পুরুলিয়াকে আঁচলে বেঁধে ভেনিসের মঞ্চে পুরস্কারজয়ী অনুপর্ণা, ভাগ্নির সাফল্যে আনন্দাশ্রু ঝরছে মামা-মামির

পুরুলিয়াকে আঁচলে বেঁধে ভেনিসের মঞ্চে পুরস্কারজয়ী অনুপর্ণা, ভাগ্নির সাফল্যে আনন্দাশ্রু ঝরছে মামা-মামির

জ্যোতিষ খবর/ASTRO
Spread the love


সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির মোটা বেতনের কাজ ছেড়ে সিনেমা বানাতে শুরু করেছিলেন মেয়েটি। যে মামার বাড়িতে বেড়ে ওঠা। সেই অজপাড়া গাঁয়ে শুরু করেছিলেন শুটিং। বাবা খানিকটা ব্যাঙ্গাত্মক সুরেই বলেছিলেন, “সত্যজিৎ রায় হতে পারবি? মেয়ের জবাব ছিল- তা হয়তো হতে পারব না। তবে এই সিনেমা বানিয়ে বিদেশ থেকে পুরস্কার নিয়ে আসব।” আর সেটাই করে দেখালেন পুরুলিয়ার খনি অঞ্চল নিতুড়িয়ার সরবড়ির কাছে নারায়ণপুরের ‘প্রাক্তন’ বাসিন্দা মাম্পি। আজ সেই মাম্পি মুম্বইয়ের বাসিন্দা। ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক অনুপর্ণা রায়। সিনেমার প্রতি প্রেম-প্যাশন থাকা ‘সেই মেয়েটি’ শনিবার রাতে ইতালিতে অনুষ্ঠিত ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার অর্জন করলেন। অনুপর্ণা রায়ের এই ভেনিস জয়ে আনন্দের জোয়ার তাঁর মামাবাড়ির গ্রামেও।

তবে এই জায়গায় পৌঁছনোর জন্য কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি মাম্পিকে। নিতুড়িয়ার রানীপুর হাইস্কুলের ছাত্রী মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশন পাননি! তাই বাবা-মা ইংরেজি শিক্ষক মামার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আর তারপরেই যেন একটু একটু করে বদলে যেতে থাকে কিশোরী অনুপর্ণার জীবন। মামা নীলোৎপল সিংহর হাত ধরে ইংরেজি সাহিত্য, ভারতীয় সংস্কৃতি সর্বোপরি জীবনকে অন্যভাবে দেখার ভাবনা যেন গেঁথে যায় তাঁর মনে। তাই গতানুগতিক পথে না হেঁটে দু’ দুটো নামি কর্পোরেট কোম্পানির চাকরি ছেড়ে সিনেমা তৈরির কাজে মন দেন তিনি। এবার ইতালিতে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের শিরোপা পেয়ে সেই বাঙালি মেয়েটিই সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “আমার মামা, মাই ফার্স্ট টিচার।” ভেনিসে ওই ফেস্টিভ্যালের ‘অরিজন্টি’ বিভাগে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের শিরোপা পেয়ে বলে ওঠেন, এটা বাংলার জয়। পুরুলিয়ার জয়।

ভাই-বোনদের সাথে অনুপর্ণা রায়। (ডানদিক থেকে একেবারে পিছনে)

যে মামার বাড়িতে উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ। পুরুলিয়ার সেই অজপাড়া গাঁ পুঞ্চার ন’পাড়াতে ২০২১ সালে তাঁর প্রথম সিনেমার শুটিং শুরু করেন অনুপর্ণা। ন’পাড়ার বিভিন্ন ল্যান্ডস্কেপে শুটিং হওয়ার পর ২০২৩ সালে তাঁর প্রথম ছবি ‘রান টু দ্য রিভার’ রিলিজ হয়। বছর দুয়েক আগে কালীপুজোর সময় শেষবার মামার বাড়িতে পুঞ্চার ন’পাড়ায় অনুপর্ণা আসেন। ভাগ্নির এহেন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত মামা নীলোৎপল সিংহ, মামি তানিয়া মুখোপাধ্যায় সিংহ। পুরুলিয়ার আমডিহার বাসিন্দা তাঁরা। অনুপর্ণার মামা-মামীর কথায়, ” রবিবার সকালে যখন ভাগ্নিকে ফোন করেছিলাম। তখন আমাদের চোখে জল…। আমরা তিনজনই কাঁদছিলাম হোয়াটসঅ্যাপ কলে। ওর সাফল্যকে কীভাবে বর্ণনা করব শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না।” উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর অনুপর্ণা চলে যান কুলটিতে। কারণ তাঁর বাবা-মা কুলটিতে ফ্ল্যাট কেনেন। ফলে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে সেখানেই সপরিবারে থাকতে শুরু করেন। কুলটি গার্লস কলেজে ইংরেজি অনার্সের পর দিল্লিতে চলে যান। সেখানেই জার্নালিজম মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা তাঁর। কিন্তু তাতে মামা-সহ পরিবারের খুব একটা সায় ছিল না! এরপরই একের পর এক চাকরি ছেড়ে সিনেমা বানানো শুরু হয় বঙ্গকন্যার। পরিবারকে পরিষ্কারভাবে তিনি বলে দিয়েছিলেন, সিনেমাই বানাবেন তিনি।

এবার অনুপর্ণা রায়ের দ্বিতীয় সিনেমা ‘সংস অফ ফরগটেন ট্রিজ’ তাঁকে ভেনিসে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার এনে দিল। যে সিনেমার গল্প দুই অসমবয়সি মহিলাকে নিয়ে। তারা দু’জনই পরিযায়ী। একজন যৌনকর্মী ও অভিনেত্রী। আরেকজন কল সেন্টারের কর্মী। মুম্বইয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকার সুবাদে তাদের সমকামী প্রেম। সেই সঙ্গে নানান সামাজিক প্রতিবন্ধকতা। নানা লড়াই। একেবারে উলটো পথে হাঁটা অথচ বাস্তব সেই ছবির পুরস্কারপর্বেও পুরুলিয়াকে তুলে ধরেন। তুলে ধরেন নিজের মাতৃভূমিকে। তাই পুজোর আগে বাংলার শাড়ি গায়ে মঞ্চে ওঠেন অনুপর্ণা। যে শাড়িতে ছিল পুরুলিয়ার জনজাতির সংস্কৃতির দেওয়ালচিত্র। রবিবার রাতে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে ভেনিস থেকে অনুপর্ণা রায় জানালেন, “বিশিষ্ট শিল্পী মুসকান মিত্তাল ওই শাড়ি ডিজাইন করেছিলেন। আমি শুধু বলেছিলাম আন্তর্জাতিক মঞ্চে পুরুলিয়ার সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চাই। বলেছিলাম দেওয়ালচিত্রের কথা।” সোমবারই পরিচালক মুম্বইতে ফিরছেন। তবে বিশ্রাম নেই তাঁর। অক্টোবর মাসে ভেনিসজয়ী এই ছবি যাচ্ছে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটে। সেখান থেকে অবশ্য নিজের জন্মভূমিতে ফিরবেন। ফিরবেন নিতুড়িয়ার বাস্তুভিটেতে। সেই ভিটেবাড়ি অবশ্য আজ মাটি থেকে পাকা হয়েছে। সেই মাতৃভূমিতেই শৈশবকে খুঁজে পেতে চান পরিচালক।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ






Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *