বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ভারতের ভিত্তি কৃষি। গোটা দেশবাসীর মুখে অন্ন জোগান কৃষকরা। এখানকার কৃষিক্ষেত্র স্বাধীন। বাড়তি মুনাফার জন্য সেই স্বাধীনতার সঙ্গে সমঝোতা নয় কোনওভাবেই। তেমনটা হলে নিজেদের জমিতেই ক্রীতদাসে পরিণত হবেন কৃষকরা। সম্প্রতি ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার নিজের ট্রুথ সোশালে তা ঘোষণা করেছেন। এই শুল্ক চাপ থেকে কৃষিক্ষেত্রকে বাদ দেওয়ার জোরাল দাবিতে সরব কৃষক সংগঠন। বামপন্থী সংগঠন সারা ভারত কৃষক সভার তরফে বর্ষীয়ান নেতা হান্নান মোল্লার স্পষ্ট দাবি, কৃষি, দুগ্ধ-সহ খাদ্য উৎপাদন ক্ষেত্র কোনওভাবেই পুঁজিপতিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। এনিয়ে প্রতিবাদ জানাতে আগামী ১৩ আগস্ট মোদি-ট্রাম্পের কুশপুতুল দাহ করার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে কৃষক সভা।
সম্প্রতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি। বুধবার ট্রুথ সোশালে ট্রাম্প জানিয়েছেন, ‘ভারত আমাদের বন্ধু হলেও আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য খুবই কম। তার কারণ ওদের শুল্ক হার খুব বেশি। তাছাড়াও, ওদের যুদ্ধাস্ত্রের অনেকটাই রাশিয়া থেকে কেনা। তাই ভারত এবার ২৫ শতাংশ শুল্ক দেবে। আলাদা করে রাশিয়া থেকে তেল এবং অস্ত্র কেনার শাস্তিও পেতে হবে ভারতকে। ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্কহার কার্যকর হবে।’ এরপরই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে কৃষিক্ষেত্রও এই চুক্তির আওতায় চলে যাবে কি না।
বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে সারা ভারত কৃষক সভার তরফে বর্ষীয়ান নেতা হান্নান মোল্লাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। ট্রাম্পের চাপিয়ে দেওয়া শুল্ক কাঠামো কার্যকর হলে কৃষিক্ষেত্রে কতটা প্রভাব পড়বে? তার জবাবে হান্নান মোল্লা স্পষ্ট করেই বললেন, ”সেটা হলে কৃষকরা নিজের জমিতে ক্রীতদাস হয়ে যাবেন। কৃষিতে কর্পোরেটাইজেশন করাই আসলে মোদির উদ্দেশ্য। উনি তো কৃষকদের শত্রু। যেদিন থেকে ক্ষমতায় এসেছেন, সেদিন থেকেই কৃষিক্ষেত্রকে বিপদে ফেলতে যা খুশি তাই করছেন। পুঁজিপতিদের হাত শক্ত করতে আগে গ্যাট চুক্তি করেছিল। আমরা রুখে দিয়েছি। তারপর তিনটে সর্বনাশা বিল নিয়ে এল। তাও আমরা ঠেকিয়েছি।”
হান্নান মোল্লার আরও বক্তব্য, ”এখন ট্রাম্পের শর্তে চুক্তিতে সই করে ফের চাষিদের জীবনকে বিপন্ন করছেন। এটা কার্যকর হলে কর্পোরেট অধিপতি মানে আদানি, আম্বানিদের ইচ্ছেমতো চাষ করতে হবে। চাষির নিজের ইচ্ছা বলে কিছু থাকবে না। আসলে পশ্চিমের দেশগুলোয় যেভাবে কৃষিক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়া হয়, এখানে তা তো সম্ভব নয়। ওসব দেশের চাষিদের ফসল বিক্রি না হলেও চিন্তা করতে হয় না। এখানে তেমনটা হওয়ার উপায় নেই। তাই আমাদের দাবি, কৃষি, দুগ্ধজাত শিল্প পুঁজিবাদীদের হাতে দেওয়া চলবে না।” ট্রাম্প-মোদির ‘সর্বনাশা’ চুক্তি যাতে কার্যকর না হয় তার জন্য কৃষক সভার তরফে প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ১৩ আগস্ট দেশজুড়ে ট্রাম্প ও মোদির কুশপুতুল পোড়ানোর ডাক দিয়েছেন হান্নান মোল্লারা।