অর্ণব আইচ: পুজো মানেই আনন্দ, তাই বলে উচ্ছ্বাস যদি বাঁধন ছাড়া হয়, তাহলেই বিপদ। ঠিক যেমন পুজোর কটা দিন সন্ধ্য়া নামলেই চোখে পড়ে বাইক বাহিনীর ‘তাণ্ডব’। এসব দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন মানুষজন। বাইকের পিছনে বন্ধু কিংবা বান্ধবীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়া। নেই কোনও হেলমেটের বালাই। কেউ আবার নিয়মের তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত গতিতে ছুটিয়ে নিয়ে চলেছেন বাইক। শুধু তাই নয়, নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এক একটি বাইকে বসে তিনজন বা চারজন আরোহীও! একেবারে বেপরোয়া ভাব। আর তার ফলেই উৎসবের মাঝেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে।
যদিও কোনও মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও ঘটনায় বেশ কয়েকজন বাইক এবং স্কুটি চালক আহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পিছনের সিটে বসে থাকা আরোহীও। এই বাইক বাহিনীর তাণ্ডব রুখতে এবার বেশ তৎপর ছিল কলকাতা পুলিশ। একদিকে পুজোর ভিড় সামলানো, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ! এর মধ্যেই বেপরোয়া চালকদের দৌরাত্ম্য রুখতে সজাগ ছিলেন পুলিশ আধিকারিকরা।
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, চতুর্থী থেকে অষ্টমীর মধ্যে শুধু বিনা হেলমেটে বাইক ও স্কুটি চালানোর অভিযোগে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন ৩২৩১ জন। কোনও বাইক বা স্কুটিতে দুজনের বেশি আরোহী থাকলে তা অবশ্যই ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন! কিন্তু পুজোর কয়েকদিন, বিশেষ করে রাতের দিকে এক একটি বাইকে তিন থেকে চারজন পর্যন্ত আরোহীকে দেখা গিয়েছে। ‘ট্রিপল রাইডিং’-এর অভিযোগে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন ১২৪০ জন।
পুজোর দিনগুলিতে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে বাইক চালকদের দাপাদাপি। একেবারে উচ্চগতিতে শহরের রাস্তায় ছুটেছে বাইক। মাত্রাহীন গতিতে, বেপরোয়াভাবে বাইক কিংবা স্কুটি চালানোর অভিযোগে পুলিশের হাতে ৫৬৮ জন ধরা পড়েছেন বলে লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে। এর সঙ্গে মদ্যপান করে বাইক কিংবা গাড়ি চালানোর ঘটনা তো ছিলই। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় পুজোর দিনগুলিতে নাকা চেকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। প্রত্যেকটি গাড়ি চালক এবং বাইক চালককে উপর নজর রাখা হয়।
জানা গিয়েছে, এই কদিনে ৫০৪ জনকে ধরা হয়েছে। প্রত্যেকেই মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে দাবি লালবাজারের। এ ছাড়াও বিভিন্ন ঘটনায় এবং আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগে ৭৪১ জনের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে আইনি ব্যবস্থা। ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে অভব্য আচরণের অভিযোগে কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে ৩৪৮ জন। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন ও অন্যান্য অভিযোগে চতুর্থী থেকে অষ্টমীর মধ্যে ৬২৮৪ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। এদিকে, দশমী থেকেই বিসর্জন শুরু হয়ে গিয়েছে। ঘাট ও প্রত্যেকটি রাস্তায় বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ডিজে-র ‘উপদ্রব’ যাতে না হয়, সেদিকে নজর রাখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।