বাংলার বাস্তব

বাংলার বাস্তব

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


হিন্দু দেবীর ছোঁয়া কালীগঞ্জের নামে। কিন্তু হিন্দুত্বের আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করল কালীগঞ্জ। বাস্তব হল, দেবী কালী যে বিধানসভা কেন্দ্রের নামের সঙ্গে জড়িয়ে, সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অহিন্দুর বসবাস। সেই অহিন্দুরা মূলত ইসলাম ধর্মাবলম্বী। কথায় কথায় যে সম্প্রদায়ের মানুষকে জেহাদি, মৌলবাদী, জঙ্গি ইত্যাদি বলে দেগে দেওয়া হয়। কখনও পরোক্ষে, কখনও সরাসরি এই ধর্মসম্প্রদায় বিজেপির কটাক্ষের মুখে পড়ে। খোদ প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত লুঙ্গি পোশাক নিয়ে কটাক্ষ করেন।

ভোটের রাজনীতিতে পশ্চিমবঙ্গে মেরুকরণ আগে কখনও ছিল না, তা নয়। সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক তৈরি করে রেখেছিল কংগ্রেস। এখনও মালদা, উত্তর দিনাজপুর ও মুর্শিদাবাদের সংখ্যালঘুদের একাংশ ‘হাত’ প্রতীকে আস্থা রাখে। বাম জমানায় আবার কিছু এলাকায় সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক তৈরি করে রেখেছিল সিপিএম। তৃণমূল ওই দুই দলের সংখ্যালঘু সমর্থনকে অনেকটা তছনছ করে নিজের ভোটব্যাংককে শক্তপোক্ত করে ফেলেছে।

মেরুকরণের চেষ্টা করে বিজেপি প্রকৃতপক্ষে আরও বেশি করে মুসলিম ভোটকে ঘাসফুলের আশ্রয়ে ঠেলে দিয়েছে গত কয়েক বছর ধরে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা দখলের মরিয়া চেষ্টায় মেরুকরণকে যত বেশি আঁকড়ে ধরছে বিজেপি, তত তৃণমূলের সংখ্যালঘু সমর্থন মজবুত করছে। বাংলার মাটিতে একবগ্গা মেরুকরণ যে পদ্মের চাষ বাড়াবে না, তা আরও স্পষ্ট করে দিল কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলাফল।

উপনির্বাচন সাধারণত শাসকদলের অনুকূলে যায়, এরকম একটা ধারণা আছে বটে। কিন্তু সবসময়ই যে তা সঠিক নয়, দেশের বেশ কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রের সদ্য উপনির্বাচনে তা স্পষ্ট হয়ে গেল। গুজরাটে আপ জয়ী হয়েছে। কেরলে শাসক সিপিএমকে হারিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। ২০২৪-এর পর বাংলায় যে ১১টি উপনির্বাচন হয়েছে, তার প্রত্যেকটি অবশ্য তৃণমূলের দখলেই গিয়েছে। সেটা শুধু শাসকদল হওয়ার সুবাদে বলাটা অতি সরলীকরণ হয়ে যাবে।

বিজেপি প্রচার করে থাকে, হিন্দু ভোটকে এককাট্টা করা গেলে বাংলার মসনদ দখল শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সেই প্রচারটাকেও ধাক্কা দিয়ে গেল কালীগঞ্জ। মোথাবাড়ি, সামশেরগঞ্জ বা মহেশতলা পরবর্তী পরিস্থিতিতে এই প্রচারটাকে তুঙ্গে তুলেছিল বিজেপি। বিশেষ করে িবধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলতে শুরু করেছিলেন, আর ৪-৫ শতাংশ হিন্দু ভোট পেলে বিজেপির জয় অবধারিত। কালীগঞ্জ সেই ধারণাটির মূলে কুঠারাঘাত করেছে। বরং অতি মেরুকরণের ধাক্কায় কালীগঞ্জে পদ্মের ভোট কমে গিয়েছে প্রায় ৩ শতাংশ।

মেরুকরণের ধাক্কায় উলটে তৃণমূলের ভোটপ্রাপ্তির হার বেড়েছে। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে কালীগঞ্জে তৃণমূলের ঝুলিতে ছিল ৪৬.৮৪ শতাংশ। সদ্য উপনির্বাচনে সেই হার বেড়ে হয়েছে ৫৫.১৫। অর্থাৎ মাত্র এক বছরে বৃদ্ধি হয়েছে ৮.৩১ শতাংশ। বাম-কংগ্রেস সামান্য ভোট বাড়িয়েছে বটে। কিন্তু তৃণমূলের জয়যাত্রায় কাঁটা বিছাতে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ভাবনা ও ভোট-রাজনীতির চরিত্র বুঝতে না পারার জন্যই বিজেপির এই হাল সন্দেহ নেই।

মুসলিম ভোটকে এড়িয়ে যাওয়া এক জিনিস। কিন্তু ভোটে মুসলিম বিদ্বেষকে উসকে দেওয়া আরেক জিনিস। শুধু মুসলিমদের বাদ দিয়ে রাজনীতি করলে তৃণমূলের ভোটব্যাংক এত শক্ত হত না। বিভাজনের রাজনীতি একদিকে মুসলিম ভোটকে পুরোপুরি বিজেপির শত্রু করে তুলছে। অন্যদিকে, গোটা হিন্দু ভোটকে এক ঝুলিতে ভরতে পারছে না। বরং হিন্দু ভোটের একাংশকেও বিক্ষুব্ধ করে তুলছে।

হিন্দু ভোট ধরে রাখতে তৃণমূলও মেরুকরণ করছে। দিঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ ও বিভিন্ন পুজো, ধর্মীয় মেলায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা সেই মেরুকরণের অঙ্গ। সেই প্রয়াস ততটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া ডেকে আনছে না তৃণমূল মুসলিমদের সম্পর্কে সহনশীল বলে। সেই সহনশীলতা বাম ও কংগ্রেসেরও আছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে তৃণমূলকেই আঁকড়ে ধরছেন সংখ্যালঘুরা। উলটোদিকে হিন্দু ভোট বিজেপির পতাকা তলে এককাট্টা হচ্ছে না। কালীগঞ্জ সেটা আবার বুঝিয়ে দিল।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *