প্রত্যাঘাত এবং …

প্রত্যাঘাত এবং …

শিক্ষা
Spread the love


দেশবাসীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখল নরেন্দ্র মোদির সরকার। পহলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার কঠোর প্রত্যাঘাত করল ভারত।পাকিস্তানের সঙ্গে সত্যি যুদ্ধ বাধলে নাগরিকদের সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে দেশের ২৫৯টি জায়গায় মক ড্রিলের আয়োজনের আগের রাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ করল ভারত। পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ৯টি স্থানে বোমাবর্ষণে একাধিক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিল ভারতীয় বাহিনী।

স্থলবাহিনী, বায়ুসেনা এবং নৌসেনার সম্মিলিত এই প্রত্যাঘাত প্রত্যাশিতই ছিল। এই দিনটি দেখার জন্য ২২ এপ্রিল থেকে অপেক্ষা ছিল ১৪০ কোটি দেশবাসীর। দেশের সব নাগরিকদের পাশাপাশি বিরোধী দলগুলি ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর অভিযানকে সমর্থন করেছে। পাকিস্তান অবশ্য ভারতের প্রত্যাঘাতের জবাব দেবে বলে ফের হুমকি দিয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখায় গত ২৪ ঘণ্টায় গোলাগুলি চালিয়ে নিরপরাধ কাশ্মীরি নাগরিকদের হত্যাও করেছে।

কিন্তু ভারতকে চোখ রাঙালে যে ফলটা ভালো হয় না, অতীতের অনেকবারের সেই শিক্ষা যেন এবারও ভুলে গেল ইসলামাবাদ। অন্তত ৮০ থেকে ৯০ জনের প্রাণহানি হয়েছে ভারতের অভিযানে। নিহতদের মধ্যে কুখ্যাত জঙ্গি জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারের পরিবারের অনেকে রয়েছে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইকের পর ভারতের এই পহলগামের প্রতিশোধ নিয়ে পাকিস্তান শুধু নয় গোটা বিশ্বের ধারণা ছিলই।

সেই খবর শেষপর্যন্ত পাওয়ার পর থেকে যেন টগবগ করে ফুটছে ভারতীয় জাতীয়তাবোধ। দেশের সশস্ত্র বাহিনীর এই সাফল্য নিঃসন্দেহে প্রশ্নাতীত। কিন্তু কয়েকটি আশঙ্কাও উঁকি মারতে শুরু করেছে, যা উপেক্ষা করা যায় না। অপারেশন সিঁদুরের পর কেন্দ্র দাবি করেছে, পাকিস্তানের কোনও সামরিক ঘাঁটিতে হামলা করা হয়নি। তাতে অবশ্য পাক সরকার ও সেনাবাহিনী সুর নরম করছে না। তাদের কথাবার্তায় ফের পাকিস্তানের পালটা হামলার হুমকি শোনা যাচ্ছে।

ফলে ভারত না চাইলেও অপারেশন সিঁদুরের পর যুদ্ধের আশঙ্কা জাঁকিয়ে বসছে। যুদ্ধের আবহের সুযোগে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টা হতে পারে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের কালোবাজারির রাস্তায় হাঁটতে পারে অসাধু ব্যবসায়ীরা। সেদিকে তাই নজর রাখা দরকার কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির। সবথেকে বড় কথা, অপারেশন সিঁদুরের কৃতিত্ব নিয়ে সংকীর্ণ রাজনীতি করা উচিত নয়।

বিরোধী দলগুলির এব্যাপারে যতটা সচেতন থাকা দরকার, তার থেকে অনেক বেশি দায়িত্বশীল হওয়া উচিত শাসক শিবিরের। সেনার উর্দিকে কখনও রাজনৈতিক কূটচালের হাতিয়ার করা উচিত নয়। যদিও সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, এয়ার স্ট্রাইক নিয়ে এখনও কোথায় হামলা, কোনও প্রমাণ আছে কি না ইত্যাদি প্রশ্ন তোলা হয়।

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এসব কথায় সামরিক বাহিনীর কর্মদক্ষতা নিয়ে জনমানসে প্রশ্ন ডেকে আনে। আবার সেনাবাহিনীর কৃতিত্বকে কেউ ভোটে জেতার চাবিকাঠি হিসেবে ব্যবহার করলেও সেটা ঘোর অন্যায়। পহলগাম হামলার পর দেশজুড়ে ধর্মীয় মেরুকরণের অস্ত্রে শান দিয়ে নাগরিকদের একটা বড় অংশকে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। যা অনভিপ্রেত এবং যে রাজনীতির ফল বিষম হতে বাধ্য।

ভারতের গোয়েন্দা ও সশস্ত্র বাহিনীর দক্ষতা সন্দেহাতীত হওয়া সত্ত্বেও দোষীদেরও এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিরাপত্তার গাফিলতি কেন্দ্র মেনে নিয়েছে বটে। তবে সরকারের ভুলভ্রান্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকে। কিন্তু প্রশ্ন তোলার গণতান্ত্রিক অধিকারকে রাষ্ট্র বিরোধিতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা উচিত নয়। আবার পহলগামকে সামনে রেখে হিন্দু-মুসলিমে বিভেদ ঘটিয়ে রাজনীতির রুটি সেঁকাও কাম্য নয়।

ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র নিয়ে কথায় কথায় বিরোধিতা আদতে দেশের সংবিধানকে অমান্য ও অসম্মান করা। অপারেশন সিঁদুর নিয়ে ভারতীয় সেনার কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং বায়ুসেনার উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংয়ের যৌথ সাংবাদিক বৈঠক দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুত্ববাদী চরিত্রকে মজবুত করেছে। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ১৪০ কোটি ভারতবাসীর সবথেকে বড় শক্তি। পড়শি দেশ ফের সেই ঐক্যের প্রত্যাঘাত দেখেছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *