ভারত: ৩৫৮ (সুদর্শন ৬১, যশস্বী ৫৮, পন্থ ৫৪, স্টোকস ৫/৭২)
ইংল্যান্ড: ২২৫/২ (ডাকেট ৯৪, ক্রলি ৮৪ )
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঋষভ পন্থ। ভারতের সাড়ে তিনশো প্লাস স্কোরকে যতই ছোট দেখাক দুই ইংরেজ ওপেনারের দাপটে, ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টের প্রথম দিনের নায়ক কিন্তু তিনিই। ভাঙা পায়েও মাঠে নেমে পড়া, যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে ক্রিজ কামড়ে পড়ে থাকা- পন্থ যেন এক রূপকথা লিখে গেলেন। হয়তো ভারত বিপন্মুক্ত নয়। বরং দ্বিতীয় দিনেই সিরিজ খোয়ানোর কালো মেঘ দেখতে পাচ্ছেন শুভমানরা, তবু মানতেই হবে বিরাট-রোহিতদের সাদা পোশাকের ক্রিকেট থেকে সরে যাওয়ার পরেও ভারতীয় ব্যাটিং যে তার বিক্রম পুরোদস্তুর বজায় রাখতে পারছে তার পিছনে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর পন্থের মতো ব্যাটারদের অনমনীয় মনোভাবই। শারীরিক প্রতিকূলতাকে জয় করেও তাঁর ইনিংসটি সত্যিই বাঁধিয়ে রাখার মতো। কিন্তু সেই রূপকথার অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স লিখে ব্রিটিশরাও প্রমাণ করে দিলেন, প্রতিপক্ষকে একচুল জমিও ছাড়তে রাজি নন তাঁরা। হাতে আট উইকেট, মাত্র ১৩৩ রানে পিছিয়ে ইংরেজরা।
অথচ এদিন শুরুতে আশা জাগিয়েছিল ভারত। যদিও শুরুতেই জাদেজা ফিরে গিয়েছিলেন, তবুও মনে হচ্ছিল শার্দূল ও ওয়াশিংটন সুন্দর হয়তো পারবেন। কিন্তু জমে গিয়েও আউট হন শার্দূল (৪১)। তখনই দেখা গেল এক আশ্চর্য দৃশ্য। হিন্দি সিনেমায় যেমন লাস্ট সিনে আহত নায়ক জেগে ওঠেন বধ্যভূমিতে, তেমনই ব্যাট হাতে ক্রিজে এলেন ঋষভ পন্থ। গ্যালারিতে হাততালি। মাঠকে প্রণাম করে বাইশ গজে পন্থ। যদিও খোঁড়ানো দেখে বোঝা যাচ্ছিল ব্যথা আছেই। সব সহ্য করেও ক্রিজে কেবল পড়ে থাকা নয়, রানের গতিও বাড়িয়েছেন পন্থ। ছক্কা হাঁকিয়েছেন আর্চারের বলে। টেস্ট ক্রিকেটে ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছক্কা মারার নজির স্পর্শ করলেন। পরের ওভারেই বিপক্ষ অধিনায়কের বলে বাউন্ডারি মেরে পূরণ করলেন নিজের অর্ধশতরান। কিন্তু এরপরই আউট হয়ে গেলেন তিনি (৫৪)। আগেই সুন্দর (২৭) ফিরে গিয়েছেন। বিনা স্কোরে ফিরে গিয়েছেন কম্বোজও। একা কুম্ভ হয়ে লড়ে গেলেও আর্চারের বলে বোল্ড হতে হল পন্থকে। এইভাবে বেশিক্ষণ টেকা যায় না। কিন্তু পন্থ নিজেকে উজাড় করে দিলেন। দল শেষপর্যন্ত সাড়ে তিনশো পেরিয়েছে তাঁরই সৌজন্যে।
৩৫৮ যে খুব বড় পুঁজি নয়, সেটাই আশঙ্কা করছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা। সেই আশঙ্কাকে দশগুণ বাড়িয়ে দিলেন দুই ইংরেজ ওপেনার। শুরু থেকেই চালাতে লাগলেন তাঁরা। কম্বোজকে আলাদা করে যেন টার্গেট করে নেন ডাকেট। চা বিরতিতে ইংল্যান্ড পৌঁছয় ৭৭ রানে। তখনই বোঝা গিয়েছিল, দ্রুত ওপেনিং জুটি ভাঙতে না পারলে বিপদ আছে। কিন্তু বুঝলে কী হবে, উইকেট হারাতে রাজি ছিলেন না ডাকেট বা ক্রলি কেউই। বুমরাহকে পর্যন্ত অনায়াসে খেলে দিচ্ছিলেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত ১৬৬ রানে ক্রলিকে (৮৪) ফেরালেন। সাধারণত কোনও বড় জুটি ভাঙলে উলটো দিকের ব্যাটসম্যানও দ্রুত ফেরেন। ডাকেট এই পুরনো ক্রিকেট প্রবাদকে সত্যি করে ফিরলেন ৯৪ রান করে। উইকেট নিলেন সেই কম্বোজ, যাঁকে দেখলেই বাড়তি উৎসাহে ব্যাট চালাচ্ছিলেন তিনি। মনে করা হচ্ছিল, আরও দু’টো উইকেট শেষ আধঘণ্টায় ফেলতে পারলে লড়াইয়ে ফিরবে ভারত। কিন্তু পোপ বা রুট, কাউকেই ফেরানো যায়নি। বরং খেলা শেষের আগের বলে বুমরাহকে তাচ্ছিল্যভরে চার মারলেন পোপ। কেন ওয়াশিংটন সুন্দরকে এদিন এক ওভারও বল করানো হল না সেটাও পরিষ্কার নয়। যেভাবে ব্রিটিশরা চাপ বাড়াচ্ছে, তা থেকে বেরতে হলে তৃতীয় দিনের প্রথম ঘণ্টাতেই ম্যাজিক দেখাতে হবে টিম ইন্ডিয়াকে। আপাতত ইংরেজরাই অ্যাডভান্টেজ। তা যতই পন্থ রূপকথা লিখুন না কেন। ব্যক্তিগত ছটায় দলীয় ব্যর্থতা ঢাকা পড়ছে না যে!