অর্ণব দাস, বারাসত: ব্যবসায়ের পাওনা নিয়ে বিবাদ। দিল্লির ব্যবসায়ী পার্টনারকে অপহরণ করে তাঁর পরিবারের কাছে ১ কোটি টাকা মুক্তিপণের দাবি! অ্যাপ ক্যাবের চালকের অভিযোগে তদন্তে নেমে তিনজনকে গ্রেপ্তার করল শাসন থানার পুলিশ। ঘটনায় নাম জড়িয়েছে দুই তৃণমূল নেতার। তৃণমূল জানিয়েছে, অভিযোগ প্রমাণ হলে প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। তবে মূল অভিযুক্ত এখনও পলাতক। তার খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে দু’জন স্বরূপনগর থানার বাসিন্দা। একজন সাদ্দাম মণ্ডল (৬১)। তিনি স্থানীয় তৃণমূল নেতা। অপরজন সাজ্জন আলম (৪১)। তাঁর স্ত্রী শাসক দলের পঞ্চায়েত সদস্য। অপর ধৃতের নাম আরেকজন জামালউদ্দিন মণ্ডল (৪০)। তিনি বাদুড়িয়া এলাকার বাসিন্দা। বাদুড়িয়ার বাসিন্দা মূল অভিযুক্ত জসীমউদ্দীন মণ্ডল ওরফে রাজু (৩৫) পলাতক। তাঁর খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। কীভাবে ও কেন দিল্লির ব্যবসায়ীকে অপহরণ করলেন অভিযুক্তরা?
জানা গিয়েছে, মূল অভিযুক্ত রাজুর বাদুড়িয়ায় হ্যাচারির ব্যবসার পার্টনার ছিল দিল্লির বাসিন্দা নাজিম চৌহান। যদিও বছরখানেক আগে তাদের এই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকেই দু’পক্ষের মধ্যে পাওনা নিয়ে বিবাদ চলছিল। ঠিক হয়েছিল বসিরহাটের এক পরিচিতর মধ্যস্থতায় মীমাংসা হবে। সেইমত রবিবার সকাল ৮টা নাগাদ নাজিম দমদম বিমানবন্দরে নামলে তাকে অ্যাপ ক্যাবে নিয়ে বসিরহাটে যাওয়ার নাম করে রওনা দেয় রাজু।
খড়িবাড়ি রোড ধড়ে সন্ডালিয়া রেলগেট পেরোতেই হঠাৎ শৌচকর্মের জন্য গাড়ি থামাতে বলে রাজু। গাড়ি থামিয়ে যেই রাজু নামে, তখনই পিছনে থাকা আরেকটি গাড়ি ক্যাবের সামনে থেমে কয়েকজন নেমে রাজু ও নাজিমকে তুলে নিয়ে যায়। এটা দেখেই হতবাক হয়ে যান ক্যাব চালক মিরাজুল কাজী। তৎক্ষণাৎ তিনি শাসন থানায় অভিযোগ জানান। ততক্ষণে দিল্লির ব্যবসায়ীর পরিবারের কাছে এক কোটি টাকা মুক্তিপণকে ফোন চলে গিয়েছিল।
সেই ফোন ট্র্যাক করলে বারবার লোকেশন পরিবর্তন হতে দেখে পুলিশ। এই ঘটনায় তদন্তকারীদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় রাজু কিডন্যাপ করিয়ে, নিজে অপহরণের নাটক সাজিয়েছেন। তারপরই সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে। এই খবর পেয়ে অপহরণ চক্রের সঙ্গে যুক্ত বাকিরা অপহৃত নাজিম চৌহানকে বসিরহাট এলাকায় ছেড়ে দেয়। সেখান থেকেই তাঁকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত তিনজনকে টিআই প্যারেডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে স্বরূপনগরের তৃণমূল বিধায়ক বীণা মণ্ডল জানিয়েছেন, “ধৃতরা তৃণমূল করলেও দল এই ঘটনাকে কখনই প্রশ্রয় দেয় না, আপোষও করবে না। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।”