অর্ণব আইচ: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে ধৃত বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা শনিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে কেঁদে ফেললেও ছেলের প্রতি কঠোর অবস্থানে অনড় তাঁর বাবা বিশ্বনাথ সাহা। এদিন আদালতে নিজের ছেলেকে দেখে আদর করার পর কেঁদে ফেলেন জীবনকৃষ্ণ। ছেলে চোখের জল ফেললেও বিশ্বনাথবাবুর দাবি, বিধায়ক হওয়ার পর বেনামে বিপুল সম্পত্তি করেছে ছেলে। তাই সে জেলেই থাকুক। আবার ইডির কাছে জীবনকৃষ্ণ দাবি করেছেন, বাবা তাঁকে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন বাড়ি তৈরির জন্য। কিন্তু তাঁর বাবা সেকথা অস্বীকার করেছেন। আদালত চত্ত্বরে জীবনকৃষ্ণ বলেন, ‘‘বাবা কেন আমার বিরুদ্ধে বলছেন, জানি না। সেটা বাবার ব্যাপার।’’
জীবনকৃষ্ণের জামিনের আবেদন করেননি তাঁর আইনজীবী। তিনি আদালতে জানান, তিনি ‘থার্ড লাইন’ এজেন্ট হতে পারেন। আসল যাঁরা, তাঁদের কিছু হয়নি। কিছু নাম ছিল প্রথম দিনের রিমান্ডে, যাঁরা জামিন পেয়ে গিয়েছেন। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ডাকলেই জীবনকৃষ্ণ গিয়েছেন। তাঁকে দু’বার ইডি তলব করেছে। ইডির আবেদন, তদন্তে অভিযুক্ত অসহযোগিতা করেছেন। কেস ডায়েরিতে তদন্তের অগ্রগতির উল্লেখ রয়েছে। তাঁর জেল হেফাজতের আবেদন জানায় ইডি। বিচারক কেস ডায়েরি দেখেন। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জীবনকৃষ্ণকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। সেদিন তাঁকে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক।
সিবিআইয়ের হাতে আটক হওয়া জীবনকৃষ্ণর দু’টি ফোন থেকে উদ্ধার হয়েছিল ১০৮টি অডিও ক্লিপ। এতে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে জীবনকৃষ্ণর কথোপকথন রয়েছে। এই অডিও ক্লিপগুলি ইডির বড় অস্ত্র। ইডির দাবি, জীবনকৃষ্ণ সাহা ও তাঁর পরিবারের একাধিক সদস্যর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গত কয়েক বছরে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে। ওই টাকা নিয়োগ দুর্নীতির। জীবনকৃষ্ণ ইডিকে জানিয়েছেন, বাড়ি তৈরির জন্য তিনি ওই টাকা বাবার কাছ থেকে নিয়েছেন। তাঁর বাবার দু’টি রাইস মিল রয়েছে। এ ছাড়াও ব্যবসা রয়েছে। অভিযোগ, এ ছাড়াও জীবনকৃষ্ণ নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল টাকা আলুর বন্ডে লগ্নি করেন। ওই টাকায় আলু কিনে কোল্ড স্টোরেজে রাখেন। পরে তুলে নিয়ে নামে ও বেনামে সম্পত্তি কেনেন।
এদিন জীবনকৃষ্ণ আদালত চত্বরে বলেন, ‘‘আমরা ব্যবসায়ী পরিবারের। আমাদের টার্নওভার দু’কোটি টাকা। আমি প্রথম থেকেই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আমাদের রেশন ডিস্ট্রিবিউটারশিপ, রাইস মিল, কোল্ড স্টোরেজ আছে। আমরা বনেদি পরিবারের। আমার ধারণা ছিল, সিবিআইয়ের পর ইডি আমায় হেফাজতে নেবেই। ষড়যন্ত্র নিয়ে কিছু বলব না। তদন্তে সহযোগিতা করেছি। আমি গ্রামের ছেলে। সকাল সাড়ে সাতটায় হঠাৎ ইডি গেলে কী করব? আমরা পালাব নাকি? আমি বিধায়ক। স্ত্রী অ্যাকাউন্টে যে টাকা রয়েছে, তা সাত বছরের।’’ জীবনকৃষ্ণর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তা নিয়ে তিনি বলেন, এটি পুরনো ও বাজে ভিডিও। যেদিন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়, সেদিন তিনি মোবাইল ছোড়েননি, মোবাইল পড়ে গিয়েছিল বলে দাবি করেন জীবনকৃষ্ণ।