বাগদেবীর প্রশ্রয়ে মিষ্টি মুহূর্তের ভিড়ে

বাগদেবীর প্রশ্রয়ে মিষ্টি মুহূর্তের ভিড়ে

ব্লগ/BLOG
Spread the love


চিরদীপা বিশ্বাস
(প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, কোচবিহারের বাসিন্দা)

প্রাইমারি, হাইস্কুল আর কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে এবার ইউনিভার্সিটি লাইফেরও এক্কেবারে শেষ লগ্নে। ছাত্রজীবনের সেরা উৎসব কড়া নাড়ছে, যাকে কেন্দ্র করে অন্যান্য জেনারেশনের মতো আমরাও বুঝতে শিখছি ‘বড় হওয়া কারে কয়’। নিজের জন্য কেনা হলুদ শাড়ি পরে বাবার হাত ধরে ঘোরাটা বদলে গিয়েছে মায়ের কালেকশনের সেরা কোনও একখানা শাড়ি পরে বন্ধু বা প্রিয়জনের সঙ্গে বেরোনোতে।

আমার মতো প্রবাসী কারও কারও তো আবার পর্যাপ্ত ছুটি অমিল। অতএব ছোট্টবেলার স্কুল-কলেজের মজা, পুরোনো বন্ধুদের রিইউনিয়ন মিস করার আফসোস। অন্যদিকে, নতুন প্রতিষ্ঠানের নতুন বন্ধুদের সঙ্গে নব অভিজ্ঞতার দরজা খোলা। এভাবেই বছর বছর বীণাপাণির আরাধনার চালচিত্রে রঙের বদল ঘটে চলেছে।

তবে এতকিছুর মাঝে স্কুলজীবনটা এক উজ্জ্বলতম অধ্যায়। পুজো পরিকল্পনা থেকে শুরু করে অন্য বিদ্যালয়ে কার্ড বিলি, পুজোর আগের দিন ম্যাডামদের সঙ্গে হইহই করে বাজার করা, ঠাকুরের বাসন মাজা, আলপনা আঁকা, রাতভর ডেকোরেশনের কাজ ও নাচতে নাচতে প্রতিমা আনতে যাওয়া- এরকম কত্ত কী। অদ্ভুতভাবে এইসময় সবথেকে রাগী দিদিমণিটাও যেন বন্ধু হয়ে যান। কে জানে, নিজের স্কুলবেলার স্মৃতিতে হারিয়ে যান হয়তো। পুজোর সকালের জোগাড়, অঞ্জলি, সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠান এবং সবশেষে প্রসাদ খাওয়া- সবমিলিয়ে একটা উৎসবের আমেজ। বই-খাতা ছোঁয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।

কলেজ, ইউনিভার্সিটি আবার এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। শাসনের চোখরাঙানি-টাঙানির লেশমাত্র নেই। সরস্বতীপুজোর ওই একটা দিন বালকদিগের অবাধ প্রবেশের অনুমতি থাকে বালিকা বিদ্যালয়ের চৌহদ্দিতে। এগজিবিশনের ছবি দেখার অছিলায় সদ্য টিনএজ চোখ তখন অন্য কাউকে খুঁজতে ব্যস্ত। কিন্তু এই লুকোচুরি, ভয়ে দুরুদুরু বুক কলেজজীবনে ফুলেফেঁপে এক্কেবারে বত্রিশ ইঞ্চি। শাড়ি-পাঞ্জাবির রংমিলান্তি তখন তারা শিখে যায়। বুঝে যায় ১৪ ফেব্রুয়ারি নয়, বরং বাঙালির প্রেম দিবস তো এই দিনটাই।

স্কুলজীবনের ‘আজ আড়ি, কাল ভাব’ বদলে তখন গলায় ‘প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া’র সুর। সেলফি, রিলের কোলাজে ভরে ওঠে ইনস্টা। বছরকয়েক আগেও ভোগের খিচুড়ির জন্য ফ্যা ফ্যা করা সেই ‘একুশ বছর’ বা ‘অষ্টাদশী ছোঁয়া’য় ধরা পড়ে যাওয়ার লজ্জা বা ভয় আগে থেকে অনেকটা কম।
তাই বাইকে চড়ে বিন্দাস দুজনে রেস্তোরাঁয় মধ্যাহ্নভোজন সারে। এককালের কোনও এক বাংলা মিডিয়াম বয়েজ স্কুল সদর্পে ইংলিশমিডিয়াম ‘ম্যাডাম’কে ফুল দিয়ে মনের কথা জানানোর জন্য ইউনিভার্সিটিকে স্থান আর বসন্তপঞ্চমীকেই কাল হিসেবে নির্বাচন করে। এসব দেখে আবার বলিউডের ভাইজানকে নিজের আইডল বানানো কেউ কেউ আক্ষেপ করে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে ‘এবারেও হল না রে’।

এভাবেই আমরা বড় হয়ে উঠছি- বাগদেবীর প্রশ্রয়ে, কিছুটা নস্টালজিয়ায় আর অনেকখানি বদলে যাওয়ায়। হরির লুটের বাতাসার মতো আজকাল এদিক-ওদিক ‘ক্রাশ’ ছড়িয়ে রয়েছে এবং এই জেনারেশন খেয়েও ফেলছে টপাটপ। সারদা আরাধনার সঙ্গী আজকাল শারদীয়া পর্যন্ত টিকলেও ‘বাপরে, বিরাট ব্যাপার’। তাই এবারে বিদ্যাবুদ্ধির দেবী, যাকে কিনা আমরা প্রেমের দেবীও বানিয়ে ছেড়েছি, জ্ঞানের পাশাপাশি সব্বাইকে আরও খানিকটা অপরকে বোঝার ক্ষমতা দিক।

ক্ষমতা দিক- অন্যকে শোনার, জানার চেষ্টা করার, সত্যিকারের ভালোবাসতে পারার। শুধুই প্রেমের নয় বরং যে কোনও সম্পর্কে যেন বিশ্বাসের ভিতটা শক্ত থাকে। ভুল করলে ক্ষমা চাওয়ার মুরোদ থাকে। ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করার ইচ্ছে থাকে। আর গেয়ে ওঠার সাহস থাকে, ‘‘অবশেষে ভালোবেসে ‘থেকে’ যাব…’’।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *