স্টাফ রিপোর্টার: মঙ্গলবারের বারবেলা। দিন তিনেক পর টেস্ট শুরু। যে সে, এ বড় মহার্ঘ টেস্ট, ভারত বনাম ইংল্যান্ড। ইতিমধ্যে শুভমান গিল বনাম বেন স্টোকস মহাযুদ্ধকে ঘিরে তাপ-উত্তাপ পারিপার্শ্বিকে ছড়াতে শুরু করেছে। দীনেশ কার্তিক নতুন ভারতীয় টেস্ট অধিনায়ককে ‘হুঁশিয়ারি’ দিচ্ছেন। জস বাটলার আবার শুভমান গিল নামক সেই ‘রাজপুত্রে’র দরাজ প্রশংসা করছেন। ইসিবি, অর্থাৎ ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড, তারা রাজসূয় যজ্ঞের প্রস্তুতির ফাঁকে ঘোষণা করে দিয়েছে যে, ভারত বনাম ইংল্যান্ড অ্যাশেজের চেয়ে কম বলীয়ান নয়। কম শক্তিশালী নয়। আর্থিক দিক থেকে অ্যাশেজ ঠিক যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই ভারত-ইংল্যান্ড। অর্থাৎ, মুনাফার ব্যালান্স শিটে দুইয়ের অবস্থান সমান-সমান। কিংবা বলা ভালো, তারা সেয়ানে-সেয়ানে!
কিন্তু হেডিংলিকে, তার ভ্রূক্ষেপ কোথায়? তার আগ্রহ কোথায়?
প্রাক্ ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট হেডিংলির আবহ দেখলে বোঝার উপায় নেই যে, এখানে মহাসমরের আসর বসতে চলেছে। বরং হেডিংলিকে দেখলে নাকি মনে হচ্ছে, বিস্তর পানাহার শেষে সে দুপুরের ভাতঘুম দিতে ব্যস্ত! শেষ টেস্ট কবে হয়েছে, কী তার পরিণাম, কতটা তার উত্তেজনা, কিছুতেই যেন তার কিছু যায়-আসে না। মাঠের এমন কোনও কাঠামোগত শৈলী নেই, যা কি না সমগ্র স্টেডিয়ামের একাত্মতা ধরে রাখবে। এক-একটা স্ট্যান্ড বিবিধ পুরাতন যুগের প্রতিনিধি যেন, দূর-সম্পর্কের ভাই-বোনদের মতো যারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে নৈশভোজ নিমন্ত্রণ সারতে এসেছে! কার্নেগি প্যাভিলিয়নে আবার কাজকর্ম চলছে। টেস্ট ম্যাচ পড়লে যে খুচখাচ স্টেডিয়াম সারাইয়ের কাজ থাকে, সে রকমই। দ্বাররক্ষীরাও শোনা গেল, আগত বিদেশি সাংবাদিকদের নিরুৎসাহে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘‘কী, ক্রিকেটের জন্য এসেছেন নাকি? ইংল্যান্ড-ইন্ডিয়া, অ্যাঁ?’’
মজার হল, টেস্টের আবহ কিন্তু মোটেও এত নিরুত্তেজ নয়। একদম মুখবন্ধে যা যা লেখা হল, সে সবই শুরু হয়ে গিয়েছে। সবচেয়ে বেশি চর্চা চলছে, ভারতের নতুন টেস্ট অধিনায়ক শুভমান গিলকে নিয়ে। দীনেশ কার্তিক যেমন এ দিন এক পডকাস্টে বলে দিয়েছেন, ‘‘শুভমানকে আমি একটাই পরামর্শ দেব। শুধু ফিল্ডিংয়ের সময় অধিনায়কত্ব করার কথা ভাবো। বেশি মনোযোগ ব্যাটিংয়ে দাও। একটা কথা পরিষ্কার বলি। গিলকে কিন্তু সর্বপ্রথম বিদেশে ব্যাটার হিসেবে রান করে ড্রেসিংরুমের সম্ভ্রম আদায় করতে হবে। ওর যা ব্যাটিং গড়, সেটা কিন্তু গর্ব করার মতো নয়।’’ খুব একটা ভুল বলেননি কার্তিক। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডে ব্যাটিং গড় মোটেও সুবিধেজনক নয় গিলের। ইংল্যান্ডে শেষ বার ভারত টেস্ট সিরিজ জিতেছিল ২০০৭ সালে। তাই অতীব কঠিন এক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে চলেছেন নতুন ভারত অধিনায়ক। পারবেন তিনি? কার্তিকের বক্তব্য বেশ তির্যকই শোনাচ্ছে। বলছেন, ‘‘আমার মনে হয় না, গিল এখনও উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, অধিনায়কত্বের বিশাল ব্যাপ্তি কাকে বলে? সত্যি বলে, সিংহের গুহায় ঢুকতে চলেছে ও। ইংল্যান্ডে এসে খেলা মোটেও সহজ নয়। তবে শুভমানের একটা সুবিধে হবে। ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণকেও প্রবল ভঙ্গুর দেখাচ্ছে। সেটাই একমাত্র যা ইতিবাচক দিক।’’ ঘটনা হল, কার্তিক যা-ই বলুন, গিল কিন্তু বাটলারের সম্ভ্রম আদায় করে নিচ্ছেন। প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক গিলের অধিনায়কত্বে খেলেছেন আইপিএলে। তাঁর মনে হয়, শুভমান আদতে বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মার মধ্যবর্তী মিশ্রণ হবেন। ‘‘আমার তো শুভমানের খেলা খুবই ভালো লাগে। শান্ত থাকতে জানে। মেপে কথা বলে। কিন্তু মাঠে নামলে ওর খিদেটা, লড়াইয়ের মানসিকতা দেখতে পাই। শুভমান কিছুটা রোহিত, কিছুটা কোহলি হবে,’’ বলেন বাটলার।
দাঁড়ান, দাঁড়ান। শুধুই যে গিলকে ঘিরে চর্চা চলছে ভারত-ইংল্যান্ডের ক্রিকেটমহলে, তা নয়। খোঁচাখুঁচি আরও কয়েকটা বিষয় নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে। যেমন, শ্রেয়স আইয়ারকে ইংল্যান্ড সফরের দলে না নেওয়া। যেমন, কুলদীপ যাদবকে যতটা সম্ভব খেলানোর পরামর্শ। দু’টোই বলেছেন প্রাক্তন ইংল্যান্ড ওপেনার নিক নাইট। ‘‘আমি বলব, শ্রেয়সকে ইংল্যান্ড সফরে ভারতের না নিয়ে আসাটা ভুল হয়েছে। এটাও মনে করি, কুলদীপকে যতটা সম্ভব খেলানো দরকার। বল যদি ঘোরে, কোনও দিকে না তাকিয়ে কুলদীপকে প্লেয়িং ইলেভেনে রাখা উচিত। টেস্টের তৃতীয় কিংবা চতুর্থ দিন ইংল্যান্ড কখনওই চাইবে না কুলদীপকে খেলতে,’’ বলে দিয়েছেন নাইট।
ঘুরেফিরে কী দাঁড়াল?
গিল নিয়ে বিরুদ্ধ মতামত, শ্রেয়স নিয়ে আক্ষেপ, কুলদীপ নিয়ে আগ্রহ– লিডস টেস্টের আবহে সব আছে। শুধু হেডিংলের ভাতঘুম এবার কাটলেই চলবে!