‘অস্কার জয় লটার জেতার মতো’, সুপারবয়েজ অফ মালেগাঁও’-এর একবছর পূর্তিতে জানালেন পরিচালক রিমা কাগতি আসছে তাঁর ‘দাহাড় টু’। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
‘সুপারবয়েজ অফ মালেগাঁও’ প্রিমিয়ার হয়েছিল। এক বছর হতে চলল। আপনি আপনার পুরনো ছবি ফিরে দেখেন?
… না, আমি দেখি না। পরের কাজের জন্য মুখিয়ে থাকি।
‘সুপারবয়েজ অফ মালেগাঁও’ তো স্পেশাল?
…আমার নিজের সব ছবিই স্পেশাল। যারা লেখে, পরিচালনা করে তাদের কাছে নিজের সব ছবিই পছন্দের। নিজের সন্তানের মধ্যে কে ফেভারিট বেশি এটা বলা যায় না, যদিও তেমন থাকতেও পারে।
একবছর পর, এই ছবি আপনার কাছে কোথায় বিশেষ হয়ে ওঠে? তাছাড়া ফায়জা আহমদ খানের তথ্যচিত্র সত্ত্বেও কেন আবার?
… এই ছবির বিশেষ কী বা কেন স্পেশাল সেটা তো দর্শক বলবে, তোমরা বলবে। আমি কেন ‘সুপারবয়েজ অফ মালেগাঁও’ তৈরি করেছি সেটা বলতে পারি। ওশিয়ান ফিল্মোৎসবে জোয়ার দেখা হয়েছিল নাসিরের সঙ্গে। তারপর ওদের মধ্যে অনেক কথা হয়। এবং তথ্যচিত্রের বাইরেও অনেক গল্প আছে বুঝতে পারি। তাছাড়া ছবিতে অনেক ফিকশনাল এলিমেন্ট আনা যায় আরও ড্রামাটিক। যেমন এই ছবির এন্ডিং ফ্যাকচুয়াল নয়, বাট ইট ওয়াজ নেভার মেন্ট টু বি। অবশ্যই তথ্যচিত্রটা স্বয়ংসম্পূর্ণ তবু নাসিরের জার্নির অন্যান্য দিক তুলে ধরার জন্য ছবিটা করেছি। সিনেমার জন্য প্যাশন এবং বন্ধুত্বের নানা ওঠাপড়া– ‘সুপারবয়েজ’-এ এই দুটো থিম সমান্তরালভাবে চলে। আপনার জীবনেও তাই?
আপনি এবং জোয়ার বন্ধুত্ব এবং একসঙ্গে ছবি বানানো, সেখানেও নিশ্চয়ই নানা মনোমালিন্য আছে?
…না না, আমাদের কাজের জায়গায় বিস্তর মতান্তর, নানা ফল আউট। প্রায় প্রতিদিনই ফল আউট! কিন্তু এই মতান্তর বা ফল আউট কখনওই ব্যক্তিগত স্তরে হয় না। এটা ক্রিয়েটিভ ডিফারেন্স যেখানে আমি বা ও পরস্পরকে একটা আইডিয়া বোঝানোর চেষ্টা করি। আবার একই সঙ্গে পরস্পরের প্রতি সম্মান, ভালোলাগা এবং বিশ্বাস আছে। ছোটবেলায় যখন ঝগড়া করতাম তখন মনে হত এক্ষুনি, আজকেই এটার মীমাংসা করে ফেলতে হবে। অনেক বেশি ঝগড়া হত। এখন আমরা অনেক অভিজ্ঞ, পরিণত। এখন সঙ্গে সঙ্গে মীমাংসা করতে বসি না। কিছুটা সময়ের উপর ছেড়ে দিই।
অলমোস্ট কুড়ি বছর হয়ে গিয়েছে আপনার ইন্ডাস্ট্রিতে…
…যদি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসাবে দেখি, আরও বেশি হবে। পঁচিশ বছরও ক্রস করে যেতে পারে, কে জানে।
ফিল্মমেকার না হলে কী হতেন?
…বলা মুশকিল! আমি যেখানে আছি সেটা নিয়ে বেশ হ্যাপি, এটুকু বলতে পারি। আমি আশাবাদী, এই ছবি মনোনয়ন পাবে। আবার একই সঙ্গে বলব, ফরেন ফিল্ম ক্যাটিগরিতে জায়গা পাওয়া এবং জয় প্রায় লটারি পাওয়ার মতো। আমি এই লটারিটা জিততে চাই।
ভারত থেকে অনুপর্ণা রায় ভেনিসে (অরিজন্তি বিভাগে) সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন এবং একই সঙ্গে প্যালেস্তাইন প্রসঙ্গে একাংশের দ্বারা সমালোচিতও হয়েছেন? কী বলবেন?
…কনগ্র্যাচুলেশন, এটা দারুণ খবর। গত দু-তিন বছরে অনুপর্ণা এবং আরও অন্য মহিলা পরিচালকরা ভারত এবং বিদেশে তাঁদের ভয়েস পৌঁছে দিতে পেরেছেন সফলভাবে। এবং এটা প্রমাণ করে, ভারতীয় মহিলারা পরিচালনা করতে পারেন, গল্প বলতে পারেন যা একটা বিশাল সংখ্যক মানুষের কাছে গৃহীত হচ্ছে। আমার গর্ব বোধ হয়। এবং আগের প্রজন্মের মহিলা পরিচালকদেরও ধন্যবাদ, যাঁরা আমাদের পথ দেখিয়েছেন।
নিজের জন্মস্থান অসম বা শিলং যেখানে আপনি বোর্ডিং স্কুলে পড়েছেন সেখানকার গল্প বলতে ইচ্ছে করে না?
… হ্যাঁ, আমার ইচ্ছে করে। কিছু থিম, আইডিয়া আছে মাথায়, দেখা যাক। আপনার প্রথম ছবি ‘হানিমুন ট্রাভেলস প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং ‘তলাশ’ অনেক বেশি কোয়ার্কি এবং ইমপারফেক্ট ছিল যেটা আসলে ভালোই।
এবং ‘সুপারবয়েজ…’ অনেক বেশি পারফেক্ট এবং বেশি বলিউডি!
…‘সুপারবয়েজ’ যতটা না বলিউডি তার চেয়েও বেশি গ্লোবাল। আর উল্টো মনে হয় আমার। ওই দুটো ছবি অনেক বেশি বলিউডি। হ্যাঁ, কোয়ার্কিনেস ছিল, ইমপারফেকশন ছিল। বলিউডের এ-লিস্টার নায়ককে দিয়ে কেউ এমন ছবি ভাববে না যেখানে ছবির কেন্দ্রে রয়েছে শোক। তবু বলিউডের প্যাটার্নের মধ্যেই ছিল।
‘দাহাড় টু’ আসছে! আজকাল আমরা বেশিরভাগ দর্শকই কপ ড্রামা, ক্রাইম থ্রিলার নিয়ে অ্যাডিক্টেড। এমন সময়ে দাঁড়িয়ে ক্রাইম স্টোরি বলার আগে কী ভাবনা কাজ করে?
…‘দাহাড় সিজন ওয়ান’ তৈরিই হয়েছিল, কারণ আমি ওই দর্শকের একজন। আই অ্যাম অবসেসড। আমি বিঞ্জ ওয়াচ করি। ওটিটি-তে যা আছে সব দেখা শেষ করে ফেলেছি। এখন ইউটিউবে রিয়েল পুলিশ ইন্টারোগেশন ভিডিও দেখছি আর কিছু না পেয়ে। জোয়াও তাই করে। ‘দাহাড় টু’-এর গল্প একদম আলাদা। তবে আমার মতে ‘দাহাড়’ আসলে ক্রাইমকে অন্যভাবে দেখার একটা লেন্স। হ্যাঁ, আমরা সিরিয়াল কিলারের গল্প বলছি যারা আছে বাস্তব জগতে এবং মানুষের কল্পনায়। এবং তাদের গল্প ব্যবহার করে সমাজের গল্প বলার চেষ্টা করছি যেখানে পিতৃতন্ত্র, জাতিবাদ, নারীর প্রতি হিংসাই হল আসল সিরিয়াল কিলারস। ‘দাহাড় টু’-ও সেই আয়নাই দেখাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন