সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আধুনিক পৃথিবী এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে, যেখান থেকে প্লাস্টিকহীন পৃথিবীতে ফিরে যাওয়া কার্যত অসম্ভব। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। কিন্তু ব্যবহারের পর এই প্লাস্টিকগুলো কোথায় যায়? পৃথিবীজুড়ে যে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য জমে রয়েছে তার মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। শুধু মাটির উপরে বা ভিতরে নয়, সমুদ্রের নিচেও রয়েছে প্লাস্টিকের সাম্রাজ্য। বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট করে এই মাইক্রো প্লাস্টিক এবারে ঢুকতে শুরু করেছে পুকুর বা নদীর মাছের শরীরে, চাষের জমির ফলনে, গরুর দুধে, এমনকী মানবশরীরেও। এর থেকে বাঁচার কোনও উপায় কি রয়েছে?
সম্প্রতি জার্মান গবেষকরা স্বস্তির কথা শোনাচ্ছেন। একটি গবেষণায় তাঁরা জার্মানির লেক স্টেচলিনে প্লাস্টিক ধ্বংসকারী কিছু ছত্রাকের হদিশ পেয়েছেন। মিঠে জলের আবাসস্থলে পাওয়া এই ছত্রাকগুলির মধ্যে রয়েছে সিন্থেটিক প্লাস্টিক ভেঙে ফেলার অদ্ভুত এক ক্ষমতা।
লিবনিজ ইনস্টিটিউট অফ ফ্রেশওয়াটার ইকোলজির গবেষকরা জানাচ্ছেন, এই ছত্রাকগুলি সিন্থেটিক পলিমারের উপরে নিজেদের বংশবৃদ্ধি ঘটাতে সক্ষম। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, জলজ পরিবেশে সম্ভবত প্লাস্টিকের অতিরিক্ত বর্জ্যে নিজেদের অভিযোজন ঘটাতেই ছত্রাকগুলির মধ্যে এই ধরনের বৈশিষ্ট দেখা দিয়েছে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ১৮টি ছত্রাকের স্ট্রেনের মধ্যে পৃথক চার প্রজাতির ছত্রাক পলিউরেথেনের প্রতিও বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট। সাধারণ প্লাস্টিক, জুতো, রাবার প্রভৃতিতে এই ধরনের ছত্রাক বেড়ে উঠতে পারে। কিন্তু পলিথিনের মোড়ক বা ব্যাগ, গাড়ির টায়ার প্রভৃতি শক্ত প্লাস্টিকগুলোকে সহজে ভাঙতে পারে না।
তবে, শুধুমাত্র ছত্রাক কখনওই বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ ঠেকাতে পারবে না। পৃথিবীতে বার্ষিক প্লাস্টিক উৎপাদন ৪০ কোটি টন। এর মধ্যে মাত্র ৯% পুনর্ব্যবহারযোগ্য। তাই, শুধুমাত্র ছত্রাক দিয়ে বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করা কখনওই সম্ভব নয়।
বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে প্রায় ৪০০টিরও বেশি এরকম ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া চিহ্নিত করেছেন। এগুলি সরাসরি প্লাস্টিক খেয়ে ফেলতে সক্ষম। পরিবেশ রক্ষায় এই ছত্রাকগুলিকে যদি কোনও ভাবে কাজে লাগানো যায়, সেক্ষেত্রে আশার আলোর দেখা মিলতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন