প্রত্যেক রাজ্যের সংস্কৃতি ও ভাষার অস্মিতাকে পূর্ণ মর্যাদা

প্রত্যেক রাজ্যের সংস্কৃতি ও ভাষার অস্মিতাকে পূর্ণ মর্যাদা

খেলাধুলা/SPORTS
Spread the love


জাতীয় অস্মিতাই শেষ কথা। তাই বিবিধের মাঝে গড়ে উঠুক মিলনকাব‌্য। প্রত্যেক রাজ্যের সংস্কৃতি ও ভাষার অস্মিতাকে পূর্ণ মর্যাদা দেওয়াই কর্তব‌্য।

সংস্কৃত ‘অস্মি’-র অর্থ ‘আমি’। ‘অস্মিতা’ শব্দটির গোড়ায় জড়িয়ে আছে ‘আমিত্ব’। এবং ‘আমিত্ব’ শব্দটির প্রশংসার্থে প্রয়োগ তেমন নেই বললেই চলে। যে-লোক শুধু আমিত্বে ভরা, সারাক্ষণ নিজের কীর্তিকলাপের কথা বলে যায়, নানাভাবে নিজেকে জাহির করে, সে-লোক সামনাসামনি বিরক্তির কারণ হয়, এবং আড়ালে তাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ হয়। ‘অস্মিতা’ শব্দের অর্থ শুধুমাত্র অহংকার নয়। আক্ষরিক অর্থে ‘অস্মিতা’-র অর্থ ‘আমিত্ব’, নিজের গৌরবে টইটম্বুর অবস্থা। এবং সেটা নিঃসন্দেহে খুব স্বাস্থ‌্যকর অবস্থা নয়।

এই অবস্থার শোচনীয় শিকার উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ‘জুলিয়াস সিজার’। যত ‘আমিত্ব’ গ্রাস করছে এই রোমক সাম্রাজ‌্যবাদী দুর্নিবার শাসককে, ততই সে নিজেকে নাম ধরে ডাকছে! যেমন, সিজারের খিদে পেলে বলে, সিজার ক্ষুধার্ত। ঘুম পেলে বলে, সিজার এবার ঘুমবে। যখন সিজারকে শেষ ছুরিটা মারল ব্রুটাস, তখন সিজার বলল, ব্রুটাস তুমিও মারলে! তাহলে সিজার, এবার তুমি পড়ো এবং মরো। ‘অস্মিতা’ বা আত্ম-অহংকারের শেষ অবস্থায়, মানুষ নিজেকে নাম ধরে ডাকতে শুরু করে, এমনই করুণ হাস‌্যকর অবস্থায় মানুষকে নিয়ে যায় অস্মিতা, দেখিয়েছেন শেক্সপিয়র। অস্মিতার একটি বিপজ্জনক এবং হাস‌্যকর দিক থাকেই– কারণ সেটা ধৃত আছে ‘অস্মিতা’ বা ‘আমিত্ব’– ওই নামের গূঢ়ার্থে! ‘আমি’-সর্বস‌্য মানুষ একই সঙ্গে বিপজ্জনক ও হাস‌্যকর।

ভারতের ক্ষেত্রে ‘অস্মিতা’ শব্দটি অতি সাবধানে ব‌্যবহার করতে হবে। কেননা, আমাদের দেশে বহু রাজ‌্য, বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতি, বহু ধর্ম, এবং বহু খাদ‌্যাভ‌্যাস, বহু সমাজব‌্যবস্থা। এবং
এমন একটি বৈচিত্রময় দেশে বিভিন্ন রাজে‌্যর নিজ-নিজ গৌরবগাথা থাকবেই। থাকবেই প্রতিটি সংস্কৃতি সমাজের পৃথক পৃথক গৌরব ও অহংয়ের ইতিহাস। তা না থাকলে বৈচিত্রর এই বর্ণময়তাও তো থাকবে না। ভারতের সংস্কৃতি ও চরিত্র এই বিবিধকে নিজের মধে‌্য অবাধে গ্রহণ করেই যুগযুগান্তর ধরে তৈরি হয়েছে। সুতরাং ভারত যেন প্রতিটি রাজ‌্য ও তার সংস্কৃতি ও মানুষের অস্মিতাকে স্বীকৃতি দিতে, গ্রহণ করতে শেখে।

কোনও বাঙালি যদি ওড়িশায় যায়, তাহলে তাকে সেই রাজে‌্যর ভাষা বলতেই হবে, নাহলে সে পরদেশি, ‘আউটসাইডার’, অনুপ্রবেশকারী– এই সরলীকরণ ভারতের মতো দেশে বিপজ্জনক এবং গ্রহণীয় নয় কোনওভাবেই। দেশের প্রতি নাগরিকের প্রাথমিক দায়িত্ব হল, প্রতিটি রাজে‌্যর, প্রতিটি সংস্কৃতি ও ভাষার অস্মিতাকে পূর্ণ মর্যাদায় মেনে নেওয়া। কিন্তু আরও বড় দায়িত্ব হল, এই সারকথাটা মনে রাখা, আমাদের জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত যেমন সমগ্র ভারতের জাতীয় অস্মিতার প্রতীক, তেমনই আমরা প্রতিটি ভারতীয় সেই জাতীয় অস্মিতারই প্রতীক। আমাদের জীবনে যেন জাতীয় অস্মিতাই শেষ কথা হয়। যেন বিবিধের মাঝে মিলন মহানকে আমরা চিনতে শিখি, সম্মান করতে শিখি।

জাতীয় অস্মিতাই শেষ কথা। তাই বিবিধের মাঝে গড়ে উঠুক মিলনকাব‌্য। প্রতে‌্যক রাজে‌্যর সংস্কৃতি ও ভাষার অস্মিতাকে পূর্ণ মর্যাদা দেওয়াই কর্তব‌্য।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *