ভিড় এড়িয়ে, মাস্ক, স্যানিটাইজার ও সাবানের ব্যবহার বাড়িয়ে আমরা কি কমিয়ে দিতে পারি না নিজের ও অপরের জন্য করোনার সম্ভাব্য বৃদ্ধি?
মহামারী প্রসঙ্গে যত সাহিত্য প্রকাশিত হয়েছে, প্রায় ৬৭৭ বছর আগে লেখা জিওভান্নি বোকাচিয়ো-র ‘দ্য ডেকামেরন’ থেকে ওরহান পামুকের ‘দ্য নাইটস অফ প্লেগ’, গাব্রিয়েল গারসিয়া মার্কেসের ‘লাভ ইন দ্য টাইম অফ কলেরা’ থেকে আলবে্যর কামু-র ‘দ্য প্লেগ’– সব লেখাই একটি সত্য উচ্চারণ করেছে নানাভাবে– যে কোনও মারী-র সংক্রাম সবথেকে বড় আঘাতে হানে মানুষের স্বাভাবিক মেলামেশা, যৌথতা, উদ্যাপন ও উৎসবের উপর। যে কোনও মহামারী মানুষকে ক্রমাগত বলতে থাকে, ‘তফাত যাও’!
কামুর নোবেলজয়ী উপন্যাস শেষ হচ্ছে মহামারীর শেষে মানুষের ফিরে-পাওয়া সামাজিক নৈকট্য এবং উদ্যাপনের মধ্যে। আবার যেন শহরে ফিরে এল স্বাভাবিক ভিড়, আনন্দের আলিঙ্গন, মানুষে-মানুষে ঘেঁষাঘেঁষি। নিমেষে উবে গেল সংক্রমণের ভয় ও সামাজিক দূরায়ণ। উপন্যাসের একেবারে শেষে যেন কামুর কণ্ঠস্বরই শুনতে পাই আমরা। তিনি লিখেছেন, মানুষ কী সহজে ভুলে গেল মহামারীর দিনগুলো! কিন্তু সভ্যতা থেকে মহামারী চিরদিনের জন্য বিদায় নেয় না কখনও। তার অদৃশ্য ‘মাইক্রোব’ ঘুমিয়ে আছে রুমালে, জামার পকেটে, আলমারির অন্ধকার আনাচকানাচে এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের স্বাভাবিক সংসর্গে, সামাজিক যৌথতায়। সুতরাং মহামারী আবার ফিরে আসবে। আবার মানুষকে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে
নেমে মেনে নিতে হবে যন্ত্রণা ও দহন। এটাই জীবনের ‘অ্যাবসার্ডিটি’।
মহামারীর সঙ্গে আবারও এক লড়াইয়ের সময় বিশ্বজুড়েই ঘনিয়ে আসছে সম্ভবত। বাংলার কথাই ধরা যাক। ‘অ্যাকটিভ’ করোনা রোগীর সংখ্যা রাজ্যে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। অনেকেই অবশ্য প্রতিদিন সুস্থ হয়ে উঠছে। কিন্তু এই রোদ্দুরের উপর মেঘের ছায়াটা হল, প্রতিদিন নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির সংখ্যার চেয়ে বেড়ে চলেছে। সরকারি হিসাবে, এই মুহূর্তে রাজ্যে করোনায় চিকিৎসাধীন রোগী ৩৩১ জন। আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে কেরল, দিল্লির পরই বাংলা।
অথচ, ভিড়ে এখনও অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। স্যানিটাইজার ব্যবহারের সচেতনতা নেই। কারও মনে হচ্ছে না, যত দূরে সম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলাই ভাল। এটাও ঠিক, শহরবাসীদের পক্ষে কাজের দিনে ভিড় এড়ানো সম্ভব নয়। ট্রাম, বাস, ট্রেন, সর্বত্র, বাদুড়-ঝোলা ভিড়। কিন্তু তবুও মাস্ক ব্যবহার করলে অনেকটাই বাঁচা করোনা সংক্রমণ থেকে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার, এসব তো রয়েছেই।
করোনার বিরুদ্ধে সাবধানতা অবলম্বন শুধু নিজের জন্য নয়, অপরের জন্যও। অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই, অন্তত এ-দেশে, ‘অপর’-সংস্কৃতির প্রতি কোনও সচেতনটাই নেই। করোনা আরও ছড়িয়ে পড়ার আগে সামাজিক দূরত্ব বিষয়ে আরও সচেতন হতেই হবে যে!