বিদিশা চট্টোপাধ্যায়: শানায়া কাপুর এবং বিক্রান্ত মাসে অভিনীত ছবি ‘আঁখো কি গুস্তাখিয়া’ প্রেমের ছবি। যে প্রেম অপ্রতিরোধ্য এবং কোনও নিয়ম, কানুন মানে না। পরিচালক সন্তোষ সিং এবং তাঁর চিত্রনাট্যকার সেটাকেই শিরোধার্য করেছেন এবং যুক্তির কোনও ধার ধারেননি। ২০২৫ এ দাঁড়িয়ে এই মান্ধাতার আমলের প্রেমের গল্প কেন দেখবে কেউ সেটাই বুঝতে পারলাম না। বিক্রান্ত মাসের মতো অভিনেতা কেন এই ছবিকে হ্যাঁ বললেন সেটাও বোধগম্য হলো না। এর থেকে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য রাস্কিন বন্ডের গল্প যা থেকে এই ছবি অনুপ্রাণিত।
এই গল্প শুরু রেল গাড়িতে। সাবা নামক এক উঠতি অভিনেত্রী মুসৌরি যাচ্ছেন অডিশন দিতে। এবং তিনি দৃষ্টিহীনের চরিত্রে অভিনয় করবেন বলে মেথড অ্যাকটিং এর আশ্রয় নিয়েছেন প্রস্তুতির জন্য। সেটা কি? তিনি সব কাজ করবেন চোখে কাপড় বেঁধে। সামনের সিটে এক যুবক, নাম জাহান। সে মিউজিশিয়ান, তার চোখে কালো চশমা। এবার তাদের প্রেম হবে কি করে? তার জন্যই সঙ্গে সঙ্গে থাকা জরুরি। তাই তো মেয়েটির ম্যানেজার অনুপস্থিত, এবার জাহানের সঙ্গে ঝুলে পড়া ছাড়া সাবার আর কোনও উপায় নেই। চোখে কাপড় বাঁধা তাই স্টেশন থেকে বেরোনর সময় সাবার নাম লেখা নেমপ্লেট নিয়ে অপেক্ষারত মানুষটিকেও দেখতে পেল না সাবা।
প্রথম পনেরো-কুড়ি মিনিটে এটা দেখার পর আর বোঝার বাকি থাকে না, বাকি চিত্রনাট্যও চোখে পট্টি বেঁধেই লেখা হবে! ‘লাভ ইজ ব্লাইন্ড’ এই সংলাপ বেশ কয়েকবার আছে ছবিতে। মেকাররা বোধহয় ভুলে গিয়েছিলেন, সাবা আর জাহানের প্রেম করিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁরাও একেবারে অন্ধের মতো লজিককে এক্কেবারে ঝেঁটিয়ে বিদায় দিয়ে গল্প সাজিয়েছেন। বুঝতেই পারছেন, হোটেলে একটি ঘর ছাড়া সব ঘর ফুল থাকবে, নাহলে ওদের একসঙ্গে থাকা হবে না। এবং এও বুঝতে পারছেন, যেহেতু চোখে কাপড় বাঁধা এবং ছেলেটি সত্যিই দৃষ্টিহীন নাহলে হুমড়ি খেয়ে গায়ে পড়ে চুমু খাওয়ার জন্য কাছাকাছি আসা যাবে না। সবই পরিস্থিতি করিয়ে দেবে। নাহলে এরা আবার নিজে থেকে কিছু করে না।
ছয়, সাতের দশকের হিন্দি ছবির মতো এই ছবিতে প্রেমের পথে বাঁধা হল আত্মসম্মান, ইগো। যেদিন সাবা চোখের কালো পর্দা সরিয়ে জাহানকে দেখবে ঠিক করল সেদিন জাহান পালিয়ে গেল রিজেকশনের ভয়ে। তারপর তিনবছর পর আবার দেখা চান্স অ্যান্ড কো-ইন্সিসিডেন্টের উপর ভর করে। বুঝতেই পারছেন, সাবা ততদিনে অন্য পুরুষের বাগদত্তা। সাবা এবং জাহান নিজেদের প্রেমের জন্য কোনও দায়িত্বই নিজেরা নিয়ে উঠতে পারে না। প্রেমিক গ্রিন সিগন্যাল না দিলে সাবা, জাহানের কাছে যেতে পারবেন না। অন্যদিকে জাহান কিছুতেই নিজে থেকে সাবাকে তাঁর সঙ্গে যেতে বলেন না। বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাঁর আত্মসম্মান! প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টা ধরে এই দ্বন্দ্ব দেখতে খুব ক্লান্ত লাগে। অন্যান্য অসংগতির কথা আর নাই বা বললাম।
এমনকি বিক্রান্ত মাসের উপস্থিতিও হাস্যকর চিত্রনাট্য বাঁচাতে পারে না। আর শানায়া কাপুর? কেমন হলো তাঁর ডেবিউ? তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। আবেগের দৃশ্যে তিনি ভালো উতরেও গিয়েছেন। প্রথম ছবি হিসেবে বলাই যায় তিনি ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করেছেন । কিন্তু বাকি ছবিটা এমন নড়বড়ে হলে অভিনেতাদের গুস্তাখিয়া আর খুব একটা গায়ে লাগে না।