অর্পণ দাস: ফুটবল এবং টুটু বোস সমার্থক। মোহনবাগানকে যেমন নিজ হাতে মানুষ করেছেন, তেমনই বাংলার ফুটবলের উন্নতিতেও এগিয়ে এসেছেন বারবার। ৭৭ বছরে এসেও এখনও অটুট সেই উদ্যম। বাংলার ফুটবলের উন্নতিতে টুটু বোসের স্বপ্নের প্রকল্পের উদ্বোধন হয়ে গেল রবিবার। অ্যাকাডেমিটি গড়ে উঠেছে দক্ষিণেশ্বর ইয়ং মেনস অ্যাসোসিয়েশন এবং ভবানীপুর ক্লাবের যৌথ উদ্যোগে। দক্ষিণেশ্বরে এই ক্রীড়া অ্যাকাডেমির উদ্বোধন করলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র, পৌরপ্রধান গোপাল সাহা, ফুটবলার কার্তিক শেঠ, কুণাল ঘোষ, নবাব ভট্টাচার্য, অয়ন চক্রবর্তী, অঞ্জন পাল, সুশান্ত চ্যাটার্জি (ডিওয়াইএমএ) প্রমুখ।
অ্যাকাডেমির প্যাভিলিয়নের নামকরণ হয় স্বপনসাধন (টুটু) বোসের নামে। ২০২৪ সালের পয়লা বৈশাখ শুরু হয়েছিল এই অ্যাকাডেমির পথ চলা। এরপর বিভিন্ন জায়গায় প্র্যাকটিস করত এই অ্যাকাডেমির খেলোয়াড়রা। প্রো ইন্ডিয়ার সঙ্গে মিলিতভাবে অনুশীলন করতে দেখা গিয়েছে তাদের। তাছাড়াও লা লিগার সঙ্গে টেকনিক্যাল চুক্তিও রয়েছে ভবানীপুর স্পোর্টস অ্যান্ড ইয়ুথ ফাউন্ডেশন। আন্ডার ১৪ লা লিগা চ্যাম্পিয়ন এই ভবানীপুর। দক্ষিণেশ্বর ইয়ং মেনস অ্যাসোসিয়েশন এবং ভবানীপুর, দু’টো শতবর্ষ অতিক্রান্ত ক্লাবের উদ্যোগে দক্ষিণেশ্বরে গড়ে উঠবে মাঠ। আর সেই উদ্দেশ্যে মাঠের চারদিকে পাঁচিলও তোলা হয়েছে। এই মাঠেই হবে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক পর্যায়ের অনুশীলন। অনূর্ধ্ব ১২, ১৪ এবং ১৬ দলের খেলাও হবে এখানে। সমস্ত রকম টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেবে ভবানীপুর।
রবিবার অনুষ্ঠানে অরূপ বিশ্বাসকে উত্তরীয় দিয়ে বরণ করে নেন সৃঞ্জয় বোস ও সুশান্ত চ্যাটার্জি। রাতুল সরকার ও সুরজিৎ বোস বরণ করে নেন টুটু বোসকে। তাছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত অতিথিদের দেওয়া হয় ভবতারিণী মায়ের প্রসাদ, মন্দির প্রতিকৃতি, মায়ের ছবি। সাংসদ থাকাকালীন কুণাল ঘোষ তাঁর সাংসদ তহবিল থেকে ১৮ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন মাঠের উন্নতির জন্য।
ঘটনাচক্রে এদিন ছিল টুটু বোসের বিবাহবার্ষিকী। এমন বিশেষ এক দিনে তাঁর স্বপ্নের অ্যাকাডেমির উদ্বোধন। মঞ্চ থেকে টুটু বোস বলেন, “আমি খেলতে পারলে কিক করতে পারতাম। ছ’বছর ফিফায় ছিলাম। ফিফায় যা বলেছি, এখানে তা করছি। ক্যাচ দেম ইয়ং। ছোট থেকে না হলে বড় প্লেয়ার হবে না। তৃণমূল স্তর থেকে খেলোয়াড় তুলে আনতে হবে। সেই কারণে প্রত্যেক রাজ্যে অ্যাকাডেমির দরকার। ফিফায় যেটা আমি চেয়েছিলাম, দক্ষিণেশ্বর ইয়ং মেনস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে ভবানীপুর ক্লাব গাঁটছড়া বেঁধে সেটাই করেছে। আমার তো স্বভাবই গাঁটছড়া বাঁধা। মোহনবাগানে করেছি। এখন তার ফল পাচ্ছে দল।”
মোহনবাগান সচিব সৃঞ্জয় বোসের কথায়, “২৯ জুন এই অ্যাকাডেমির উদ্বোধন হল। আমাদের মা-বাবার বিবাহবার্ষিকীর দিন এটা। মা থেকে দেখে যেতে পারলে খুশি হতেন। ছোটবেলা থেকে ফুটবলের সঙ্গে নাড়ির যোগ। ফুটবলকে কিছুটা ফেরত দিতে পারলাম। তবে এখনও কাজ বাকি। তার মধ্যে রয়েছে মেদিনীপুরে রেসিডেন্সিয়াল অ্যাকাডেমি। আরও অনেক কিছু ইচ্ছা রয়েছে। কিন্তু আরও কিছু করতে ইচ্ছা ও অর্থ দু’টোই দরকার। সবাই পাশে থাকুন। এখানে এমন কিছু করতে হবে, যাতে দুই ক্লাবই বলতে পারে এটা আমাদের গর্বের জায়গা। ডিওয়াইএমএ সব সময় সঙ্গে আছে। সবার প্রচেষ্টায় এই গাঁটছড়া সফল হবে।”
এরপর অ্যাসোসিয়েশনের লোগো উদ্বোধন করেন অরূপ বিশ্বাস ও স্বপনসাধন বোস। পুজোর পর জেলা ওমেনস লিগ এখানে করতে চান বলে জানান নবাব ভট্টাচার্য। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, “মা-বাবার বিবাহবার্ষিকীতে এমন একটা অনুষ্ঠান করে এমন ফুটবল আর ক্রিকেট তৈরির কারখানার শুরু করল টুম্পাই। আমার থেকে ছোট হলেও অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই। টুটুদা ফুটবলপাগল। এই প্রয়াস সার্থক হোক। মুখ্যমন্ত্রী ভবিষ্যৎ দেখতে পান। ৮টা অ্যাকাডেমি করেছি। বিভিন্ন খেলার অ্যাকাডেমি। অনূর্ধ্ব দলের প্লেয়ারদের অনেকেই এই অ্যাকাডেমি থেকে। তিরন্দাজ জুয়েল সরকার অ্যাকাডেমিরই ফসল। চেষ্টা করলে আরও অনেক প্লেয়ার উঠবে।”
তাঁর সংযোজন, “খেলাটা বিজ্ঞান। খেলোয়াড়দের নিজের জেদও দরকার। কোচ নির্বাচন সবার আগে। বেসিক ঠিক করতে হবে। সেই কারণে ভালো প্রশিক্ষক আনতে হবে। টুটুদা শুধু ময়দানে দিতে এসেছে। সন্তানের মতো বড় করেছেন মোহনবাগানকে। টুটু বোস সঙ্গে থাকলে নতুন কিছু হবেই। নিজেদের ফুটবলার তুলতে হবে। আমরাই পারব। কারওর দরকার হবে না। বাংলা তো এগিয়েছে। মোহনবাগান আইএসএল জিতেছে, ইস্টবেঙ্গলের মহিলা দল ভারত সেরা হয়েছে, বাংলা সন্তোষ জয় করেছে, ডায়মন্ড হারবার আই লিগে উঠেছে। ক্রীড়াখাতে ৮০ কোটির বাজেট তৃণমূলের সময়ে হয়েছে ৮০০ কোটি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। ৭৮টা নতুন স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে। কিন্তু সরকার তো আর খেলবে না। খেলবে প্লেয়াররা। মমতা থাকলে কারওর চিন্তা থাকবে না। সরকার পাশে থেকে এই অ্যাকাডেমিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। অ্যাকাডেমির সাফল্য কামনা করি। মা বাবার বিবাহ বার্ষিকীতে এমন একটা অনুষ্ঠান করে এমন ফুটবল আর ক্রিকেট তৈরির কারখানার শুরু করল টুম্পাই। আমার থেকে ছোট হলেও অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই।”
মদন মিত্রের মন্তব্য, “জন্মভূমি ভবানীপুর, ক্রীড়াভূমি দক্ষিণেশ্বর। অভিনন্দন জানাই সবাইকে। এই ক্লাবের প্রেসিডেন্ট, ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপকেও সাধুবাদ। ওর সিস্টেমের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সফল।” দক্ষিণেশ্বর ইয়ং মেনস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সুশান্ত চ্যাটার্জি বলেন, “দক্ষিণেশ্বর মাঠ ১৯২৫-এ শুরু। মদন ও কুণালকে ধন্যবাদ। ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, ক্রিকেট ও সাঁতারের দিক নিয়েও যেন পরিকল্পনা করা হয়।” কুণাল ঘোষের কথায়, “দক্ষিণেশ্বর মায়ের জায়গা। এখানে ফুটবলের জন্য মাঠ হচ্ছে। আমার রক্ত সবুজ-মেরুন। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল না থাকলে মোহনবাগান নেই। আবার উলটোটাও সত্যি। বিভিন্ন ক্লাবের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য তৃণমূল সরকার কাজ করছে। অরূপ বিশ্বাসের কথাতেও কাজ হয়েছে। দক্ষিণেশ্বরের মতো জায়গায় কাঠবিড়ালির ভূমিকা নিতে পারলেও গর্বিত।” এখানেই শেষ নয়, ভবিষ্যতে এখানে গড়ে উঠবে জিম। দক্ষিণেশ্বরে এই অ্যাকাডেমির মাধ্যমে ইতিহাস তৈরি হবে বলেও জানিয়েছেন টুটুবাবু।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন