সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উষ্ণায়ন, কার্বন নিঃসরণের বাড়বাড়ন্ত নিঃশব্দ ঘাতক হয়ে উঠেছে। পৃথিবীর আদিম সৃষ্টি হিমালয় পর্বতমালাও সেই অভিশাপের কবলে! তার শিরে পুঞ্জীভূত মেঘে মিশছে প্রাণঘাতী ধাতুর বিষ। এতদিন যা ছিল পবিত্র, পাহাড়ে ঝরে পড়া সেই বৃষ্টির জল এখন বিষাক্ত। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় এমনই সব ভয়ংকর তথ্য উঠে এসেছে। বলা হচ্ছে, যে মেঘ সবচেয়ে নির্ভেজাল জল হয়ে ঝরে পড়ত, সেটাই এখন বিভিন্ন খনিজ পদার্থে ভর্তি। যা পান করলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি তো বটেই, বিশেষত ছোটদের। সাম্প্রতিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, হিমালয়ের পূর্বাঞ্চলের দূষণ পশ্চিমাঞ্চলের তুলনায় অন্তত দেড় গুণ বেড়ে গিয়েছে। এই তথ্যে কপালের ভাঁজ চওড়া হতে বাধ্য।
বছর তিনেক ধরে বোস ইনস্টিটিউট এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটেওরোলজি মিলে একটি সমীক্ষা করেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, বর্ষায় হিমালয়ের পূর্বাঞ্চলে যে মেঘ সঞ্চারিত হয়, তার মধ্যে ক্যাডমিয়াম, কপার, জিঙ্কের মতো ভারী ধাতুর কণা মিশে রয়েছে। চরিত্র অনুযায়ী, এগুলো থিতিয়ে যায় না। ফলে মেঘ বৃষ্টি হয়ে নেমে এলে তাতেও এসব ধাতব কণার অস্তিত্ব থাকে। সায়েন্স অ্যাডভান্স নামের বিখ্যাত জার্নালে বিজ্ঞানীদের এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাতে স্পষ্ট লেখা, ‘ছোটদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এসব ধাতুর প্রভাব বড়দের তুলনায় অন্তত ৩০ শতাংশ ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অথচ পূর্ব হিমালয়ের উপর সঞ্চারিত মেঘ একসময়ে রোগ নিরাময়ের সবচেয়ে নিরাপদ, নির্ভেজাল উৎস ছিল। এর মধ্যে এখন সর্বোচ্চ হারে ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে।’
হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলের বাতাস, মেঘে কীভাবে ধাতব বিষের প্রবেশ? কীভাবেই বা তা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে বিপদ বাড়াচ্ছে? সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, পূর্ব হিমালয়ের উঁচু এলাকায় বিভিন্ন কলকারখানা তৈরি হচ্ছে। সেখান থেকে বিপুল কার্বন নিঃসরণ এবং ভারী ধাতুর ব্যবহারের কারণে বাতাসে ধাতব কণা মিশছে। ওইসব এলাকায় গেলে শ্বাসপ্রশ্বাস কিংবা ত্বকের মাধ্যমে শরীরে ঢুকছে। মেঘের সংস্পর্শে এলে বা বৃষ্টিতে ভিজলেও তা শরীরের ক্ষতি করছে। এতরকম বিপদবার্তা সত্ত্বেও ওই সমীক্ষার পর্যবেক্ষণে একটি ইতিবাচক দিকও রয়েছে। বলা হয়েছে যে চিন, পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের মেঘ অনেকটাই কম দূষিত। তবে এতে আশ্বস্ত হওয়ার মতো কিছু নেই। কারণ, বিষের প্রভাব উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে ‘উষ্ণায়ন’ নামক দানবের অভিশাপে।