পাপের দায়

পাপের দায়

শিক্ষা
Spread the love


কলেজকে যে মনোজিৎ মিশ্র হারেম বানিয়ে তুলেছিলেন, তা কিন্তু সকলের অজানা ছিল না। মনোজিৎ মানে দক্ষিণ কলকাতায় আইন কলেজে গণধর্ষণে মূল অভিযুক্ত সেই তরুণ। সকলে বলতে কলেজ কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব প্রমুখ। সাহস করে প্রথম বর্ষের ছাত্রীটি থানায় অভিযোগ জানানোয় এখন তৎপর অনেকে। কিন্তু মনোজিতের এই অপরাধ এই প্রথম নয়, একের পর এক অভিযোগ আসছে বন্যার জলের বেগে।

সেইসব অভিযোগ একেকটা শিউড়ে ওঠার মতো হাড়হিম করা কাহিনী যেন। বয়সে ছোট বা বড়, জুনিয়ার কিংবা সিনিয়ার- কলেজের অনেক ছাত্রীই মনোজিতের দুষ্কর্মের শিকার হয়েছেন। অনেক ঘটনা সেই দুর্ভাগা ছাত্রীদের সহপাঠীরা জানেন। মোট ১১টি অভিযোগ থানায় দায়ের হয়েছে মনোজিতের নামে। অভিযোগ করার সাহস পাননি- এমন ছাত্রীর সংখ্যা যে কত, তার হিসেব নেই। অভিযোগ করলে অ্যাসিড ছুড়ে খুন, এমনকি পরিবারকে নিকেশ করার হুমকি জুটেছে।

অন্য ছাত্রীদের সামনে মনোজিৎ অসভ্যতা করলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি এতদিন। মনোজিতের হুমকির ভয় তো ছিলই, তার ওপর সমস্যা ছিল যে, অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়ার সম্ভাবনা কার্যত একেবারেই ছিল না। পুলিশ অভিযোগ নিতে চাইত না। কলেজ কর্তৃপক্ষ উলটে মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিত। তৃণমূল নেতৃত্বের নাগাল পেতেন না ছাত্রীরা। কতটা দাপট ছিল মনোজিতের, তা স্পষ্ট কলেজটির প্রাক্তন অধ্যক্ষ দু’বার বহিষ্কার করলেও ফের তিনি ফিরে আসায়।

এরকম একজন ঘৃণ্য অপরাধে জড়িতকে কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রশ্রয় দিত, তা বোঝা যায় কলেজের পরিচালন সমিতি তাঁকে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করায়। যে পরিচালন সমিতির সভাপতি অতি পরিচিত প্রাক্তন ছাত্র নেতা তথা তৃণমূল বিধায়ক অশোক দেব। অস্থায়ী কর্মী হলেও তাঁর কাছে কলেজের সিসিটিভির নিয়ন্ত্রণ থাকত। মাথায় শাসকদলের হাত ছিল বলেই না এত কর্তৃত্ব করতে পারতেন মনোজিৎ।

কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা এখন বলছেন, মনোজিতের সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য ও প্রমাণ হাতে এসে গিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে অসুবিধা হবে না। প্রশ্ন আসে, গত কয়েক বছর ধরে যখন কসবা থানায় ছাত্রীরা একের পর অভিযোগ করতে গিয়েছেন বা অভিযোগ জানিয়েছেন, তখন পুলিশ নীরব ছিল কী কারণে?

তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মুখে মনোজিৎ সম্পর্কে ‘জানোয়ার’ শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে। সেই জানোয়ারকে গুলি করে মারা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। প্রশ্ন উঠবেই, এই যদি তৃণমূল নেতৃত্বের মনোভাব হয়, তাহলে এতদিন দলের নাম করে এই দুষ্কর্ম ও ঔদ্ধত্য মনোজিৎ চালিয়ে গেলেন কীভাবে? কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসেবে তৃণমূল বিধায়ক অশোক দেব ওই কলেজের প্রাক্তনী ও বর্তমান অস্থায়ী কর্মী মনোজিতের এই পাপের দায় এড়াতে পারেন না।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রতিবাদ করলে কখনও হাথরস, উন্নাও কিংবা ধানতলা-বানতলার উদাহরণ টেনে আনছে তৃণমূল যাতে প্রতিবাদের ধার লঘু হয়ে যায়। এটা ঘটনা যে, বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যে এধরনের ঘটনা কম নেই। যেখানে শাসকের প্রশ্রয় ছিল। আবার বাম আমলেও এরকম ঘটনায় তেমন প্রতিকার হয়নি। কিন্তু এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, তৃণমূলের জমানাতেও এমন দুর্বৃত্তের সংখ্যা অনেক।

শাসকদল হিসেবে তৃণমূল নেতাদের কারও প্রশ্রয় ছিল বলেই মনোজিতের মতো লোকেরা এমন অবাধে এত নিকৃষ্ট অপরাধ দিনের পর দিন করে পার পেয়ে যেতে পারেন। এখন কলকাতার ওই আইন কলেজের ছাত্রীরা বলছেন, মনোজিতের জন্য ওই প্রতিষ্ঠানে কোনও তরুণীই নিরাপদ ছিলেন না। পরিস্থিতি কতটা খারাপ হলে এরকম অভিযোগ উঠতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। এই পাপের দায় তাই অবশ্যই তৃণমূলের।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *