টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: নিজের ঔরসজাত নয় বলে কন্যা সন্তানকে দেখে সন্দেহ হত বাবার। স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্কের জেরে ওই সন্তান জন্ম নিয়েছিল বলে ওই ব্যক্তির মনে সন্দেহ ছিল। তার জেরেই একরত্তি কন্যা সন্তানকে ‘খুন’ করে ঝোপে ফেলে দিয়েছিল বাবা। মৃতদেহ শেয়ালে খেয়ে ফেলে! পড়ে থাকা হাড়গোড় উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাঁকুড়ার সানবাঁধা অঞ্চলের ভূতশহর গ্রামে শিশু নিখোঁজের ঘটনায় নয়া মোড় দেখা গেল। পুলিশের জেরায় খুনের কথা শিকার করেছে গুণধর বাবা। পুলিশ ওই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে।
জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া ২ ব্লকের সানবাঁধা অঞ্চলের ভূতশহর গ্রামের এক শিশুকন্যাকে গত বুধবার সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছিল না। অপহরণের অভিযোগও উঠে আসে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। প্রাথমিকভাবে ওই দম্পতিকে জেরাও করে। গ্রামেরই বিভিন্ন এলাকায় চলে তল্লাশি। একাধিক পুকুর, বিভিন্ন ঝোপঝঙ্গলে তল্লাশি চললেও শিশুটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এই অবস্থায় তদন্তকারীদের ওই দম্পতির আচরণে সন্দেহ হয়।
আজ, শনিবার পুলিশ ওই শিশুর বাবা প্রশান্ত বাউড়িকে জেরা শুরু করে। কিছু সময় জেরার পরেই ভেঙে পড়ে ওই যুবক। পুলিশের জেরায় সে সন্তানকে খুনের কথা স্বীকার করে। স্ত্রীর সামনেই নিজের সন্তানকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করেছিল সে। পরে মৃতদেহ গ্রামেরই অদূরে একটি ঝোপে ফেলে আসা হয়। খুনের ঘটনায় পুলিশ এরপরই ওই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু কেন একরত্তিকে খুন করা হল? পুলিশি জেরায় ওই যুবক জানিয়েছে, তাঁর সন্দেহ স্ত্রী পরকীয়ায় লিপ্ত। সেই পরকীয়া থেকেই ওই সন্তান জন্ম নিয়েছিল। কন্যা নিজের ঔরসজাত বলে সন্দেহ ছিল। এরই মধ্যে শিশুর কিছু শারীরিক পরীক্ষা হয়েছিল। রিপোর্টে জানা যায়, ওই কন্যা সন্তান প্রতিবন্ধী হতে চলেছে। এরপরই একরত্তিকে খুনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জেরায় জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ওই খুন করা হয়। খুনের সময় কন্যার মা-ও উপস্থিত ছিলেন!
রাতেই মৃতদেহ একই ঝোপে ফেলে এসেছিল ওই দম্পতি। পরদিন সকাল থেকে প্রথমে নিখোঁজ ও পরে অপহরণের অভিযোগ করে ওই দম্পতি। জেরায় খুনের কথা জানার পরে পুলিশ ওই ঝোপে তল্লাশি চালায়। সেখানে একাধিক হাড়গোড় পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ওই মৃতদেহ শেয়ালে খেয়ে ফেলেছে! ফরেনসিক টিম ওইসব হাড়গোড় উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে। গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত গ্রামের মানুষজন। ওই দম্পতির কড়া শাস্তির দাবি তুলেছেন তাঁরা। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিদ্ধার্থ দর্জি বলেন, “দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের পরেই আমরা ঘটনাটি জানতে পেরেছি। শিশুর নিখোঁজের খবর পেয়ে আমরা প্রথমে অপহরণের দিকে তদন্ত চালালেও শেষপর্যন্ত এই ভয়ঙ্কর সত্য সামনে এসেছে।”