অভিরূপ দাস: তলপেটের জটিলতম, কঠিন অস্ত্রোপচারের সাক্ষী থাকল এসএসকেএম হাসপাতালের স্কুল অফ ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড লিভার ডিজিজ। বিরল অসুখে আক্রান্ত হয়েছিল ১৭ বছরের কিশোরী। চিকিৎসা পরিভাষায় যার নাম সলিড সিউডোপ্যাপিলারি নিউপ্লাজম অফ প্যানক্রিয়াস। জটিল অস্ত্রোপচারে রোগীর প্রাণ বাঁচাল এসএসকেএম।
এস এস কে এম-এর চিকিৎসকদের দাবি, পূর্ব ভারতে প্যানক্রিয়াসের অস্ত্রোপচারের যে সমস্ত মেডিক্যাল রেকর্ড রয়েছে তা ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, এত বড় ‘সিউডোপ্যাপিলারি নিউপ্লাজম অফ প্যানক্রিয়াস’-এর ক্ষেত্রে হুইপল প্রসিডিওর এই প্রথম। ডা. হেমাভ সাহার কথায়, এই হুইপল প্রসিডিওর বা হুইপল সার্জারি তলপেটের সবচেয়ে জটিল অস্ত্রোপচার। বছর সতেরোর কিশোরীর প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের মাথায় জন্ম নিয়েছিল টিউমারটা। সিংহভাগ ক্ষেত্রেই এমন টিউমারের শুরুর দিকে কোনও উপসর্গ থাকে না। বড় হলে পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব দেখা যায়। যেমনটা হয়েছিল রাজশ্রী হালদারের (নাম পরিবর্তিত)। এস এস কে এম হাসপাতাল সূত্রে খবর, ২০২৪ সালে মাধ্যমিক পাস করে ওই কিশোরী। তখন থেকেই শুরু পেট ব্যথা। বমি বমি ভাব। প্রথমদিকে ডাক্তার দেখিয়ে, ট্যাবলেট খেয়ে ঠিক হয়ে যায়। আর কোনও সমস্যা ছিল না। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফের শুরু সমস্যা। ২০২৫-এর শুরুর দিকে আবার প্রবল পেটে ব্যথা। সেসময় আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে ধরা পড়ে পেটের ভিতরে পেল্লায় টিউমার। অস্ত্রোপচার করাব নাকি করাব না? রোগীর পরিবারের দোটানায় গোকুলে বাড়ছিল অসুখ। আচমকাই একদিন ফেটে যায় টিউমারটা।
এস এস কে এম হাসপাতালের সার্জিকাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজির বিভাগীয় প্রধান ডা. সুকান্ত রায়ের শরণাপন্ন হয় রোগীর পরিবার। প্রাথমিক টেস্ট করতে গিয়ে দেখা যায়, চূড়ান্ত অ্যানিমিয়ায় ভুগছে রোগী। টিউমার ফেটে মলদ্বার দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে রক্ত। অবস্থা এতটাই জটিল যে হিমোগ্লোবিন টিমটিম করছিল শরীরে। ৬ ইউনিট রক্ত দেওয়া হয় রোগীকে। চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, অবিলম্বে করতে হবে অস্ত্রোপচার। টানা ৮ ঘন্টার ঝুঁকিপূর্ণ সেই অস্ত্রোপচার টিমে ছিলেন সার্জিকাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজির বিভাগীয় প্রধান ডা. সুকান্ত রায়, ডা. সুজন খামরুই, ডা. হেমাভ সাহা। অ্যানাস্থেশিয়া টিমে অধ্যাপক চিকিৎসক তাপস ঘোষ, ডা. সৈকত ভট্টাচার্য, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট সুদীপ ঘোষ। এই জটিলতম অস্ত্রোপচারের নাম “হুইপল প্রসিডিওর”। যাতে বাদ দিতে হয় কিশোরীর প্যানক্রিয়াসের মাথা, জেজুনাম বাইলডাক্টের অংশ।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ১৮ সেন্টিমিটার লম্বা ১২ সেন্টিমিটার চওড়া ওজনে দুকেজি সেই মাংসপিণ্ড ধরে নিয়েছিল কোলনের অনেকটা। মেডিক্যাল রেকর্ডে প্যানক্রিয়াসের এত বড় টিউমারের রিপোর্ট এই প্রথম। বৃহদন্ত্রের প্রধান অংশ কোলনের কিছুটাও বাদ দিতে হয় অস্ত্রোপচারে। ডা. হেমাভ সাহা জানিয়েছেন টিউমারটায় ক্যানসারের কোষ রয়েছে কি না যাচাই করার জন্য মাংসপিণ্ডটা বায়োপসি করতে দেওয়া হয়েছে। অপেক্ষা করছি তার রিপোর্টের। রোগীর শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল।