানচুরিয়ান, গ্রিলড বেবি কর্ন স্যালাড এবং বেবি কর্ন সুপের মতো খাবার এখন খাদ্যরসিকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এই ফসল তার স্বাদ, পুষ্টিগুণ এবং হালকা গঠনের কারণে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।

বেবি কর্ন মূলত অপরিণত ভুট্টার মোচা, যা উচ্চমূল্যে বাজারজাত করা যায়। এটি ৮৯.১% জলীয় উপাদান, ১.৯ গ্রাম প্রোটিন, ৮.২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২৮ মিঃ গ্রাঃ ক্যালসিয়াম, ৮৬ মিঃ গ্রাঃ ফসফরাস এবং ১১ মিঃ গ্রাঃ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। উচ্চ আঁশযুক্ত ও নিম্ন চর্বিযুক্ত হওয়ায় এটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয়। ভারতবর্ষে বছরে প্রায় ৫৫ লক্ষ টন ভুট্টা উৎপাদিত হয়, যার মধ্যে ২% বেবি কর্ন উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে সাম্প্রতিক চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সংখ্যাটি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উত্তরবঙ্গের মাটি ও জলবায়ু বেবি কর্ন চাষের জন্য আদর্শ। বিশেষ করে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, মালদা এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে এই ফসল লাভজনক হতে পারে। বর্তমানে ধান ও অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী ফসলের তুলনায় বেবি কর্ন অনেক বেশি লাভজনক। এক হেক্টর জমিতে বেবি কর্ন চাষ করে কৃষকরা গড়ে ৬.০১ টন ফলন পেতে পারেন, যা ধানের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ বেশি আয় দিতে সক্ষম।

বাজারদর ও চাহিদার দিক থেকে বেবি কর্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে এর মূল্য প্রতি কেজি ৮০-১২০ টাকা, যা অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেক বেশি। শুধু দেশীয় বাজারেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষত থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চিন এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এটি রপ্তানিযোগ্য একটি উচ্চমূল্যের কৃষিপণ্য। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে আইটিসি, বিগ বাস্কেট, মাদার ডেয়ারির মতো সংস্থাগুলো বেবি কর্ন সংগ্রহ করে প্যাকেজিং এবং রপ্তানি করছে।

বর্তমান কৃষিক্ষেত্রে টেকসই কৃষির ধারণা দ্রুত প্রসার লাভ করছে এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে বেবি কর্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। এর চাষের জন্য সমন্বিত পুষ্টি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত কার্যকর। রাসায়নিক সার, সবুজ সার ও জৈব সারের সঠিক সংমিশ্রণে এটি উৎপাদন করা গেলে মাটির উর্বরতা বজায় থাকে, কৃষি পরিবেশবান্ধব হয় এবং কৃষকরা দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হন। গবেষণায় দেখা গেছে, রাসায়নিক সার ও জৈব সার একত্রে ব্যবহার করলে বেবি কর্নের উৎপাদনশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

তবে, এই চাষের প্রসারে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। তাই উচ্চমানের বীজের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা, পর্যাপ্ত বিপণন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, সংগঠিত কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সরকারি সহায়তা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। কৃষকদের প্রশিক্ষণ, আধুনিক সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং সরকারি নীতির সহায়তায় বেবি কর্ন চাষ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। সমবায় চাষ ও চুক্তিভিত্তিক কৃষির মাধ্যমে কৃষকদের আর্থিক ঝুঁকি কমানো সম্ভব। পাশাপাশি, কৃষিঋণ, ভরতুকি ও অন্যান্য সরকারি সুবিধা প্রদান করা গেলে কৃষকরা আরও বেশি উৎসাহিত হবেন।

বেবি কর্ন চাষ কেবল কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করবে না, বরং এটি উত্তরবঙ্গের কৃষিকে একটি নতুন দিগন্তে পৌঁছে দিতে পারে। পরিকল্পিত উৎপাদন, সঠিক বিপণন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে এই সম্ভাবনাময় ফসল বাংলার কৃষি ও অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটাতে পারে।

(লেখক কৃষি গবেষক, জলপাইগুড়ি)

The put up বেবি কর্নেই বিশ্বজীবনে খুশির ছন্দ appeared first on Uttarbanga Sambad.



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *