সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গায়ক তো কবেই বলে গিয়েছেন, কাগজে লেখা নাম ছিঁড়ে উড়ে যায়, পাথরে লেখা নাম মুছে যায়। কিন্তু হৃদয়ে লেখা নাম অমর হয়ে থাকবে। আর জেটযুগে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন বরফের উপর বার্তা খোদাই করে রাখার অত্যাধুনিক পদ্ধতি! শুনতে আশ্চর্য লাগলেও চিন, কোরিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের একদল বিজ্ঞানীর দাবি এমনই। তাঁরা জানাচ্ছেন, মেরু অঞ্চলে যেখানে অতিরিক্ত কম তাপমাত্রায় যোগাযোগের জন্য অন্য যে কোনও যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায়, তখন বরফেই একমাত্র বার্তা লিখে রাখার মাধ্যম হয়ে ওঠে।
সম্প্রতি ‘সেল রিপোর্টস ফিজিক্যাল সায়েন্স’ পত্রিকায় বেজিং ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির একটি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বোঝা যাচ্ছে, মেরু অঞ্চলের যোগাযোগ সহজ করতে নতুন প্রযুক্তি বের করে করেছেন চিন, কোরিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের বিজ্ঞানীরা। এ যেন জল-লিপি! হিমশীতল আবহাওয়ার কারণে সুমেরু ও কুমেরু প্রদেশে স্বাভাবিকভাবে জল আর তরল অবস্থায় থাকতে পারে না। বরফ দশাই সেখানে স্বাভাবিক। বস্তুর সেই কঠিন দশাকেই এখানে কাজে লাগানো হয়েছে। মূল কৌশল হল, বরফের পাতলা প্লেটে বায়ুর বুদবুদকে আটকে নানারকম বার্তা বোঝানো। বুদবুদের বিভিন্ন আকার ও গঠন থেকে সহজে ডিকোড করে আসল কথাটি জানা যাবে। বিজ্ঞানীরা বাইনারি পদ্ধতিতে হিমখণ্ডের উপর খোদাইয়ের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন।

কীভাবে গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা? জানা যাচ্ছে, তাঁরা দুটি বরফপাতের মাঝে প্লাস্টিক ব্যবহার করে উপরের পাতে হালকা জলস্তর তৈরি করেছেন। কিছুটা সময় পর সেই জলস্তরের তরল কঠিন অবস্থায় আসার পথে অর্থাৎ দশা পরিবর্তনের সময় কিছু নির্দিষ্ট আকার তৈরি করছে। ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাচ্ছে, ওই প্রতিটি জলকণা যেমন আকার নিচ্ছে, তা একেকটি ‘কোডেড’ বার্তা। এমন অনেক স্তর তৈরি হচ্ছে এই পরিবর্তনের সময়। যার প্রতিটিই একেকটি বার্তাবাহী এবং সংযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করাই যায়। তার উপর আলো পড়লে বার্তা ডিকোড করা আরও সুবিধার বলেও জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণার অন্যতম প্রতিবেদক মেংজি সং জানাচ্ছেন, কাগজে লেখা বার্তার চেয়ে অনেক বেশি সুরক্ষিত বরফবার্তা। কারণ, বাইনারি পদ্ধতি হওয়ায় তা কম্পিউটারে ডিকোড করে তবেই স্পষ্ট করে জানা যাবে। তাছাড়া অনেকদিন পর্যন্ত তা সংরক্ষণ করা সম্ভব। সেইসঙ্গে টেলিকমিউনিকেশনে যতটা শক্তি প্রয়োজন হয়, তার চেয়ে ঢের সহজ উপায়ে বরফে লেখা যাবে।