বঙ্গে কংগ্রেসের উদ্যোগ

বঙ্গে কংগ্রেসের উদ্যোগ

ভিডিও/VIDEO
Spread the love


বেশ কিছুদিন যাবৎ খবরের শিরোনামে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস। সমাজমাধ্যম থেকে মাঠ-ময়দান, সর্বত্র কংগ্রেসের উপস্থিতি উপলব্ধি হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে মালদা, মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় এখনও দলের প্রভাব আছে বলে সারাবছরই কংগ্রেসের কর্মসূচি থাকে। পুরুলিয়া, উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু এলাকায় এখনও কংগ্রেস শিবরাত্রির সলতের মতো টিকে রয়েছে। কিন্তু কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় ইদানীং কংগ্রেস একের পর এক কর্মসূচি নেওয়ায় মনে হতেই পারে যে, বর্তমান প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের হাত ধরে মরা গাঙে জোয়ার আসছে।

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে দলের একাধিক কমিটি গঠন করে দিয়েছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। জেলা সভাপতিদের নামও ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেসের একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কেসি বেণুগোপাল। সেই পর্ব মিটতে না মিটতে প্রাক্তন সিপিএম নেতা তথা সিএএ-এনআরসি আন্দোলনের অন্যতম মুখ প্রসেনজিৎ বসুকে সাদরে বরণ করে নিয়েছে কংগ্রেস। তাঁকে দলে স্বাগত জানাতে কলকাতায় হাজির হয়েছিলেন আরও এক প্রাক্তন বাম ছাত্র নেতা কানহাইয়া কুমার।

ভোট চুরি নিয়ে ইতিমধ্যে সুর সোচ্চার লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধির। তাঁর নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপির আঁতাতের অভিযোগের জেরে পশ্চিমবঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে গণস্বাক্ষর অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। মতুয়াদের নাগরিকত্ব নিয়েও সরব কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র বাছাইয়ে রাজ্যজুড়ে ট্যালেন্ট হান্ট কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। বিধানসভায় একজন সদস্য না থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্বের এই সক্রিয়তা চোখে পড়ছে।

কংগ্রেস দীর্ঘ সময় পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় ছিল। ২০১১ সালে ৩৪ বছরের বামদুর্গের পতনের সময় তৃণমূলের অন্যতম প্রধান মিত্র ছিল হাত শিবির। পালাবদলের পর সামান্য সময়ের জন্য রাজ্যে সরকারি ক্ষমতাও জুটেছিল তাদের ভাগ্যে। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে কংগ্রেস এরাজ্যে বিরোধী আসনে। ২০১৬-র ভোটে বামেদের সঙ্গে জোটের দৌলতে বিরোধী দলনেতার পদও জুটেছিল কংগ্রেসের। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে সেই খড়কুটোটুকুও হাতছাড়া হয়।

প্রদেশ সভাপতির পদ থেকে অধীররঞ্জন চৌধুরীকে সরিয়ে দেওয়ার পর বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে কংগ্রেসের সক্রিয়তা শুরু হয়েছে। তবে তাতে আগামী বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের একেবারে নীচু স্তরের সংগঠনে কতটা প্রভাব পড়বে, সেটা নিশ্চিত নয়। রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক ক্ষমতার নিরিখে তৃণমূল এবং বিজেপি অনেকটা এগিয়ে। এই দুটি দল বর্তমানে রাজ্য এবং কেন্দ্রের ক্ষমতায়।

অপরদিকে, রাজ্যের মসনদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ১৪ বছর পরেও পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সমস্ত বুথে টিমটিম করে হলেও টিকে রয়েছে সিপিএম। নির্বাচনি প্রচার থেকে শুরু করে ভোটগণনা পর্যন্ত লালঝান্ডাধারীদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। রাজনৈতিক মতাদর্শ, অ্যাজেন্ডা, প্রচারের অভিমুখ নিয়ে যতই বিতর্ক থাকুক, ক্ষয়রোগে আক্রান্ত বাম দলগুলির সংগঠনকে মজবুত করার নিরন্তর প্রয়াস আছে। নানাবিধ পন্থায় মানুষের সঙ্গে জনসংযোগও করে তারা। এই কাজে অতীতের মতো এখনও বামেদের গণসংগঠনগুলি কার্যকর ভূমিকা নেয়।

কিন্তু মালদা, মুর্শিদাবাদের বাইরে কংগ্রেসকে সেভাবে বুথে বুথে সংগঠন বাড়ানোর কাজে দেখা যায় না। বাংলার মতো বিহারেও বহুদিন ক্ষমতার বৃত্তের বাইরে রয়েছে কংগ্রেস। আরজেডি’র বি-টিম হিসেবে তাদের সেখানে কাজ করতে হয়। তারপরও বিহারে ‘নকরি দো পলায়ন রোকো যাত্রা’ এবং ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’-র আয়োজন করে নীচুতলার কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা সাংগঠনিক ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন।

রাহুল সহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব তাতে শামিল হয়েছিল। গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, ওডিশা- কংগ্রেসের নজরে থাকা রাজ্যের তালিকা কম নয়। পশ্চিমবঙ্গেও কংগ্রেস স্বপ্নের ইমারত তৈরির ব্রত নিয়েছে ঠিকই। কিন্তু ভঙ্গুর ও দুর্বল বুনিয়াদের ওপর বহুতল গড়া সম্ভব নয়। যে কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের সাড়া পেতে সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি প্রয়োজন সবার আগে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *