বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: বৃহস্পতিবার রাতে পশ্চিম সিকিমের উঁচু এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে ভূমিধসে বিচ্ছিন্ন গ্যালশিং জেলার ইউকসোম। হড়পা বানে উড়েছে কাঠের সেতু। ছাংরি বাস্তি এবং ধোবান গ্রাম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। সীমান্ত সুরক্ষা বলের টহলের রাস্তাও প্রায় নিশ্চিহ্ন। প্রশাসনের তরফে সাধারণ মানুষকে চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্ক করা হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সিকিমের গ্যাংটকে অতি সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬ মিলিমিটার। চুংথাং ও মঙ্গনে বৃষ্টি হয়নি। ডামথাংয়ে ৩ মিলিমিটার এবং ক্ষণিতারে ১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার সীমান্ত সুরক্ষা বলের (এসএসবি) ৭২ ব্যাটালিয়নের তরফে ইউকসাম থেকে প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ইউকসোমের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিধস নেমেছে। গুরুত্বপূর্ণ কাঠের সেতুগুলি সাকিম ধোবান খোলা নদীর হড়পা বানে ভেঙে ভেসে গিয়েছে। বিস্তীর্ণ অঞ্চল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যোগাযোগ পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে। অন্যদিকে নিরাপত্তা বাহিনী বিকল্প রুট ব্যবহার করে টহলদারির কাজ চালাচ্ছে।
সিকিম প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গিয়ালশিং জেলার সদর শহর গেজিং। উঁচু পাহাড়ি এলাকা হওয়ার সুবাদে এই জেলা ট্রেকিংয়ের জন্য প্রসিদ্ধ। পেলিং ও জেরেথাং এই জেলার অন্য দুটি প্রধান শহর। গ্যালশিং জেলায় আয়তন ১,১৬৬ বর্গ কিলোমিটার। খেচেওপেরি হ্রদ এই জেলার অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়াও রাজ্যের প্রথম মঠ ডুবডি মঠও এই জেলায় অবস্থিত। কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যানের অংশবিশেষও এই জেলায় রয়েছে। গ্যালশিং থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত ইউকসোম একটি ঐতিহাসিক শহর। এটি সিকিম রাজ্যের প্রথম রাজধানী ছিল। ১৬৪২ সালে সিকিমের প্রথম চোগিয়াল ফুন্টসোগ নামগিয়াল ওই রাজধানীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
বৃহস্পতিবার রাতে গ্যালশিং জেলার প্রত্যন্ত শহর ইউকসোমের ছাংরিবসতি এবং ধোবান গ্রামের মধ্যে সংযোগকারী একটি কাঠের সেতু হড়পা বানে সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। বেশ কয়েকটি জায়গায় ভূমিধস নেমেছে। বুধবার থেকে গত অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে প্রতিটি পাহাড়ি ঝোরা প্রবল গতিতে বয়ে চলেছে। ফলে চলাচলের রাস্তা পুরোপুরি বিধ্বস্ত। এসএসবির ছাংরি সীমান্ত ফাঁড়ি থেকে ধোবান পর্যন্ত এবং নিউ পাতাল হয়ে ইউকসোম পর্যন্ত সড়কের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। চৌরি সীমান্ত ফাঁড়ি চৌড়িবসতি থেকে ধোবান, নিউ পাতাল থেকে ইউকসাম পর্যন্ত পথে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। এসএসবি-র তরফে গ্যালশিং জেলা প্রশাসনকে সেতুটি ভেঙে পড়ার বিষয়ে জানানো হয়েছে এবং বিপর্যয় মোকাবিলার চেষ্টা চলছে।