সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আলাস্কায় বৈঠকে বসছেন ট্রাম্প এবং পুতিন। যুদ্ধ বন্ধের আশায় বুক বাঁধছে ইউক্রেন। কিন্তু সেটাই কী ‘ব্যবসায়ী’ ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য? প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় কার্যকালে বিশ্ব রাজনীতির প্রতি পদক্ষেপে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক লাভ-ক্ষতির অঙ্কই কষেছেন তিনি। তাঁর সম্প্রতিক সাক্ষাৎকার সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ফক্স নিউজকে তিনি জানিয়েছেন, ভারতের উপর শুল্ক চাপিয়ে তিনি পুতিনকে বৈঠকে বসতে বাধ্য করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতে, ভারতের উপর শুল্ক আরোপের ফলে “রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ হয়েছে।” সেই কারণেই বৈঠকে রাজি হয়েছেন পুতিন। ট্রাম্পের দাবি “সবকিছুর প্রভাব রয়েছে।” চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের উপর আরও বেশি শুল্ক আরোপের নির্দেশ দেন। নয়াদিল্লি রুশ তেল কেনা বন্ধ না করায় বহু পণ্যের উপর শুল্ক ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। আমেরিকার ধারণা, শুল্কের চাপে রাশিয়া নিজের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা হারিয়েছে। ট্রাম্পের বক্তব্যে স্পষ্ট, আপাতত বিশ্বজুড়ে শান্তি বজায় রাখার নামে ব্যবসাই তাঁর মূল লক্ষ্য।
গত কয়েক বছরে চিনের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা বাড়ায় ভারত-মার্কিন সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে। কিন্তু ভারত-রুশ ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব এই সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছে। ভারতের ক্রমবর্ধমান বাজার হাতছাড়া করতে নারাজ ট্রাম্প। এদিকে রাশিয়ার উপস্থিতি ভারতকে বিশ্ব মঞ্চে খোলাখুলি আমেরিকার পক্ষ নেওয়া থেকে বিরত রেখেছে। তাই ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের জেরে একাধিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লেও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য রাশিয়ার অর্থনীতিকে সচল রাখতে সাহায্য করেছে। ট্রাম্পের বক্তব্য ইঙ্গিত, রাশিয়াকে শাস্তি দিতেই ভারতের উপর শুল্কবাণ। ভারতকে চাপ দিয়ে রাশিয়ার গলা টিপে ধরার এই প্রচেষ্টাকে নয়াদিল্লি “অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য” বলে বর্ণনা করেছে। জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে মোদি সরকার।
ট্রাম্পের আমলে মার্কিন বিদেশনীতি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নির্ভর। বৈঠকের আগে ট্রাম্প নিজের কৌশল না জানালেও ‘তাৎক্ষণিক শান্তি’ প্রাধান্য পাবে তা একপ্ররকার নিশ্চিত। নতুন ঠান্ডা যুদ্ধের ‘দাবা খেলা’য়, বোড়ে জেলেনস্কির সঙ্গে দ্বিতীয় বৈঠকের পথ প্রশস্ত হবে কি না জানা যাবে দ্রুত।
শুক্রবার আলাস্কায় পুতিন-ট্রাম্প বৈঠক। গত সপ্তাহে ট্রাম্প, ২০২১ সালের পর প্রথম মার্কিন-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের জন্য রাজি হন। ইউক্রেন আশায় বুক বেঁধে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে থাকলেও কিছুটা চাপে ইউরোপ। ইউরোপের উদ্বেগ, এই বৈঠকে ইউক্রেনের উপর প্রতিকূল চুক্তিতে রাজি হওয়ার চাপ আসতে পারে। সম্প্রতি শুল্ক যুদ্ধে আমেরিকার চাপের কাছে মাথা নুইয়েছে ইইউ। বৈঠকের আগেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে প্রাক্তন ঔপনিবেশিকরা।