বাঘবন্দি করে রেডিও কলার পরানোর অনুমতি মেলেনি, জিনাত সঙ্গী দলমাতেই!

বাঘবন্দি করে রেডিও কলার পরানোর অনুমতি মেলেনি, জিনাত সঙ্গী দলমাতেই!

জ্যোতিষ খবর/ASTRO
Spread the love


সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: প্রায় ২ মাস পার। দেখা মিলছে না পদচিহ্নর। তাই শেষ দেড় মাস উদ্বেগের শেষ ছিল না বাংলা-ঝাড়খণ্ড বনবিভাগের। খানিকটা চিন্তায় ছিল ঝাড়খণ্ডের পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষও। কিন্তু এপ্রিল শেষে জানা গেল জিনাত সঙ্গী রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ঝাড়খণ্ডের দলমা পাহাড়ের জঙ্গলেই রয়েছে। এই তথ্যে সিলমোহর দিয়েছে পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষই। গত ডিসেম্বরের শেষে পালামৌ থেকে ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার চলে এলেও ওই ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে রয়েছে। তাই ঝাড়খণ্ড বনবিভাগ চাইছিল, জিনাত সঙ্গীকে বন্দি করে রেডিও কলার পরাতে। এই মর্মে ঝাড়খণ্ড বনবিভাগ ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটিকে চিঠি লিখেছিল। কিন্তু দু’মাস পার হয়ে গেলেও সেই চিঠির কোন উত্তর আসেনি। ফলে পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারছে বাঘবন্দির বিষয়ে অনুমতি নেই ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটির। পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর প্রজেশকান্ত জেনা জানান, “ওই বাঘকে বন্দি করার বিষয়ে কোন অনুমতি মেলেনি। ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার দলমা পাহাড়ের জঙ্গলেই রয়েছে।”

কিন্তু প্রশ্ন এই গ্রীষ্মে রুখাশুখা মাটিতে যেখানে বাঘের পদচিহ্ন মিলছে না। সেখানে পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ কীভাবে নিশ্চিত হল ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার দলমা পাহাড় রেঞ্জেই রয়েছে। আসলে বাঘের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বাঘের খুঁটিনাটির বিষয়ে কিছু বলতে চায়নি ঝাড়খণ্ডের পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। তবে এখন লাখ টাকার প্রশ্ন এটাই জিনাত সঙ্গী কি আদৌ পালামৌতে ফিরবে? দলমা থেকে পালামৌ আসার মাঝে বেশ কিছুটা অংশ লোকালয় পড়ে গিয়েছে। সেই কারণেই ওই পথ এড়াচ্ছে জিনাত সঙ্গী। পালামৌ থেকে ওই লোকালয় পথ দিয়ে কোনভাবে চলে এলেও এখন আর ফিরতে চাইছে না। এমনটাই মনে করছে পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।

ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে মার্চের প্রায় প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলা-ঝাড়খন্ডে রয়্যাল বেঙ্গলের পদচিহ্ন মিললেও তারপর থেকে শুকনো মাটিতে বাঘের পায়ের ছাপ কিছুতেই বুঝতে পারছে না বনবিভাগ। এরপর টানা বৃষ্টি না হলে বাঘের পায়ের ছাপ বোঝা খুবই মুশকিল। ফলে গত দু’মাসে ঝাড়খণ্ডের দলমা থেকে ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি হয়ে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে প্রবেশ করেনি এ বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারছে না পুরুলিয়ার কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগ।

তবে পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ঝাড়খণ্ডের বনবিভাগের মতোই কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগ জিনাত সঙ্গী নিয়ে নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে। বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড় বাঘের থাকার পক্ষে আদর্শ হলেও ঝাড়খণ্ডের দলমা পাহাড়ের মতো একেবারে নিরাপদ নয়। গুল্ম জাতীয় গাছ এখানে না থাকায় বাঘ জঙ্গলের মধ্যে নিজেকে আড়াল করে রাখতে পারছে না। ঝরা পাতার মরশুমে যা আরও সমস্যার হয়। তাই জিনাত সঙ্গীর টেরিটরি ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলে আগুন লাগলেও দলমার একেবারে কোর এলাকায় নিজেকে কার্যত আটকে রাখে! দলমা পাহাড় এলাকায় প্রচুর পাহাড়ি ঝোরা থাকায় সেখানে পানীয় জলের কোন সমস্যা হচ্ছে না। রাইকা পাহাড় এলাকায় দলমার বিপুল সংখ্যক জলের ব্যবস্থা নেই।

একটি চেক ড্যাম, কয়েকটি পুকুর থাকলেও তা লোকালয় ঘেঁষা। তাই দলমা- কাঁকড়াঝোড়-রাইকা করিডরে এখন সেভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে না ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। পুরুলিয়ার বান্দোয়ান ও ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি- কাঁকড়াঝোর এলাকায় জিনাত সঙ্গীর ছবি ট্রাপ ক্যামেরায় কয়েকবার ধরা পড়লেও ঝাড়খণ্ডে ধরা পড়েছে বহুবার। তবে নজরদারি চলছেই ঝাড়গ্রাম ও কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের। যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্য সহ বন কর্মীরা মাঝেমধ্যেই রাইকা পাহাড় এলাকায় ট্র্যাপ ক্যামেরা খুলে কোন ছবি ধরা পড়েছে কিনা তা দেখে আবার সেই ক্যামেরা যথাস্থানে লাগিয়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি বাঘের টেরিটরিতে বান্দোয়ান এলাকায় সেন্দ্রা পরব থাকায় খানিকটা চিন্তায় ছিল বনবিভাগ। কিন্তু ওই পরব একেবারে সুষ্ঠুভাবে পার হয়। ডিসেম্বরের শেষ থেকে ঘরছাড়া ওই রয়্যাল বেঙ্গল। এই বাঘটি অতীতে ছত্তিশগড়ও গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। ভবঘুরে এই বাঘকে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করে তার গলায় রেডিও কলার পড়াতে চেয়েছিল ঝাড়খন্ড বনবিভাগ। কিন্তু ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটির কোন অনুমতি না মেলাতেই ভবঘুরে জিনাত সঙ্গী যথারীতি দলমাতেই চড়কিপাক খাচ্ছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *