পাহাড়-জঙ্গল-জলাধারের মাঝে রাতের আকাশে হারিয়ে যান, পাড়ি জমান পুরুলিয়ার পারডিতে

পাহাড়-জঙ্গল-জলাধারের মাঝে রাতের আকাশে হারিয়ে যান, পাড়ি জমান পুরুলিয়ার পারডিতে

বৈশিষ্ট্যযুক্ত/FEATURED
Spread the love


সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পাহাড় ঘেরা জলাধার। সেই সঙ্গে চারপাশ জুড়ে ঘন জঙ্গল। জলাধারে নাম না জানা কত পাখি। ছড়িয়ে ছিটিয়ে নানা ঔষধি গাছ। একেবারে যেন ক্যানভাসে আঁকা ছবি। সবটাই সূর্যের আলোয়। দিনের বেলায়। কিন্তু এই প্রকৃতির কোলে কেমন রাতের চেহারাটা? রাতের আকাশটাই বা কেমন? জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার অফবিট ট্যুরিজমে বাঘমুন্ডির মাঠা বনাঞ্চলের পারডিতে শুরু হচ্ছে নাইট স্কাই ওয়াচিং। পুরুলিয়ায় অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমে বেড়াতে আসা পর্যটকদেরকে এই গা ছমছমে জঙ্গলেই টেলিস্কোপে রাতের আকাশ দেখাবে বনদপ্তর।

Purulia

পুলিশ-বনদপ্তরের সমন্বয়ে আগামী শীতের মরশুম থেকেই এই প্রকল্প চালু করছে পুরুলিয়া বনবিভাগ। তার আগে একদা মাও মুলুক, চোখ জুড়িয়ে যাওয়া ল্যান্ডস্কেপকে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে এই ইকো ট্যুরিজমে ৫০ লাখ টাকার প্রকল্প রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে অরণ্য ভবনে। যার প্রাথমিক অনুমোদন মেলার পরেই প্রকল্পের রূপরেখা একেবারেই চূড়ান্ত করে নেওয়া হয়েছে। পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, “আমাদেরকে ইকো ট্যুরিজমের জন্য প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছিল। আমরা বাঘমুন্ডির মাঠা বনাঞ্চলের পারডিকে চিহ্নিত করেছি। এমন ইকো টুরিজমের জন্য আর ভালো জায়গা কি হতে পারে! যেখানে পাহাড়, জলাধার সেই সঙ্গে ঘন জঙ্গল রয়েছে।”

Purulia

তাই অযোধ্যা পাহাড় সাইট সিয়িং-এ এই পারডি একেবারে অফ বিট। মাঠা বনাঞ্চলের আশপাশ দিয়ে একাধিক রাস্তা ভালো থাকলেও একেবারেই জঙ্গলের ভেতরে হওয়ায় সচরাচর পর্যটকরা যেতে চান না। তবে যাঁরা অ্যাডভেঞ্চারে এই জেলায় পা রাখেন তাদের কিন্তু প্রথম পছন্দের তালিকায় এই পারডি লেক। অযোধ্যা পাহাড়ের সাইট সিয়িং -এ এই নামেই পরিচিত।

সময়টা ২০০৯। মাঠা বনাঞ্চলের এই পারডি বিট অফিস ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয় মাওবাদীরা। তারপর থেকে ভগ্নদশা হয়েই পড়ে রয়েছে বনদপ্তরের ওই কার্যালয়। তবে রাজ্যে পালাবদলের পর পুরুলিয়া জেলা পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান। সেই সঙ্গে পুলিশের জনসংযোগ ও সাধারণ প্রশাসনের সামগ্রিক উন্নয়নে এই এলাকার চেহারা বদলেছে। আজ থেকে দেড় দশক আগে রাতের বেলা তো দূর অস্ত। দিনের বেলা পা রাখতেই হাড় হিম হয়ে যেত। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “চোখ জুড়িয়ে যাওয়া এই ল্যান্ডস্কেপকে পর্যটকরা এখন একেবারে ভয় মুক্ত হয়ে উপভোগ করতে পারছেন। তাছাড়া রাতের সৌন্দর্যও চোখে দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটা এই অঞ্চলের ক্ষেত্রে কম বড় কথা নয়।”

তবে ওই বিট কার্যালয় ধ্বংসাবশেষ হয়ে পড়ে থাকলেও এই এলাকায় বেসরকারি বিনিয়োগ পর্যন্ত হয়েছে। তৈরি হয়েছে হোম স্টে। স্থানীয় মানুষজনের আর্থ-সামাজিক বদলের কথা ভেবেই পুরুলিয়া বনবিভাগ এই প্রকল্প হাতে নিয়ে পর্যটন পরিকাঠামো গড়ে তুলছে। কি আছে ওই পর্যটন পরিকাঠামোয়? পুরুলিয়া বনবিভাগ বলছে, তাদের বিট কার্যালয় সেইসঙ্গে মিটিং হল নতুনভাবে নির্মাণ করে বনদপ্তরের ব্যারাক ও শৌচালয় তৈরি হবে। যে ব্যারাক প্রয়োজনে পুলিশও ব্যবহার করতে পারবে। সেই সঙ্গে মাঠার মতই তৈরি হবে ক্যাম্পিং সাইড। অর্থাৎ ছোটখাটো টিলাতে ট্রেকিং, সেই সঙ্গে জঙ্গলের আশেপাশে নেচার ট্রেলও করতে পারবেন পর্যটকরা। তাই ক্যাম্পিং সাইটে অনুমতি নিয়ে ফেলতে পারবেন অস্থায়ী তাঁবু। যা বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে চলবে। আর এই নেচার ট্রেলের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বর্ষার শেষেই সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এসে অনুসন্ধান হবে এই এলাকায় কোন কোন ঔষধি বা আয়ুর্বেদিক গাছ রয়েছে।

Pardi-Lake

পুরুলিয়া বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, যৌথ বন পরিচালন কমিটির মাধ্যম দিয়ে বনদপ্তরের এক্সপার্টদের সহায়তায় ওই রাতের আকাশ দেখানো হবে রাত ৮ থেকে ১০ টা। তবে বন্ধ থাকবে বর্ষায়। এই নাইট স্কাই ওয়াচিং-এ যাবতীয় তথ্য মিলবে পারডি বিট কার্যালয় ছাড়াও মাঠা বনাঞ্চল, পুরুলিয়া বনবিভাগ থেকেও। তবে এই সংক্রান্ত হেল্প ডেস্ক থাকবে মাঠাতেই। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০ জনকেই এই স্কাই ওয়াচিংয়ের অনুমতি দেবে পুরুলিয়া বনবিভাগ। পুরুলিয়া বনবিভাগের এডিএফও সায়নী নন্দী বলেন, ” এই কাজের লক্ষ্যই হল এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করে তোলা। এই পর্যটন পরিকাঠামোর মধ্য দিয়ে হোম স্টে গুলির আয়ও বাড়বে। এমনকি পরোক্ষে কর্মসংস্থান হবে।” এই প্রকল্পের মধ্যেই রয়েছে ওই এলাকার গ্রামীণ জনজীবন অর্থাৎ গরুর গাড়ি, ঢেঁকি-র মতো ব্যবহৃত জিনিস যা হারিয়ে যাচ্ছে। সেই বিষয়গুলিও পর্যটকদের কাছে তুলে ধরবে যৌথ বন পরিচালন কমিটি।

Purulia

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ






Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *