সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘ ৭ বছর পর চিন সফরে গিয়ে রবিবার চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি স্পষ্টভাবে সীমান্ত সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমনটাই জানালেন ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিসরি।
তিনি বলেন, “আমি বিস্তারিত বলব না। শুধু এইটুকুই বলব যে, জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সীমান্ত সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। তিনি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে এবং সুনির্দিষ্টভাবে তাঁর উপলব্ধি তুলে ধরেছেন। ভারত এবং চিন উভয় দেশই যে এই ভয়াবহতার শিকার সে কথাও তিনি জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ভারতের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে চিন।” বিশেষজ্ঞদের মতে, মোদি সীমান্ত সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলে আসলে পাকিস্তানকেই নিশানা করেছেন। উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা ও ২৬ জন নিরীহ নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনার পর সীমান্ত সন্ত্রাসের বিষয়টি বারবার উঠে এসেছিল। এরপর অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন চিনা অস্ত্র নিয়ে ভারতে হামলা চালায় পাকিস্তান। তবে বর্তমানে ভারত-চিনের সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক মোদির মুখে সীমান্ত সন্ত্রাস যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাত বছর পর এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে ড্রাগনের দেশে পা রেখেছেন মোদি। জানা গিয়েছে, বৈঠকে সীমান্ত, অর্থনীতি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুই শক্তির মধ্যে। বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলন করেন মোদি। জানান, আলোচনার শেষে দুই পক্ষই তাদের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। অন্যদিকে, জিনপিংয়ের বার্তা, ‘সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিয়ে ভারত ও চিনের বন্ধুত্ব একান্ত জরুরি।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক দাদাগিরির মাঝেই জিনপিংয়ের এই হাতি-ড্রাগনের বন্ধুত্বের বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। মোদি ও শি-এর এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও।
প্রসঙ্গত, মোদি, জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্ভাব্য বৈঠক ঘিরেও চিনের বন্দর শহর তিয়ানজিনে বাড়ছে উত্তেজনা। ট্রাম্পের শুল্ক বোমার মাঝে এই নতুন বন্ধুত্ব স্বাভাবিকভাবেই পারদ চড়াচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলে। উল্লেখ্য, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর শুল্কের অস্ত্র হাতে দাপাদাপি শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রুশ তেলের অজুহাতে ভারতের উপর চেপেছে ৫০ শতাংশ শুল্কের কোপ। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে লাগাতার রাশিয়াকেও শাসানি দেওয়া হচ্ছে। এমনকী একদফা শুল্কযুদ্ধের পর বিরল খনিজ রপ্তানি না করলে চিনের উপরও ২০০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। ইচ্ছেমতো নিষেধাজ্ঞা ও শুল্কের খামখেয়ালিপনায় ট্রাম্পের উপর বিতশ্রদ্ধ এশিয়ার দেশগুলি। বাণিজ্য ক্ষেত্রে আমেরিকার এই আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে গ্লোবাল সাউথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এর মাঝে মোদি ও জিনপিংয়ের এই বন্ধুত্বের বার্তা আমেরিকার কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।