পুরনো ‘মিত্র’ ঘায়েলে গুরু গম্ভীরের ভরসা ‘মন্ত্রশিষ্য’ সূর্য, শিশির সামলাতে ভেজা বলে মহড়া শামিদের

পুরনো ‘মিত্র’ ঘায়েলে গুরু গম্ভীরের ভরসা ‘মন্ত্রশিষ্য’ সূর্য, শিশির সামলাতে ভেজা বলে মহড়া শামিদের

জীবনযাপন/LIFE STYLE
Spread the love


রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: ‘ইটস ফা.. বেল্টার!’ আদব-কায়দাই হোক বা চাল-চলন, সর্বপরিসরে নিউজিল‌্যান্ডের ব্রেন্ডন ম‌্যাকালাম বোধহয় ক্রিকেট পৃথিবীতে এখনও একমেবাদ্বিতীয়ম! ক্রিকেট খেলতেন যখন, জার্সির হাতা গুটিয়ে থাকত ঈষৎ। দাঁতের ফাঁকে চেপে ধরা থাকত এক বেচারা চুইংগাম, অবিরাম নিষ্পেশনে মৃত‌্যুই যার অবধারিত পরিণতি ছিল! ক্রিকেট বিশ্বের ‘বাজ’-কে দেখলে তখন একজনের কথা মনে পড়ত খুব। ভিভ, স‌্যর আইজ‌্যাক ভিভিয়ান রিচার্ডস!

তা, ক্রিকেট ছাড়ার অ‌্যাদ্দিন পরেও ব্রেন্ডন ‘বাজ’ ম‌্যাকালামের পৌরুষে বিন্দুমাত্র টাল ধরল না! তিন দিন হয়ে গেল তিনি পড়ে রয়েছেন কলকাতায়। ইংল‌্যান্ড টিম নিয়ে। সদলবলে। আর এ ক’দিন যাবৎ ইংল‌্যান্ড কোচের আশেপাশে থাকলেন যাঁরা, তাঁদের কথাবার্তা শুনে মনে হল, ইংরেজির ‘এফ’ ওয়ার্ডের উৎপত্তি শত-শত বছর পূর্বে হলেও অধুনা বুৎপত্তি ঘটছে বুঝি ব্রেন্ডনের হাত ধরে! তিনি নাকি যা দেখছেন, যা বলছেন, সব কিছুর সঙ্গে অবলীলায় ‘এফ’ জুড়ে যাচ্ছে! মুখবন্ধে যে লাইনখানা লিখলাম, তা আদতে ম‌্যাকালামের ইডেন পিচ বর্ণনা। কিছুই না, ইংল‌্যান্ড কোচের মনে হয়েছে যে, ইডেন পিচে নাকি ইচ্ছেমতো হাতের সুখ করা যাবে। তাই আনন্দের বশে সামনে একটা ‘এফ’!

তীব্র বাদশাহি মেজাজ জুড়ে নিন এর সঙ্গে। সত‌্যি-মিথ‌্যে জানি না। ইংল‌্যান্ড টিমের সঙ্গে থাকা একজন স্থানীয় বললেন যে, কলকাতায় আসার পর নাকি ‘বাজ’ গোটা পঁচিশ-তিরিশ ‘ই-সিগারেট’ আনিয়েছেন! তাতে সুখটানও চলছে মর্জিমাফিক। টিমকেও তিনি পুরোপুরি ক্রিকেটীয় পরিসরে আবদ্ধ রাখতে চাইছেন না। প্র্যাকটিসের আগে-পরে এদিক-ওদিক তিনি জস বাটলারদের নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন। গতকাল টিম সকালে গিয়েছিল গল্ফ খেলতে। এ দিন গেল শহরের প‌্যাডল (যে খেলা বিশ্বে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে) ক্লাবে। ইডেন কিউরেটর সুজন মুখোপাধ‌্যায় মঙ্গলবার একফাঁকে মুখোমুখি পড়ে গিয়েছিলেন ম‌্যাকালামের। সুজনকে দেখামাত্র ‘বাজ’ তাঁকে পাকড়াও করে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আমি খেলতাম যখন, তুমি সিএবি অফিশিয়াল ছিলে না?’’

দেখলে কে বলবে, সাদা বলের ক্রিকেটে ইংল‌্যান্ড কোচ হিসেবে এটাই ম‌্যাকালামের সর্বপ্রথম ‘অ‌্যাসাইনমেন্ট’? কে বলবে, তিনি এসেছেন সেই সফরে, যাকে কি না বিশ্বের কঠিনতম ধরা হয়। ভারত সফর! যেখানে আগামী কুড়ি দিনে দু’খানা সিরিজ তাঁকে খেলতে হবে। প্রথমে টি-টোয়েন্টি। তার পর ওয়ান ডে।

ক্রিকেট অদৃষ্ট ঘোর নিষ্ঠুর বটে। দেশের মাটিতে যে তুরীয় মনন নিয়ে ঘোরার কথা ছিল গৌতম গম্ভীরের, ভাগ‌্য বদলাবদলি হয়ে তার মালিকানা এখন ম‌্যাকালামের! সেই ম‌্যাকালাম, এককালে গম্ভীরের নেতৃত্বে যিনি কেকেআর জার্সিতে নামতেন। সেই ম‌্যাকালাম, ২০১২ আইপিএল ফাইনালে যাঁকে স্বচ্ছন্দে বাদ দিয়ে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে নেমে পড়েছিলেন গম্ভীর! আর আজ? সাদা বলের ক্রিকেটে ইংল‌্যান্ড এমনিই অমিত শক্তিধর। বাটলার-সল্ট-ব্রুক-লিভিংস্টোন সম্মিলিত বাঘা ব‌্যাটিং। তার উপর ম‌্যাকালাম আবিষ্কৃত ‘বাজবল’ ফর্মুলায় যদি তারা টি-টোয়েন্টিতেও চলতে শুরু করে, গম্ভীরের চাপ বাড়বে ছাড়া কমবে না। অথচ বছরখানেক আগেও ইডেন বড় প্রশান্তির জায়গা ছিল ভারতীয় কোচের কাছে। অধিনায়ক-মেন্টর হিসেবে তিনখানা আইপিএল ট্রফি ছেড়েই দিলাম। শোনা যায়, ইডেনের ‘হোম’ ড্রেসিংরুমের একখানা চেয়ার নাকি বড় প্রিয় গম্ভীরের। বসলে, সেখানেই বসেন। সে চেয়ারে বসে হাইকোর্ট প্রান্ত থেকে সূর্যাস্ত দেখতে তাঁর বড় ভালো লাগে। আজ ইডেনের ‘হোম’ ড্রেসিংরুম গম্ভীরেরই। কিন্তু নিজের প্রিয় চেয়ারে গত তিন দিনে দু’দণ্ড নিশ্চিন্তে তিনি বসতে পারলেন কি?

সন্দেহ আছে। কাঁটা, কাঁটা। সর্বত্র রাশি-রাশি কাঁটা যে!

মুহূর্মুহু যাদের জন্ম হচ্ছে, নিত‌্যনতুন উপদ্রব নিয়ে। অবিকল ‘রক্তবীজে’র মতো। মঙ্গলবার ইডেনে মিডিয়ামহলে ছড়িয়ে পড়ল যে, ভারতীয় সাপোর্ট স্টাফদের মধ‌্যে অতীব প্রিয়পাত্র যিনি, চ‌্যাম্পিয়ন্স ট্রফি না জিতলে সেই অভিষেক নায়ারের নাকি চাকরি যাওয়া পাকা! ইডেনের শিশির আর একটা ঝঞ্ঝাট। গত দু’দিন ধরে প্রবল শিশির পড়েছে। অভূতপূর্ব ভাবে শিশিরের ভয়ে রাতে মাঠ পর্যন্ত ‘কভার’ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হল! ভারতও প্রস্তুতি নিয়ে রাখল। কে বলতে পারে, বুধবার পরে বোলিং করতে হবে না? এ দিন ভারতীয় ট্রেনিংয়ে দেখা গেল, মহম্মদ শামি-হার্দিক পাণ্ডিয়া-অর্শদীপ সিংদের বল ভেজা ঘাসে ঘষে বোলিং করতে। ম‌্যাচে জোফ্রা আর্চারদের শর্ট বোলিং খেলতে যাতে সমস‌্যা না হয়, সে কারণে প্রায় মাঝ পিচে দাঁড়িয়ে তিলক বর্মাদের মুখের কাছে আবার সজোরে বল ছুঁড়তে দেখা গেল টিমের ‘থ্রো ডাউন’ বিশারদ রঘুকে। টিম এমনি ‘সেট’। প্রথম একাদশে খচখচানি শুধু একটা জায়গা নিয়ে। স্পিনার অলরাউন্ডার ওয়াশিংটন সুন্দর? নাকি পেসার অলরাউন্ডার নীতীশ কুমার রেড্ডি? ওহ্, পূর্বে লিখিনি। গম্ভীর এদিন আবার একফাঁকে কালীঘাট মন্দিরেও পুজো দিয়ে এলেন।

আর বর্তমান দমবন্ধ দশা থেকে গুরু গম্ভীরকে সাময়িক ‘মুক্তি’ দিতে পারেন যিনি, তিনিও ম‌্যাকালামের মতোই ‘ডাবল জি’-র পুরনো এক যোদ্ধা। বলা ভালো, মন্ত্রশিষ‌্য। এককালে তিনিও কেকেআরে খেলতেন। চার-চারটে বছর খেলেছেন গম্ভীরের নেতৃত্বে। সহ অধিনায়ক হয়েছিলেন। আর গুরুর সঙ্গে তাঁর রসায়ন আজও এত ভালো যে, অর্ধেক সময় গম্ভীরকে কিছু বলতে হয় না। শিষ‌্য অনায়াসে বুঝে যান! অকপটে তা মিডিয়াকে খোলাখুলি বলেও দেন। দেদার হাসি-ঠাট্টা-মস্করা করেন। শামির সব ঠিক আছে কি না জিজ্ঞাসা করলে সহাস‌্যে উত্তর আসে, ‘‘টিম বাসে করেই তো এল! দেখলাম যে!’’ প্রশ্ন করতে গিয়ে সাংবাদিকের হাত থেকে মাইক পড়ে গেলে ফিক করে হেসে বলেন, ‘‘আরে এত রেগে হাত থেকে মাইক ফেলে দেবেন না প্লিজ!’’

নিঃসন্দেহে আজ থেকে শুরু হতে চলা টি-টোয়েন্টি সিরিজে তিনিই ইংল‌্যান্ডের পয়লা নম্বর ‘মহাশত্রু’। যিনি প্রিয় ইডেন থেকে আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রোডম‌্যাপ সাজাতে চাইছেন।

নাম চাই, নাম? অত‌্যন্ত সহজ। জলবৎ তরলং। সূর্যকুমার যাদব। সংক্ষেপে, ‘স্কাই’। টি-টোয়েন্টির ভারত অধিনায়ক। যাঁর ব‌্যাট চলতে শুরু করলে, ‘স্কাই ইজ দ‌্য লিমিট!’

সম্ভাব্য ভারতীয় টিম: অভিষেক শর্মা, সঞ্জু স্যামসন, সূর্যকুমার যাদব, তিলক বর্মা, হার্দিক পাণ্ডিয়া, রিঙ্কু সিং, অক্ষর প্যাটেল, মহম্মদ শামি, বরুণ চক্রবর্তী, অর্শদীপ সিং, নীতীশ কুমার রেড্ডি/ওয়াশিংটন সুন্দর।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *