বাঙালি-হয়রানি গুরুগ্রামেও! বিপাকে মালদহ, মুর্শিদাবাদের নির্মাণ শ্রমিকরা

বাঙালি-হয়রানি গুরুগ্রামেও! বিপাকে মালদহ, মুর্শিদাবাদের নির্মাণ শ্রমিকরা

স্বাস্থ্য/HEALTH
Spread the love


সংবাদ প্রতিদিন ব‌্যুরো: ভিনরাজ্যে বাংলাভাষীদের হয়রানির ঘটনা যেন কিছুতেই থামছে না। নতুন করে সামনে এসেছে হরিয়ানার গুরুগ্রামের ২৮ নম্বর সেক্টরের বাংলাভাষীদের উপরে নির্যাতনের অভিযোগ। ওই এলাকায় কোচবিহারের শীতলকুচির বহু পরিবার বসবাস করেন। রয়েছেন মালদহ, মুর্শিদাবাদের নির্মাণ শ্রমিকরা। অনেক মহিলা বিভিন্ন বাড়িতে, আবাসনে রাঁধুনির কাজ করেন। কেউ দিনমজুর কেউ বা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় কাজ করে জীবনযাপন করেন। অনেকেই বেশ কয়েক বছর ধরে রয়েছেন। কিন্তু এবার তাঁদের রীতিমতো পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ।

ওড়িশা, দিল্লিতে বেশ কিছুদিন আটক থাকার পর যাঁরা ফিরেছেন, তাঁদের আতঙ্ক এখনও কাটছে না। দাবি, কাউকে মারধর করা হয়েছে পুলিশ লকআপে। কাউকে খেতে দেওয়া হয়নি। মহারাষ্ট্র থেকে ফেরা হরিহরপাড়ার লোকজনের চোখেমুখে এখনও আতঙ্কের ছাপ। তাঁরা আর সেখানে কাজে ফিরতে চান না বলেই জানা যাচ্ছে। অভিযোগ, ওড়িশায় আটক করে রাখা হয়েছিল পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বেড়ো পঞ্চায়েতের রাইডি গ্রামের ছয় শ্রমিককে। বাংলাদেশি রোহিঙ্গা বলে অভিযুক্ত করে আটকে রাখা হয় তাঁদের। শেষ পর্যন্ত ছাড়া পেয়ে তাঁরা বাড়ি ফিরেছেন। তাঁদেরও পুলিশ থানায় না নিয়ে গিয়ে স্থানীয় একটি ক্লাবে আটকে নির্যাতন করে বলে অভিযোগ।

এদিকে গুরুগ্রামের ঘটনায় উদ্বেগে শীতলকুচির শ্রমিকদের পরিবারগুলি। সেখানে যাঁর মাধ‌্যমে কাজে গিয়েছেন গোলেনাওহাটি-সহ সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা, পুলিশ তাঁকে একাধিকবার ডেকে পাঠিয়েছে। নির্দেশ দিয়েছে, যত বাসিন্দা সেখানে বাংলাভাষী রয়েছেন তাঁদের থানায় নিয়ে এসে ভেরিফিকেশন করাতে হবে। তবে তাতে আবার ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড থাকলে চলবে না বলে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে রেশন কার্ড, বাড়ির পুরনো দলিলের মতো নথিপত্র চাওয়া হচ্ছে পুলিশের পক্ষ থেকে। স্বাভাবিকভাবে অসহায় সেই ব্যক্তিদের পরিবার চরম মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে পড়েছেন। এই ধরনের বেশ কিছু পরিবারের সদস্যরা ইতিমধ্যে কোচবিহারের প্রাক্তন সাংসদ তথা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিগমের চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সেই ব্যক্তিদের যাতে গুরুগ্রাম পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচানো যায় তার জন্য গোটা বিষয়টি দলীয় স্তরে জানানোর সঙ্গে জেলা প্রশাসন কেউ জানানোর পরিকল্পনা পার্থপ্রতিম রায় নিয়েছেন। তবে তাতেও উদ্বিগ্ন পরিবারগুলি যেন আশ্বস্ত হতে পারছে না।

উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিগমের চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায় জানাচ্ছেন, “কোচবিহার জেলার শীতলকুচি ব্লকের বেশ কিছু মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দিল্লির অদূরে হরিয়ানার গুরুগ্রামে শ্রমিকের কাজ করেন। তাদের মধ্যে একজন আমায় ফোন করে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বলে বাংলাদেশী সন্দেহে তাদেরকে থানায় তলব করছে। ভোটার কার্ড, আধার কার্ড দেখানো সত্ত্বেও তাদের হয়রানি বন্ধ হচ্ছে না। পুলিশ তাদের বলছে, এসব জাল। বাড়ি থেকে রেশন কার্ড না হলে পুরনো জমির কাগজ নিয়ে আসার ফরমান দিচ্ছে। তারা সকলেই উদ্বিগ্নে। আমি তাঁদের অনেককেই ব্যক্তিগত ভাবে চিনি। তাঁরা কেউ রাজবংশী, কেউ বা মুসলমান ভূমিপুত্র। আমি তাঁদের সমস্ত তথ্য নিয়ে প্রশাসনের দারস্থ হবো। প্রয়োজনে দলের সঙ্গে কথা বলে গুরুগ্রামেই পৌঁছব।’’

শীতলকুচির বাসিন্দা শফিকুল মিয়া দীর্ঘদিন থেকে সেখানে বসবাস করছেন। তাঁর অধীনে প্রায় ৪০০ ব্যক্তি সেখানে থেকে বিভিন্ন ধরনের দিনমজুরির কাজ করেন। সেই শফিকুল ফোনে জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরেই পুলিশ তাঁকে ডেকে পাঠাচ্ছে এবং যে সমস্ত কোচবিহার জলপাইগুড়ি, মালদা মুর্শিদাবাদের মতো জেলা থেকে বাংলাভাষীরা সেখানে রয়েছেন তাদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ডের মতো তথ্য জমা করতে বলছে। কিছু ক্ষেত্রে বাড়ির দলিল নিয়ে আসতে বলা হচ্ছে। ফলে ওই পরিযায়ী শ্রমিকরা উদ্বিগ্ন হয়ে রয়েছেন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *