প্লাস্টিক বোতলের নয়া রূপ পরিবেশবান্ধব ইট! দূষণ ঠেকাতে উদ্যোগী পুরুলিয়া

প্লাস্টিক বোতলের নয়া রূপ পরিবেশবান্ধব ইট! দূষণ ঠেকাতে উদ্যোগী পুরুলিয়া

ব্যবসা-বাণিজ্যের /BUSINESS
Spread the love


সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: দূষণ ঠেকাতে নয়া রূপ পাচ্ছে প্লাস্টিক বোতল। আকার বদলে এখন সেসব ‘ইকো ব্রিকস’ বা পরিবেশবান্ধব ইট! একবার ব্যবহার করা যায়, এমন প্লাস্টিক বোতলে একবারই ব্যবহারযোগ্য পলিথিন, বালি, মাটি ঢুকিয়ে আটকে দিতে হবে ঢাকনা। তাহলেই ওই শক্ত বোতল ইটের বিকল্প হিসাবে পরিবেশবান্ধব ইট হিসেবে কাজ করবে। এই ব্যবস্থাপনাতেই পুরুলিয়া জেলা পরিষদ প্লাস্টিক দূষণ ঠেকাতে ওই ইকো ব্রিকস বা পরিবেশবান্ধব ইট ব্যবহার করে গাছের বেড়া তৈরি করছে। তৈরি করছে আসবাবপত্র, বসার জায়গা, ফেন্সিং, এমনকি সীমানা প্রাচীর।

এই কাজে একদিকে যেমন প্লাস্টিকের দ্বারা দূষণ ঠেকানো সম্ভব, তেমনই ইটের বিপুল খরচও বাঁচবে। জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার বিভিন্ন পঞ্চায়েতে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে এইভাবেই ওই প্লাস্টিক বোতল পরিবেশবান্ধব ইট হয়ে অফিস ক্যাম্পাস, পার্ক, বাজার, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গাছের বেড়া, বসার জায়গা এমনকি সীমানা প্রাচীর তৈরি করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ব্যাগ মুক্ত দিবসের আগে জেলার ১৭০ টি গ্রাম পঞ্চায়েতে এই প্রকল্প হাতে নেয় পুরুলিয়া জেলা পরিষদ।

ইকো ব্রিকসে সেজে উঠেছে পার্ক। ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

তারপরেই ধীরে ধীরে ওই প্রকল্পের রূপায়ণ হতে থাকে। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের উপ-সচিব জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, “প্লাস্টিক বোতল থেকে এই ইকো ব্রিকস বা পরিবেশবান্ধব ইটের ভাবনা কয়েক বছর আগেকার। তবে এবার থেকে আমরা এই প্রকল্পের কাজ সমগ্র জেলাজুড়ে বৃহৎভাবে হাতে নিয়েছি। প্রত্যেকটি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ব্লক প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্লাস্টিক দূষণ ঠেকাতে সরকারি প্রতিষ্ঠানে এই ভাবেই ইটের ব্যবহার করতে।”

ইকো ব্রিকসে তৈরি হয়েছে বসার আসন।
ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

এই কাজে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে পুরুলিয়ার মানবাজার ১ ব্লকের জিতুজুড়ি, জয়পুর ব্লকের বড়গ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ সাঁতুড়ি ব্লক প্রশাসনও। মানবাজার ১ নম্বর ব্লকের জিতুজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের যে এলাকায় ব্যাপক আকারে মানুষজনের যাতায়াত রয়েছে। অর্থাৎ পার্ক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বাজার সেখানে ওই প্লাস্টিক বোতলকে ইকো ব্রিকসের রূপ দিয়ে বসার জায়গা, সীমানা প্রাচীর, গাছের বেড়া তৈরি করা হয়েছে। যা রীতিমত চোখ টানছে। এই ব্লকের ধানাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা একবার ব্যবহার করা প্লাস্টিক বোতলে বালি, মাটি ও একবার ব্যবহার করা পলিথিন দিয়ে পরিবেশ বান্ধব ইটের রূপ দিয়েছে। আর তা দিয়ে সিমেন্ট বালির সাহায্যে ওই স্কুলের ক্যাম্পাসে বসার জায়গা, গাছের বেড়া তৈরি হয়েছে।

গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের হাতে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ইট।
ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

জিতুজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক রাজু দাস বলেন, “এই কাজে একদিকে যেমন প্লাস্টিকের দূষণ কমবে। অন্যদিকে, ইটের খরচও কমে যাবে।” কিন্তু মজবুত হবে কি? ওই নির্মাণ সহায়কের কথায়, “সীমানা প্রাচীরের দেওয়ালের ক্ষেত্রে দুটো কলমের মাঝে এই কাজ করতে হবে। আর গাছের বেড়া, বসার জায়গার ক্ষেত্রে কোনওভাবেই কোন অসুবিধা হবে না।”

পরিবেশবিদরা বলছেন, প্রতি মিনিটে সমগ্র বিশ্বে ২০ লক্ষ প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়। যা প্রকৃতিতে মিশতে সময় নেয় এক হাজার বছর। হু ও ইউএনও-র গবেষণাপত্র বলছে, পরিবেশের কাছে সবচেয়ে কঠিন হচ্ছে একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিকের মাত্রাছাড়া ব্যবহার। ইউএনইপি বা ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম বলছে, আজ থেকে ২৫ বছর পর অর্থাৎ ২০৫০ সালে সমগ্র বিশ্বে ১২০ টন প্লাস্টিক বর্জ্যে ছেয়ে যাবে। সেই কারণেই গত ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিমই ছিল প্লাস্টিক দূষণের অবসান। আর সেই কথা মাথায় রেখেই রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগ আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ব্যাগ মুক্ত দিবসে তিন দিন ধরে অর্থাৎ গত ১ জুলাই থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাপক ভাবে প্রচার চালিয়েছে সমগ্র রাজ্যে। তাই পুরুলিয়ার সাঁতুড়ি, রঘুনাথপুর ১ নম্বর ব্লক ওই এলাকার মানুষজনদের জানিয়েছে, সমস্ত প্লাস্টিকের ব্যাগ তাদের কাছে দিয়ে যেতে। তার বিনিময়ে তাঁরা কাপড়ের ব্যাগ উপহার দিচ্ছে।

পাঁচিল তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ইটে।
ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

সাঁতুড়ির বিডিও পার্থ দাস বলেন, “আমরা বিভিন্ন সঙ্ঘ-র মহিলাদের হাতে তৈরি কাপড়ের ব্যাগ হাটে-বাজারে বিলি করছি। সেই সঙ্গে প্লাস্টিক নিয়ে নিচ্ছি। দূষণ ঠেকাতেই আমাদের এই পদক্ষেপ।” যে সকল সংঘ বা স্বনির্ভর গোষ্ঠী স্কুল শিক্ষা দপ্তরের স্কুল ড্রেস প্রকল্পে যারা পোশাক তৈরি করেন, সেখানে যে অব্যবহৃত কাপড় পড়ে থাকে। সেই কাপড়েই এই ব্যাগ তৈরি করা হচ্ছে। ওই সংঘের মহিলাদের কাছ থেকে কিনে নিচ্ছে সাঁতুড়ি ব্লক প্রশাসন। প্রশাসনের হাতে আসা প্লাস্টিক চলে যাচ্ছে ওই সংঘের মহিলাদের হাত ধরে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে। সেই প্লাস্টিকের দরুন ওই প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তারা অর্থ পেয়ে যাচ্ছেন। যা ব্যাগ তৈরির মজুরি হয়ে যাচ্ছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *