সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক : ‘ফ্যাসিস্ট’ ইউনুস সরকারকে হঠাতে গণ আন্দোলেনের ডাক দিলেন বাংলাদেশের গদিচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বৈরাচারীদের উৎখাত করে ‘সোনার বাংলা’ গড়তে জনতার দরবারে ২১ দফা দাবি পেশ করলেন মুজিবকন্যা। তাঁর আহ্বান, নির্বাচিত সরকারকে অসাংবিধানিক ভাবে উৎখাত করে ক্ষমতা গ্রাস করা ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারকে সরিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে হবে।
রবিবার আওয়ামি লিগের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেল থেকে ২১দফা দাবি তুলে ধরেন মুজিবতনয়া। ওই দাবিগুলির মধ্যে বাংলাদেশে সুস্থ গণতন্ত্র ফেরানোর পাশাপাশি, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, নারী ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা এবং জাতির জনক শেখ মুজিবর রহমানের ঐতিহ্যমণ্ডিত ধ্বংসপ্রায় স্থানগুলি সংস্কার-সহ সবমিলিয়ে ২১ দফা দাবি জানিয়ে ‘ফ্যাসিস্ট’ ইউনুস সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সোনার বাংলায় আরও একবার মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান জানালেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানিদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ”এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় ৪৫টা বছর। পদ্মা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্রের বুক দিয়ে বয়ে গিয়েছে বহু জল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঘটে গিয়েছে উথাল -পাথাল। কোটা সংস্কার নিয়ে গণ অভ্যুত্থানের জেরে প্রধানমন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন শেখ হাসিনা। ধানমণ্ডিতে মুজিব বাসভবনে লুটপাট ও ভাঙচুরের স্মৃতি আজও জ্বলজ্বলে। সেখানে এখন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ তথা প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের তত্ত্বাবধানে চলছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকার ক্ষমতায় আসার পরই বারবার অভিযোগ উঠছে আওয়ামি লিগের কর্মী এবং সমর্থকরা বাংলাদেশে আক্রান্ত হয়েছে। শুধু তাই নয়, দিকে দিকে আক্রান্ত হচ্ছেন সংখ্যালঘুরা। বিভিন্ন জায়গায় মন্দির ভাঙচুরেরও খবর এসেছে। ভেঙে পড়েছে দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো। দেশের এই দুর্দিনে ভারতবর্ষে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে নারাজ হাসিনা। এদিন আওয়ামি লিগের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে বাংলাদেশের স্বাধীনচেতা জনসাধারণের উদ্দেশ্যে ২১দফা দাবি তুলে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করেন ‘জননেত্রী’। দীর্ঘ চিঠিতে জনসাধারণকে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে অবগত করে হাসিনা জানিয়েছেন, দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। মানুষের ন্যুনতম নাগরিক অধিকারটুকু খর্ব হয়েছে। সংবাদমাধ্যম শিকলবন্দি। দিকে দিকে মহিলারা অত্যাচারিত। এ যেন একাত্তরের খান সেনার ফিরে আসা।
এক্স হ্যান্ডেলে ‘সোনার বাংলা’ ফিরিয়ে আনতে যে ২১ দফা দাবি জনতার দরবারে পেশ করেছেন হাসিনা তা হল –
১. জনসাধারণের ভোটে নির্বাচিত শেখ হাসিনাকে অসাংবিধানিক ভাবে উৎখাত করে অবৈধ ভাবে ক্ষমতায় এসেছে ইউনুস সরকার। অবিলম্বে এই সরকারকে সরিয়ে ফের নির্বাচিত সরকারকে ফেরাতে হবে।
২. ক্ষমতায় আসার পর ইউনুস সরকার যে ভাবে অসাংবিধানিক ভাবে এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়কে অবজ্ঞা করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানারকম ধ্বংসাত্মক কাজকর্ম করেছে তার তদন্ত এবং শাস্তি। ওবিদুল হাসান ও এনায়েতুর রহিমের বাড়িতে যে হামলার ঘটনা ঘটনা ঘটেছিল তারও দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন হাসিনা।
৩. প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রচুর ভুয়ো মামলা দায়ের করা হয়েছে। অবিলম্বে সেই সমস্ত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
৪. পাশাপাশি তাঁর ছেলে এবং বঙ্গবন্ধুর পরিবারের আরও সদস্যদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তাও প্রত্যাহার করা উচিৎ বলে দাবি জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।
৫. গতবছর অগস্টে ইউনুস সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনৈতিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আওয়ামি লিগের বহু নেতা, কর্মী, সমর্থক এবং প্রতিবাদীদের। তাঁদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগের অবসান ঘটানোরও দাবি এদিন করা হয়েছে।
৬. ইউনুস সরকারের ভিন্নমত পোষণকারীদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিলুপ্তি করা হোক এবং সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করা হোক।
৭. স্বাধীনচেতা সমস্ত মানুষকে রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আওয়ামি লিগের যে সমস্ত কর্মীদের নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তা প্রত্যাহার করা হোক এবং তাঁদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
৮. যে রকম অবৈধভাবে সেন্ট মার্টিন্স আইল্যান্ড, চট্টগ্রাম পোর্ট, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে তা অবিলম্বে বন্ধ করা হোক।
৯. বেআইনিভাবে বরখাস্ত করা আধিকারিকদের পুনর্বহালের পাশাপাশি বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে অসাংবিধানিক হস্তক্ষেপ বাতিল করা হোক।
১০. পনেরো জুলাই, ২০২৪ থেকে সংখ্যালঘু এবং আওয়ামি লিগ সদস্যদের বিরুদ্ধে সকল হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং হিংসামূলক ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করা হয়েছে।
১১. বাংলাদেশের জনসাধারণের উদ্দেশ্যে দেশের জাতীয় প্রতীক – বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ রক্ষা করা এবং শহীদ মিনার ধ্বংসকারীদের শাস্তি দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে শেখ হাসিনার তরফে।
১২. পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করা, আটক সাংবাদিকদের মুক্তি দেওয়া এবং তাঁদের সংস্থার মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।
১৩. গতবছর ক্ষমতায় আসার পর থেকে যে ভাবে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতির জনক মুজিবর রহমানের প্রতি অবমাননা করা হয়েছে তা অবিলম্বে বন্ধ হোক। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং স্মৃতিস্তম্ভগুলির পূনঃর্নিমাণ করা হোক।
১৪. উগ্রপন্থীদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হোক, এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
১৫. শিক্ষাক্ষেত্রে হিংসামূলক কার্যকলাপ বন্ধ করে অবিলম্বে বহিষ্কৃত ছাত্র ও শিক্ষকদের ফের শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনতে হবে।
১৬. ইউনুস সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বারবার সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মৌলবাদীদের থেকে রক্ষা করা, তাদের নিরাপত্তা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
১৭. অবিলম্বে মেয়েদের প্রতি হিংসার ঘটনা বন্ধ করার পাশাপাশি নারীদের অধিকার ও সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে শেখ হাসিনার তরফে।
১৮. ইউনুসের সরকার ক্ষমতায় আসার পর দ্রবমূল্য বৃদ্ধির কারণে অর্থ সংকটে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। দ্রব্যমূল্য কমানো, দুর্নীতি ও সিন্ডিকেট রাজ বন্ধ করার পাশাপাশি দরিদ্রদের অনাহার থেকে রক্ষা করার দাবি জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।
১৯. ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা, বন্ধ হয়ে যাওয়া শিল্প পুনরায় চালু করা এবং বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে পতনের মোকাবিলা করারও দাবি এদিন করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
২০. সমস্ত কারাবন্দি আওয়ামি লিগ সদস্যদের মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি পুলিশ এবং কারাগারে থাকাকালীন কর্মীদের মৃত্যুর সঠিক তদন্তও চেয়েছেন হাসিনা।
২১. বাংলাদেশে শান্তি ফেরানোর উদ্দেশ্যে দেশের সর্বত্র হিংসা বন্ধ হোক, মধ্যযুগীয় ধাঁচের হত্যাকাণ্ডে যুক্ত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাঁদের কঠিন শাস্তিরও দাবি জানিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।