সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২৯ জুলাই ছিল বিশ্ব বাঘ দিবস। এদিন সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের প্রান্তবর্তী পাখিরালয়ে অবস্থিত SHER-এর কমিউনিটি রিসোর্স ও নলেজ সেন্টার বাঘবনে এক অভিনব উদ্যোগের সূচনা করল- ‘বন বাঁচে, নারীর হাতে’। যার মূল বার্তা, বন টিকে থাকবে নারীর যত্নে, নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণে। এই বার্তার বিশ্বাস: একটি গাছ মানে অনেক জীবন, আর নারীর হাতে গাছ মানে বন ও বাঘের ভবিষ্যৎ নিরাপদ।
সুন্দরবন বিশ্বের একমাত্র বাদাবন যেখানে বাঘ বাস করে। জীববৈচিত্রের অভিভাবক হল বাঘ। বাঘ থাকলে বন থাকে, বন থাকলে নদী-জল-জীবিকা সবই টিকে থাকে। বিশ্ব বাঘ দিবস ২০২৫ এ শেরের তরফ থেকে ‘বন বাঁচে, নারীর হাতে’ এই সচেতনতা উদ্যোগের অংশ হিসেবে, জঙ্গলের পাশে বাস করা প্রান্তিক ৫০ জন নারীকে দুটি আমগাছের চারা প্রদান করা হয়। উপহার হিসেবে নয়, বরং একটি প্রতিশ্রুতি হিসেবে। যে প্রতিশ্রুতি বন ও বাঘের ভবিষ্যতের সঙ্গে তার অলিখিত সম্পর্কে আরও একটু মজবুত করতে চেষ্টা করে।
এদিনের আলোচনায় উঠে আসে, সুন্দরবনের মহিলারা শুধুই গৃহস্থালী করেন না। তাঁরা মাটি, জল, গাছের সঙ্গে প্রতিদিন জীবনের কাজ করেন। বোঝানো হয় গ্রামে থেকে কীভাবে মহিলারা বাদাবন ও বাঘ সংরক্ষণে সাহায্য করতে পারে। তাঁরা কীভাবে বাড়ির আশপাশে যে গাছপালা ও পশুপাখি আছে তাদের ক্ষতি না করে ও তাদের বাঁচিয়ে রাখার কথা বলে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের অংশীদার হবে তাও বলা হয়। উল্লেখ করা হয় নিজের পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধু ও পরিচিত সকলের মধ্যে বাদাবন, বাঘ, বাড়ির চারপাশের গাছপালা ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ নিয়ে কথা বলে, বাচ্চাদের সচেতন করে, গ্রামে কোন বন্যপ্রাণ দেখলে শান্ত থেকে– বন বিভাগকে জানানো এবং সর্বোপরি জঙ্গলের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা করা।
অনুষ্ঠানের সবথেকে গুরুত্বপর্ণ দিক ছিল পরাগবাহীদের (যেমন মৌমাছি, প্রজাপতি, পাখি ও কীটপতঙ্গ) ভূমিকাকে সামনে আনা, যারা বন ও কৃষিজমির স্বাস্থ্যে অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করে। একটি আমগাছ ফুল ধরলে, তা পরাগবাহীদের আকর্ষণ করে, আর সেই পরাগমিলনকারী পতঙ্গরা জঙ্গল ও খেতের ফসল দুইয়েরই সংরক্ষণে সাহায্য করে। এছাড়া শেরের সদস্য সুচন্দ্রা কুণ্ডু আলোচনাসভায় আসা মহিলাদের বোঝান আজকের এই জলবায়ু পরিবর্তনের বিভীষিকার কালে জঙ্গল সংরক্ষণে পরিবেশ ও পরাগবাহীদের গুরুত্ব। কথা বলেন রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও তার দূষণের প্রভাব এবং নারীর পরিবেশ রক্ষায় নীরব নেতৃত্ব নিয়েও।