স্টাফ রিপোর্টার: রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা দেওয়া সংক্রান্ত আগাম প্রস্তুতি সেরে রাখতে চাইছে নবান্ন। সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ রয়েছে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ-র অন্ততপক্ষে ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দেওয়ার। সূত্রের খবর, প্রশাসনিক প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে কতজন মহার্ঘ ভাতা পাবেন, তার সংখ্যা নির্ধারণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।
গত ১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট চার সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া মহার্ঘভাতা নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি ও ছ ‘সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সেক্ষেত্রে প্রায় দু’সপ্তাহ হতে চলেছে বিজ্ঞপ্তি জারির আগে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিএ দিতে গেলে আগামী প্রস্তুতি সেরে রাখতে হবে বলে মনে করছে প্রশাসনের শীর্ষমহল। এ বিষয়ে চূড়ান্ত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত না হলেও কর্মীদের চাকরির তথ্য তৈরি রাখা হচ্ছে। বর্তমানে চাকরিরত এবং অবসরপ্রাপ্ত, সব মিলিয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যা জানার পাশাপাশি কে কত টাকা বকেয়া হিসাবে আপাতত পাবেন, তার হিসাব তৈরির কাজও চলছে।
যেহেতু ২০১৯ সালে স্টেট ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছিল বকেয়া ডিএ কে কত পাবেন তা ঠিক করার জন্য একজন নোডাল অফিসার নিয়োগ করতে পারে রাজ্য সরকার। কারণ, কর্মীদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বেতন হয়। কিন্তু পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে বেতন হয় ট্রেজারি থেকে অথবা নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক থেকে। প্রশাসন সূত্রে খবর, সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন রায় মানতে গেলে প্রস্তুতি সেরে রাখাই বাঞ্ছনীয়। যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন রায়, তাই আইনজীবী মহলের মত, এক্ষেত্রে রিভিউ পিটিশন দাখিল করতে পারবে না রাজ্য সরকার। সেক্ষেত্রে ডিএ দেওয়ার ক্ষেত্রে তথ্য, নথি সংগ্রহ করে যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে পদক্ষেপই করছে নবান্ন।
রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রায় আড়াই লক্ষেরও বেশি কর্মী, প্রায় চার লক্ষের কাছাকাছি স্কুল শিক্ষক ছাড়াও পঞ্চায়েত, পুরসভা, পুরনিগম, সরকার পোষিত স্বশাসিত সংস্থার প্রায় এক লক্ষ কর্মী ধরলে প্রায় আট লক্ষেরও বেশি বকেয়া মহার্ঘ ভাতা পাবেন। এর সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের সংখ্যা ধরলে সব মিলিয়ে সংখ্যা হবে প্রায় ১০ লক্ষ। এই বকেয়ার ক্ষেত্রে ‘রোপা রুল’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোপা ২০০৯ আসলে ২০০৮-এর ১ এপ্রিল থেকে লাগু হয়ে ছিল ২০১৯-এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০০৮-এর ১ আগস্ট থেকে ২০১৯-এর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যাঁরা বেতন পেয়েছেন বা এখনও কাজ করছেন তাঁরাই এই বকেয়া ডিএ পাবেন। সবমিলিয়ে ২০০৮ সালের নির্দিষ্ট সময় থেকে ৯ মাস এবং ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ১৪১ মাসের বকেয়া পাবেন (যখন চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, সেই মাস থেকে হিসাব করে পাবেন)। তবে ২০১৯ এর পরপর যাঁরা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা যেহেতু রোপা ২০০৯-এর আওতায় চাকরি শুরু করেননি, তাই এই বকেয়া তাঁরা পাবেন না। আদালতে দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, বকেয়া ডিএ পুরোপুরি মেটাতে গেলে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে তার ২৫ শতাংশ, মানে প্রায় ১০ শতাংশ প্রয়োজন এখন বকেয়া ডিএ মেটাতে গেলে। সেই কাজের জন্য প্রথমেই কর্মীসংখ্যা ও তাঁদের পদোন্নতি-সহ একাধিক বিষয় জানার প্রয়োজন। তারই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে খবর।