‘বাংলা বিরোধী’ কেন্দ্র, চলতি সপ্তাহে রেলের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না মুখ্যমন্ত্রী

‘বাংলা বিরোধী’ কেন্দ্র, চলতি সপ্তাহে রেলের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না মুখ্যমন্ত্রী

বৈশিষ্ট্যযুক্ত/FEATURED
Spread the love


অপরাজিতা সেন: আগামী শুক্রবার, ২২ আগস্ট দমদমে মেট্রো রুটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলের আমন্ত্রণে সাড়া দিচ্ছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নীতিগত কয়েকটি কারণে অনুষ্ঠানে যাবেন না তিনি। রেল সূত্রে বলা হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও রেলের ওই উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে থাকবেন। কিন্তু রবিবারের খবর, মুখ্যমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেলের অনুষ্ঠানে না যাওয়ার পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কাজ করছে। সেগুলি হল –

প্রথমত, বাংলা ভাষা ও বাংলাভাষী ভারতীয় বাঙালিদের উপর ভিনরাজ্যে ভাষাসন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে বিজেপি তথা কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন সরকারের মদতে। এর প্রতিবাদে চলছে আন্দোলন। এই পরিস্থিতিতে ওই কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তাদের সঙ্গে একাসনে বসতে চান না মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার প্রতি আর্থিক বঞ্চনার পাশাপাশি এখন ভাষাসন্ত্রাস চলছে কুৎসিতভাবে।

দ্বিতীয়ত, রেলের এই প্রকল্পগুলি সবই রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনা করা। অর্থ বরাদ্দও তিনিই করেছিলেন। এতদিন ধরে ঢিলে গতিতে কাজ করে এখন ভোটের আগে উদ্বোধন করে নিজেদের নাম লেখাতে চাইছে বিজেপি। সেখানে স্রেফ একটা চিঠি পাঠিয়ে রুটিন আমন্ত্রণ করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। বাংলায় রেলের অনেক বড় বড় কাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন। মানুষ সেসবের সুফল পাচ্ছে। আবার তাঁর শুরু করা বহু প্রকল্প কেন্দ্রের দোষে বাংলা বিরোধী চক্রান্ত-সহ একাধিক আপত্তিকর ঘটনার জেরে নষ্ট হয়েছে। এখন তাঁর সময়ে শুরু কিছু কাজ, এতদিন দেরির পর ভোটের আগে উদ্বোধন করাচ্ছে বিজেপি।

তৃতীয়ত, এর আগে সাংবিধানিক পদকে সম্মান দিয়ে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বিজেপি সমর্থকরা সেখানে সরকারি অনুষ্ঠানেই পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খল, অপমানজনক আচরণ করেছিলেন। যে অনুষ্ঠানে যেটা মানানসই নয়, সস্তা রাজনীতি করতে গিয়ে সেসবই করেছিল বিজেপি। এরা জানে না কোন অনুষ্ঠানে কী রীতি। ফলে তাদের নতুন করে সেই ধরনের আপত্তিকর, নিন্দনীয় কাজের সুযোগই দেওয়া হবে না।

বস্তুত, বাংলার বিরুদ্ধে বিজেপির যাবতীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চক্রান্ত এখন সব সীমা লঙ্ঘন করছে। বাংলায় যেহেতু ওরা ভোটে পরাজিত হয়, তাই বাংলাকে বঞ্চনা, প্রাপ্য টাকা বন্ধ, এসব বিভিন্ন প্রতিহিংসাপরায়ণ পদক্ষেপ তো ছিলই; এখন যোগ হয়েছে বাংলা ভাষার প্রতি সন্ত্রাস। বাংলা বললেই তাঁকে ‘বাংলাদেশি’ বলে দেওয়া হচ্ছে।

অনুপ্রবেশ রোখার দায় কেন্দ্রের, অথচ নির্মমভাবে হয়রান করা হচ্ছে বাংলাভাষী ভারতীয় বাঙালিদের। এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকার যা করণীয় করছে। তৃণমূল কংগ্রেস সংসদে এবং রাজপথে আন্দোলনে। এমন পরিস্থিতিতে রেলের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিজেপির চিত্রনাট্যে অন্তর্ভুক্ত হবেন না বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাছাড়া রেলমন্ত্রী হিসাবে তিনি বাংলাকে যা দিয়ে গেছেন, সেই দীর্ঘ তালিকাই নজিরবিহীন। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পাহাড়-ডুয়ার্স থেকে সাগর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যত নতুন রেল, নতুন রুট, নতুন লাইন, নতুন স্টেশন, নতুন প্রকল্প দিয়েছেন, এত কর্মসংস্থান করেছেন, যা এক দৃষ্টান্ত। এখন তাঁরই শুরু করা প্রকল্পে, বরাদ্দ করা টাকায় এতকাল পর যদি বিজেপি ভোটের মুখে উদ্বোধন করে নিজেদের নাম লেখানো ফলক বসাতে চায়, সেটা বিশুদ্ধ কৌশলী সংকীর্ণ রাজনীতি। মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানে যাবেন না। তৃণমূল কংগ্রেস সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে প্রচার করে বাস্তব তুলে ধরবে। কমবয়সিদের কাছে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপুল কাজের বহর তুলে ধরবে। শুধু এই এলাকাই নয়, রেলমন্ত্রী হিসাবে তিনি গোটা বাংলার সব জেলার জন্য যে ঢালাও কাজ করে গেছেন, তা নিয়ে আরেক দফা প্রচার করবে দল।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *