সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘পারমাণবিক কার্যকলাপ কোনওভাবেই বন্ধ করা হবে না’, ইজরায়েলের হামলা, মার্কিন রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্পষ্ট বার্তা ইরানের। শনিবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। এর পরই ইরান প্রেসিডেন্টের এই বার্তায় মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের কালো মেঘ আরও ঘনীভূত হয়ে উঠল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
পরমাণু অস্ত্রের লক্ষ্যে এগিয়ে চলা ইরানকে থামাতে সরাসরি যুদ্ধে নেমেছে ইজরায়েল। অনুমান করা হচ্ছে এই যুদ্ধে ইজরায়েলের সঙ্গ দিতে পারে আমেরিকা। গুঁড়িয়ে দেওয়া হতে পারে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলি। এই ডামাডোলের মাঝেই শনিবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। সূত্রের খবর, সেই ফোনালাপে পেজেশকিয়ানকে ম্যাক্রোঁ জানান, এই যুদ্ধ ও বৃহত্তর বিপদ থেকে বেরিয়ে আসার তা হল পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা বন্ধ করতে হবে। এই প্রেক্ষিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট জানান, ‘শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির লক্ষ্যে কাজ করছে ইরান। বিশ্বকে সেই বিষয়ে আশ্বস্ত করতে আমরা আলোচনা ও সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত। তবে আমরা কোনও অবস্থাতেই আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শূন্যে নামিয়ে আনতে রাজি নই।’
ইরানের এই বক্তব্য এমন সময়ে যখন জেনেভায় ইরানের সঙ্গে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির পরমাণু বৈঠক থেকে কোনও সুরাহা বের হয়নি। তেহরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সমঝোতা নয়, আলোচনায় রাজি তারা। অন্যদিকে ইউরোপ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, পরমাণু অস্ত্র বিসর্জন দিতেই হবে ইরানকে। এই ডামাডোলের মাঝেই শনিবার তেহরানের বিরুদ্ধে আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে ইজরায়েল। তেল আভিভে ইরানের সামরিক ঘাঁটিগুলি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে ইজরায়েলের তরফে। হামলায় তিন সেনা কমান্ডার-সহ মৃত্যু হয়েছে এক পরমাণু বিজ্ঞানীর। হামলা চালানো হয়েছে পরমাণুকেন্দ্রেও।
উল্লেখ্য, পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরানের সঙ্গে ইজরায়েলের দ্বন্দ্ব বহুদিনের। ইরান বরাবর বলে আসছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি ‘শান্তিপূর্ণ’। যদিও আন্তর্জাতিক পরমাণু পর্যবেক্ষণ কমিটির তরফে ইরানের পারমাণবিক কার্যকলাপ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে আগেই। সম্প্রতি বিভিন্ন সূত্রের তরফে দাবি করা হয়, ইরানের হাতে রয়েছে ২৭৫ কেজি ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম। সাধারণভাবে ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম ৪২ কেজি ব্যবহার করে পরমাণু বোমা তৈরি সম্ভব। ফলে দাবি করা হয়, ইরান পৌঁছে গিয়েছে পরমাণু বোমা তৈরির দোরগোড়ায়। ইজরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইরানকে দুই সপ্তাহের সময় নিয়েছে আমেরিকা। কূটনৈতিক পথে সমস্যা সমাধানে ও শান্তি রক্ষায় আগ্রহী আমেরিকা। কিন্তু প্রয়োজন পড়লে বলপ্রয়োগ করতেও তারা দ্বিধা করবে না। এই পরিস্থিতিতে ইরানের প্রেসিডেন্টের এই বার্তা মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতিকে কোন পথে নিয়ে যায় সেটাই এখন দেখার।