আরবের ইতিহাসের আইয়্যামে জাহেলিয়াত এখন বাংলাদেশে। জুলাইয়ের পরপরই জাহেলিয়ার যুগে প্রবেশ করেছে তারা। সেখানে আওয়ামী লিগ নিষিদ্ধকরণ এবং মৌলবাদের উত্থান দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের জন্য বড় চিন্তার বিষয়। অধিক চিন্তা নারী স্বাধীনতা নিয়ে। ইউনূস শাসনামলের মাস না পেরোতেই নারী বিদ্বেষ অনেক বেশি বাড়তে শুরু করে। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ এবং নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ মহামারি রূপ নিয়েছে।
বাংলাদেশে চলতি বছরের এপ্রিলেই ৩৩২ জন নারী ও মেয়েশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১১ জন। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ ও হত্যার এমন চিত্র কোনও সভ্য রাষ্ট্রে হতে পারে না। পৈশাচিকতাকেও ছাড়িয়েছে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাসমূহ। বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনওভাবেই আইনের শাসনের ইঙ্গিত বহন করে না। মব সন্ত্রাস, মোরাল পুলিশিং এবং স্বেচ্ছাচারিতার চরম পর্যায়ে পর্যুদস্ত বর্তমান বাংলাদেশ। এর প্রধান শিকার স্বাধীনচেতা নারী ও বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী জনগোষ্ঠী। উগ্র ইসলামপন্থীদের দ্বারা নানা অঙ্গনে আক্রমণের শিকার হচ্ছে তারা। চলমান ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশে অঘোষিত তালিবানি রাষ্ট্র কাঠামোকেই প্রকাশ করছে। সবখানেই স্বঘোষিত তালিবানি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলছে মৌলবাদীরা।
সাম্প্রতিক এর বড় উদাহরণ সরকারের নারী কমিশন নিয়ে হেপাজত সহ সমমনা মুসলিম দলগুলোর বিরোধিতা এবং জনসমাবেশে মুক্ত নারীদের অকল্পনীয়ভাবে পতিতা ঘোষণা। সরকার যেসব কমিশন গঠন করেছে, তন্মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিটিতে ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল করে ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাবের ভেতর নারী কমিশন নিয়ে ভালো কিছুর আশাবাদী নন নারী অধিকারকর্মীরা। একে লোকদেখানো বলেই মনে করা হচ্ছে। সেটাকে আরও পরিষ্কার করে তুলেছে এরই বিরুদ্ধে মাঠে নামা সরকার-ঘনিষ্ঠ উগ্রবাদীদের সমাবেশ।
এসবের মধ্য দিয়ে তালিবানি কায়দায় ঘরবন্দির সকল আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। সেরূপ শাসন ব্যবস্থাও লক্ষ করা যাচ্ছে। এই তো নারী অধিকার নিয়ে কথা বলায় একজন নারী অধ্যাপক জনরোষের শিকার হয়েছেন। তথাকথিত সালিশি বৈঠকে তাঁকে পর্দাপ্রথায় বাধ্য করা হয়েছে। ‘এখানে নারী সাংবাদিক গ্রহণযোগ্য নয়’ উল্লেখ করে বিভিন্ন সময়েই ইসলামি দলগুলোর সভা, সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন থেকে নারী সাংবাদিকদের বের করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নারী পুলিশও মৌলবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের হাতেই হেনস্তার শিকার হচ্ছেন নারী শিক্ষকরা। পর্দা না করে আধুনিক পোশাক পরায় প্রকাশ্যে পেটানো হচ্ছে। পেশাজীবী নারীদের হেনস্তা ক্রমশই বেড়েছে। পোশাক সহ নানা অজুহাতে নারীকে নির্যাতনের চিত্র এখন অহরহ।
অপরাধগুলো সামাজিক কাঠামোর মধ্যে ঘটছে। সামাজিক মূল্যবোধ, নারীর প্রতি শ্রদ্ধা, সহনশীলতা, পারিবারিক বন্ধন দিন-দিন উগ্র ধর্মাশ্রয়ী হয়ে ওঠায় লোপ পেয়েছে। সভাসমাবেশ, ওয়াজ সহ অনলাইনে নারীকে হেয় করে বক্তব্যদান এবং বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করে যেভাবে নারীবিদ্বেষ বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে, তা নারীর সম্মানকেই খাটো করছে কিংবা জীবননাশের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তা পুরো সমাজ ও রাষ্ট্রকে অন্ধকার যুগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই প্রবণতার কোনও পরিবর্তন না হলে বাংলাদেশের নারীরা আফগানিস্তানের নারীদের মতোই বিশ্বের কাছে উদাহরণ হবে।
(লেখক বাংলাদেশের সাহিত্যিক)