কল্যাণ চন্দ, বহরমপুর: মাতৃভাষায় কথা বলাই যেন কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে মুর্শিদাবাদ-সহ বাংলার বেশ কয়েকটি জেলার যুবকদের। যাঁরা পেটের টানে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন ভিনরাজ্যে। অভিযোগ, কেবলমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্যই তাঁদের উপর নামিয়ে আনা হচ্ছে নিপীড়ন, চলছে পুশব্যাক করা কিংবা থানায় আটকে রেখে হেনস্তা।
আবারও বাংলাদেশি সন্দেহে মুর্শিদাবাদের ১৮ জনকে উত্তরপ্রদেশে বস্তি জেলার নগর থানায় তিনদিন ধরে আটকে রাখার অভিযোগ উঠল। তাঁরা প্রত্যেকেই পেশায় ভ্রাম্যমাণ পথব্যবসায়ী বা ফেরিওয়ালা। জানা গিয়েছে, আটক বহরমপুর থানার হালসাপাড়া এলাকার বাসিন্দা হজরত শেখ, শক্তিপুর থানার কাজিপাড়া এলাকার সাগর শেখ, লাহারপাড়া এলাকার আনিজুল শেখ, চৌরীগাছার কালিমউদ্দিন শেখ-সহ সালার থানা এলাকার মোট ১৮ জন ফেরিওয়ালা বিগত ২০-২৫ বছর ধরে ফেরি করে বেড়াচ্ছিলেন উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলায়। তিনদিন আগে ওই ফেরিওয়ালাদের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড দেখার পরেও তাঁদের আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। থানায় ওই ফেরিওয়ালাদের নিজেদের রান্না নিজেদেরই করে খেতে হচ্ছে। তাও ঠিকমতো জুটছে না। বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন ওই ফেরিওয়ালারা।
অভিযোগ, আটক শ্রমিকদের মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়েছে। একজন তার মধ্যেই অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল লুকিয়ে রেখে তাঁদের কাতর আবেদন ভিডিও রেকর্ড করে সংবাদ মাধ্যমকে পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে শক্তিপুর থানার হালসানা পাড়ার ফেরিওয়ালা ফজল শেখ বলেন, ‘‘আমাদের বৈধ আধার কার্ড, ভোটার কার্ড এমনকী প্যান কার্ড দেখানো সত্ত্বেও আমাদের আটকে রাখা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ বলছে আমরা নাকি বাংলাদেশি! অথচ আমরা ভারতীয়। গত তিনদিন ধরে আমাদের শুধু শুধু আটকে রেখেছে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ।’’ বহরমপুর থানার রাঙামাটি চাঁদপাড়া এলাকার আরশেদ শেখ বলেন, ‘‘আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে উত্তরপ্রদেশের নানা প্রান্তে বাড়ি বাড়ি মাথার চুল কিনে থাকি। হঠাৎ করে আমরা বাংলাদেশি হয়ে গেলাম! আমাদের কিছুতেই ছাড়া হচ্ছে না। নিজেদেরই রান্না করে খেতে হচ্ছে। ঠিকমতো দু’বেলা খাবার জুটছে না।’’
সাটুই এলাকার মহসিন শেখ বলেন, ‘‘১৮ জনের মধ্যে আমাদের ৫ জনকে দু’ঘণ্টার জন্য রান্না করতে বলা হচ্ছে। আমরা কষ্ট করে ভাত, তরকারি রান্না করছি। এভাবে কতদিন আটকে থাকব জানি না।’’ অন্যদিকে শক্তিপুর থানার সাগর শেখ বাথরুমে লুকিয়ে মোবাইল থেকে নিজের ভিডিও তুলে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। ভারতের নাগরিক। আমাদের সমস্ত বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও আটকে রেখেছে। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের বাঁচান।’’ এদিকে ১৮ জনের মোবাইল কেড়ে নিলেও একজনের কাছে লুকিয়ে রাখা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল থেকেই উত্তরপ্রদেশ পুলিশের নজর এড়িয়ে এ রাজ্যের প্রশাসনের কাছে ভিডিও পাঠিয়েছেন ওই ফেরিওয়ালারা।
পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্যমঞ্চের রাজ্য সম্পাদক আসিফ ফারুক বলেন, ‘‘ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে ১৮ জন ফেরিওয়ালাকে আটকে রেখেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। বিষয়টি মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সুপার, জেলাশাসক এবং শ্রমদপ্তরের আধিকারিককে জানানো হয়েছে। ওই ফেরিওয়ালাদের নিঃশর্তে মুক্তির আবেদন করছি।’’