অর্ণব আইচ: আনন্দপুরের গেস্ট হাউসে গা ঢাকা দিয়েই ভোল পাল্টে ফেলেছিল তৌসিফ। ভোল পাল্টানোর চেষ্টা করে তৌসিফ রাজার ভাই নিশু খানও। তাই প্রথমে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের আধিকারিকরা আনন্দপুরের গেস্ট হাউসের ঘরে গিয়ে অবাকই হয়ে যান। যে ব্যক্তিটিকে তাঁরা দেখছেন, সে সত্যিই কি তৌসিফ? সাদা গাড়ির সিসিটিভির ফুটেজে ব্যক্তিটির দাড়ি, গোঁফ, লম্বা চুল রয়েছে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কীভাবে তার চুল, গোঁফ দাড়ি উধাও হয়ে যেতে পারে? শেষ পর্যপ্ত তাকে টানা জেরা করে কলকাতা পুলিশ, রাজ্য পুলিশ ও বিহার পুলিশের এসটিএফ আধিকারিকরা নিশ্চিত হন যে, ওই ব্যক্তিই পাটনার পারস হাসপাতালে কুখ্যাত দুষ্কৃতী চন্দন মিশ্রকে খুনের মূল চক্রী তথা শার্প শুটার তৌসিফ রাজা।
গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, একটি সার্ভিস অ্যাপের মাধ্যমে আনন্দপুরের গেস্ট হাউসে নাপিত ডেকে নিয়ে এসেই চুল, দাড়ি, গোঁফ কেটে পেলে ভোল পালটে গা ঢাকা দেয় তৌসিফ। এমনকী, তার ভাই নিশুও ভোল পালটানোর চেষ্টা করে। যদিও তাতে কোনও লাভ হয়নি। এ ছাড়াও নিজেদের গ্রেপ্তারি এড়াতে তাদের সাদা গাড়িটি গেস্ট হাউসের সামনে না রেখে অন্তত ৮০ মিটার দূরে একটি বহুতলের কাছে পার্ক করে রাখে। যদিও শেষ পর্যন্ত ওই গাড়ির সূত্র ধরেই ধরা পড়ে তৌসিফ, নিশু, তাদের সঙ্গী হর্ষ ও ভীম। এদিকে, গোয়েন্দারা তদন্তে জেনেছেন, এর আগে একাধিকবার কলকাতায় এসেছে তৌসিফ ও নিশু। কয়েকদিন করে থেকেছে শহরে। কলকাতায় তাদের বেশ কয়েকজন পরিচিত আছে বলে খবর পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তিলজলা-সহ কয়েকটি জায়গার বাসিন্দা এই পরিচিতদের ব্যাপারে গোয়েন্দারা খোঁজখবর চালাচ্ছেন।
মঙ্গলবার ভবানীভবনে এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার, কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ভি সলোমন নেসাকুমার, আইজি (ট্রাফিক) গৌরব শর্মা জানান, বিহার পুলিশের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর মাইথন, ধুলাগড়, বিদ্যাসাগর সেতুর টোল প্লাজার সিসিটিভির ফুটেজ দেখে সাদা গাড়ির উপর নজর রাখতে শুরু করে রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। নম্বর প্লেটের উপর নজরদারি ক্যামেরায় দেখা যায়, ১৭ জুলাই রাত দশটার পর গাড়িটি বিদ্যাসাগর সেতু পেরিয়ে এজেসি বোস রোড, বাইপাস ধরে ঢুকেছে রাজারহাটের সুখবৃষ্টি আবাসনে। রাত ১১টা ২৪ মিনিট থেকে ১২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত তৌসিফরা গাড়ি নিয়ে আবাসনে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু কারও দেখা না পেয়ে এর পর তারা তাদের বান্ধবীকে রাস্তার এক অপিরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে ফোন করে বিরাটিতে দাঁড়াতে বলে। বিরাটিতে গিয়ে তাদের বান্ধবীকে গাড়িতে তোলে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি নিয়ে ঘুরে শেষে পার্ক সার্কাসের একটি হোটেলে ওঠে। কিন্তু বেগতিক বুঝে বিকেল পর্যন্ত থেকে বান্ধবীর পরিচিত আনন্দপুরের ওই গেস্ট হাউসে যায়।