বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: বুধবার পর্যন্ত বন্ধ রাখা হচ্ছে ভূমিধসে বিধ্বস্ত ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। মেরামতির কাজ শুরু হলেও পাহাড়-সমতলে ভারী বর্ষণের সতর্কতা মিলতে ফের বিপর্যয়ের শঙ্কা বেড়েছে। তিস্তা ক্রমশ এগিয়ে আসছে। রাস্তায় ক্রমে ফাটল ধরেছে। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, এভাবে জোড়াতালি দিয়ে আদৌ জাতীয় সড়ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব?
করোনেশন সেতু থেকে চিত্রে পর্যন্ত ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে বুধবার পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রাখা হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে জাতীয় সড়ক ও পরিকাঠামো উন্নয়ন কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল)। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিকিমের রংপো থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত জাতীয় সড়ক শ্বেতিঝোরায় ভূমিধসে অবরুদ্ধ হয়েছে। রংপো থেকে মুনসং-লাভা-গরুবাথান হয়ে শিলিগুড়ি যাওয়ার রাস্তা কাটারার কাছে ভূমিধসে অবরুদ্ধ হয়েছে। সেই ধস সরানো এবং সড়ক মেরামতের কাজ চলছে। নিরাপত্তার জন্য ওই সড়কের ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এনএইচআইডিসিএল পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিমের জেলা প্রশাসনকে নজরদারি বাড়াতে অনুরোধ করেছে।
রবিবার রাত ৮টা থেকে ওই নির্দেশ কার্যকর হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সেটা বহাল থাকবে। ওই নির্দেশের পর গ্যাংটক থেকে শিলিগুড়ির মধ্যে চলাচলকারী যানবাহনগুলিকে লাভা এবং গরুবাথান এবং অন্যান্য বিকল্প পথ দিয়ে যেতে বলা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার মামখোলা, ঋষিখোলা, তারখোলা-সহ একাধিক জায়গায় ভূমিধস নামে। রবিবার সকালে কাতারে ও ঋষিখোলায় নতুন করে ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। ঋষিখোলার রাস্তায় বিপজ্জনক বিরাট ফাটল দেখা দিয়েছে৷ শ্বেতিঝোরায় ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একাংশ ধসে তিস্তায় নেমেছে। কালিম্পংয়ের পুলিশ সুপার শ্রীহরি পাণ্ডে জানান, ধস সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। শ্বেতিঝোরায় জাতীয় সড়কের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ধস সরিয়ে একমুখী যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সিকিমগামী সমস্ত যানবাহন বিকল্প পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

শনিবার রাত থেকে একটানা ভারী বর্ষণের জেরে দৃশ্যত লণ্ডভণ্ড দশা হয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের। ওই পরিস্থিতিতে রংপো থেকে কার্শিয়াং, দার্জিলিং হয়ে শিলিগুড়ি রুটে শুধুমাত্র ছোট যানবাহন চলাচল করছে। রংপো থেকে মেল্লি রাস্তা খোলা রয়েছে। এই পথে মেল্লি হয়ে দক্ষিণ সিকিমের যাতায়াত চলছে। লাভা থেকে সিকিম, লাভা থেকে কালিম্পং ও লাভা থেকে শিলিগুড়ি ভায়া গরুবাথান রাস্তা খোলা রয়েছে। তবে লাভা থেকে লোলেগাঁও এবং লাভা থেকে রেশি হয়ে সিকিম যাওয়ার রাস্তা বন্ধ রয়েছে। ওই পরিস্থিতিতে কালিম্পং পুলিশের তরফে শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক যাতায়াতের জন্য তিনটি বিকল্প রাস্তার কথা জানানো হয়েছে। সেগুলি হল ১) শিলিগুড়ি থেকে জোরবাংলো-তিস্তাবাজার-রংপো হয়ে গ্যাংটক। ২) শিলিগুড়ি থেকে সেবক বাগরাকোট লাভা আলগারা রংপো হয়ে গ্যাংটক রাস্তা।
বিধ্বস্ত জাতীয় সড়ক মেরামতের কাজ শুরু হলেও খুব একটা ভরসা রাখতে পারছেন নিত্যযাত্রী, গাড়ি চালকরা। সিকিমের লোকসভার সাংসদ ইন্দ্র হাং সুব্বা ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রী নীতিন গডকরির সঙ্গে দেখা করে জাতীয় সড়ক এলাকায় বন্যা প্রতিরোধ এবং সড়ক পুনরুদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্মারকলিপি দেন। তিনি তিস্তার বিপরীত তীরে একটি বিকল্প গ্রিনফিল্ড হাইওয়ে নির্মাণের আবেদন রেখেছেন। গ্রিনফিল্ড প্রকল্পটি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে অস্থায়ী উঁচু করিডোরের পরামর্শ দিয়েছেন। সোমবার আবহাওয়া দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, ভারী বর্ষণ এখনই থামছে না। আরও কয়েকদিন অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে সিকিম এবং উত্তরের পাহাড়-সমতলে। বিপর্যয়ের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন